বিশ্বজিৎ হত্যার রায়: চ্যালেঞ্জ এবং এক্সপেকটেশন
কিছুদিন আগে সুপ্রীম কোর্ট একটা যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এতে বর্তমান সরকার কিছুটা ক্ষুব্দ, এবং বিচলিত হয়েছেন বলে খবরে এসেছে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ খুশি হয়েছে এই রায়ে এবং অনেকের মনের কথাই বলা হয়েছে সেই রায়ে। অনেকেই সেই রায়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এই রায় আমাদের কমিউনিটির এক্সপেকটেশন পূরণ করেছে বলে অনেকেই মত দিয়েছেন।
এদিকে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ২১ আসামীর মধ্যে আট জনকে মৃত্যুদন্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। পরে আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট দু’জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন ও ১৫ জনকে যাবজ্জীবন দেন। চারজন খালাস পায়। কিন্তু এই রায়ে মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশের একদম বিপরীত চিত্র দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বজিৎ এর পরিবার সহ অনেকেই সেই রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। সবাই সরকারকে দোষারোপ করছেন এই রায়ের ফলে।
এই যে কিছুদিনের মাঝে দুই দুইটা রায়ে মানুষের ভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ। কেন এমনটা হল? কার দোষ এতে? সব রায়েই কি কমিউনিটি এক্সপেকটেশন মিটবে?
বাংলাদেশের অধিকাংশ আইন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এইসব আইনের আপডেট হয়েছে কি না আমার জানা নাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও যে আইনগুলো হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশ তৈরীর প্রক্রিয়ায় কমিউনিটি কনসালটেশন হয়েছে কি না আমার জানা নাই। কমিউনিটি কনসালটেশন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
বাংলাদেশের প্রশাসনিক, ফৌজদারী এবং দেওয়ানি আইনগুলোর একটা সুদূর প্রসারী প্রভাব রয়েছে সাধারণ জনগণের উপর এবং কমিউনিটির উপর। এই আইনগুলো আমাদের পাবলিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে অনেক প্রভাব ফেলে। এত প্রভাব পরার পরেও পর্যাপ্ত কমিউনিটি কনসালটেশন হয় না। মনে হয় মানুষ সচেতন না এ ব্যাপারে। শুধু চাঞ্চ্যল্যকর কিছু মামলার রায় দিলেই মানুষের আলোচনা শুরু হয় এবং সরকার কিংবা বিচার বিভাগের গোষ্ঠী উদ্ধার করা হয়। আসলে দোষটা কার? সরকারের? বিচার বিভাগের? ফরেনসিক ডাক্তারের? পুলিশের? নাকি সিস্টেমের?
মেলবোর্নে আমার এক ব্যবসায়ী বন্ধু প্রতিটা গ্রীষ্মের সময় খুব ব্যস্ত হয়ে পরে তার কাজ নিয়ে।এই সময় আর সবাই হলিডে মুডে থাকে। ত আমার সেই বন্ধুকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম সে কিভাবে বুঝে যে গ্রীষ্মে তার ব্যবসা অনেক ব্যস্ত থাকবে। উত্তরে বলেছিল ‘অভিজ্ঞতা’ থেকে। এই ‘অভিজ্ঞতা’ থেকেই তার এক্সপেকটেশন তৈরী হয়েছে যে সে গ্রীষ্মকালে অনেক ব্যস্ত থাকবে।
আমাদের অনেকেই জানেন যে এক্সপেকটেশন নার্চাড অন এক্সপেরিয়েন্স। একজন কিভাবে ভবিষ্যতটা দেখবে ও এর চ্যালেঞ্জগুলোকে দেখবে সেটা নির্ভর করে তার নিজের অভিজ্ঞতার উপরে। মানুষের অভিজ্ঞতার মত তার এক্সপেকটেশনগুলোও আসলে ভিন্ন হবে। একজনেরটা আর একজনের সাথে নাও মিলতে পারে। এখন কি এমন হয়ে গেল যে প্রথম রায়টাতে সবাই ধন্যিধন্যি করেছেন আর দ্বিতীয়টাতে সবাই কেমন যেন হতাশা ব্যক্ত করছেন। প্রথম রায়টা মানুষের এক্সপেকটেশন অনুযায়ী হয়েছে কিন্তু দ্বিতীয়টা হয় নি!
আমরা সবাই মিলে কি ভুল জায়গায় সমস্যা খুঁজে চলেছি? আমাদের সমস্যা কি শুধু শিক্ষক, ডাক্তার, পুলিশ আর স্থানীয় কন্ট্রাক্টরদের মাঝেই?
বিভিন্ন দেশের গত ষাট-সত্তর বছরের বিষয়াদি যদি পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে দেখবেন একটা নিরব বিপ্লব ঘটে গিয়েছে দেশগুলোর মাঝে। এই দেশগুলোর নিজ দেশের গুড গভর্নেন্স এবং বিশ্ব সমাজের প্রতি সেন্স অভ অবলিগেশান বেড়েছে। একটা গোপন রেভুলোশন হয়ে গিয়েছে ধরা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে কি এমন হয়ে গেল যে এসব দিন দিন বিরল হয়ে যাচ্ছে? সামাজিক নৈরাজ্য এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কি কোন প্রভাব নাই আমাদের জীবনে। সব দোষ কি পুলিশ, ডাক্তার, শিক্ষক আর কনট্রাকটর দের?
বাংলাদেশে এমন কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি যেখানে আপনি একজন ডাক্তার এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিবেন আর তারা স্বাধীন থেকে অভিযোগ এর বিচার করবে। পুলিশের ক্ষেত্রেও তাই। পুলিশের ইন্টিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এটা ক্ষতিয়ে দেখার কেউ নেই। কোনও সেক্টরেই নেই এসব। আসল কথা হচ্ছে সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দিব কোথা।
জুবায়দুল জেকব
মেলবোর্ন
jubaidul.jekab@gmail.com
Related Articles
ড কামালের মুখ ও মুখোশ!
ফজলুল বারী: বাংলাদেশ তথা ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রথম ছবির নাম ছিল ‘মুখ ও মুখোশ’। কালেক্রমে এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক ব্যবহৃত শব্দ
Experiencing Eid in two different countries – M Murshed Haider Anjohn
Eid-Ul-Fitr is the prime festival celebrated by the Muslims all over the world. It’s amazing that Muslims living in different
Bangladesh Politics: Asif Rules Pakistan. Tareque Rules Bangladesh?
Any one who keeps update about global politics is aware that former Late Pakistani Prime Minister Benazir Bhutto’s husband once