প্রিয় মানুষের শহর – ৭
![প্রিয় মানুষের শহর – ৭](https://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/2017/04/canberra-890x395_c.jpg)
প্রতি ভিজিটে ১০ সেন্ট! যতবার যাবেন – তত বারই ১০ সেন্ট করে চলে যায় ব্যাংক একাউন্টে! বিষয় প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া ওয়েব সাইট। ওই সাইটে যাওয়া যাবে না। ঐ সাইট আমাদের কে ব্যাবহার করে টাকা কামাচ্ছে। পারলে পরিচিতদের নিষেধ করবেন।
এবাবেই কথা ঘুরে বেড়াচ্ছিল চারিদিকে। কয়েকজন, আই টি বিশেষজ্ঞ (!) – আমাকে একে একে বিভিন্ন দাওয়াতে প্রশ্ন করলেন। সত্যিই আমার একাউন্টে টাকা যাচ্ছে কিনা!
যেহেতু সাইটে কোন স্হানীয় এড নাই – সেহেতু কোন আয়ও নাই। গোগল এডে, প্রতি বছর পাই ২০ থেকে ৩০ ডলার। ২০০৪-২০০৫ সাল, তখন আমাদের সাইটের খরচ সব মিলিয়ে প্রায় তিন থেকে চার হাজার। কে শুনে কার কথা!
যে দাওয়াতেই যাই, হয়ত শুনবো – একটু আগে আলাপ হয়েছে, কি ভাবে প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া টাকা কামচ্ছে, নয়ত – কেউ আমাকে প্রশ্ন করবে – প্রতি মাসে আমি কত পাই, কত যায় একাউন্টে।
সুজন নামে একজন তো আমাকে রীতিমত এটাক করলো এক অনুষ্ঠানে। স্বার্থছাড়া কেউ কিছু করে না। আমি কেন নিজের টাকা খরচ করে, ফ্যামিলির সময় ন্ষ্ট করে এই ওয়েব সাইট করছি? নিশ্ছয় আমি লুকাচ্ছি কিছু! সে নাছোড় বান্দা। আজকাল কেউ নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায় না আর! বোঝানোর চেষ্টা করলাম, তাতে আরো নানান ইংগিতে কথা বলতে থাকলো।
মাথায় রক্ত উঠে গেল। ভিতরের ঘুমন্ত অশুভ ব্যক্তি নড়েচড়ে উঠলো। মাথা আর কাজ করছিল না। বললাম বাইরে চলো। শারীরিক কিছু না হলে এর শাস্তি হবে না। বাইরে আসার পর সুজন কেন জানি একটু নরম হলো। বললো, এ সমাজে কিছু করে লাভ নেই। ফ্যামিলি, বউ বাচ্ছার পিছনে সময় দেন, খরচ করেন।
সেই স্কুল জীবন থেকেই ছোট বড় সমাজ সেবা কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। দেশে ও না, বাইরে ও না। মালেসিয়াতেও কম বেশি কাজ করেছি। তথাকথিত শিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত বা অশিক্ষিতদের সাথে। এমন কিছুর মুখামুখি হতে হয়নি। এখানে ৯৫% লোক পেশাদারী কর্মে জড়িত। তারা – নিজের পয়সায় সমাজ সেবা – মিলাতেই পারছেন না।
একটা গ্রুপ সারা শহরে, মিটিং, দাওয়াতে বলে বেড়াচ্ছে এ সব কথা। কেন? এরা কারা?
মনে মনে ভাবলাম, এর মূল উৎস বের করতে হবে। কে, কার নেতৃত্বে এ সব হচ্ছে।
আবার মুন্সী ভাইয়ের দ্বারস্হ হলাম। অনেক কথা হলো। কিছুই বের করতে পারলম না। আলাপ হচ্ছে, শুনছেন, বলছেন কিন্তু উৎস সম্পর্কে ধারনা নেই। হতেই পারে। তিনি আরো বললেন – তিনি ব্যক্তিগত ভাবে টাকা আয়ের ব্যপারটা বিশ্বাস করেন। কারন, বিভিন্ন নিউজে এ সম্পর্কে অনেক রিপোর্ট পড়েছেন। যেমন, হটমেইল, ইয়াহু ইত্যাদি উদাহরন দিলেন। আমি বোঝালাম – যে, আমার সাইটে কারও একাউন্ট নাই, যে এ নিয়ে ব্যবসা করবো। বললেন ই-গ্রুপ? আমি বললাম সেটা তো সবার জন্যেই খোলা। “তা হলে আমি ভুল বুঝেছি” এই বলে আর কথা বাড়ালেন না।
খুজছিলাম কাকে এই উৎস অনুসন্ধানের দ্বায়িত্ব দেয়া যায়। যে কাজটা পারবে, যাকে সন্দেহ করবে না কেউ। হঠাৎ করিম ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। আমাকে বেশ পছন্দ করেন। ওনার সাথে যোগাযোগ করে দেখি – দেখি কি করা যায়। ফোনে কথা হলো। ওনি এরই মধ্যে অনেক কিছুই জানেন। জানতে চাইলাম, কার কাছ থেকে প্রথম শুনেছেন? বললেন একটা দাওয়াতে। কে প্রথম বিষয়টা তুললো? বললেন মনে নেই তবে ঐ দাওয়াতে তিন চার জন খুবই সরব ছিলেন।
করিম ভাইয়ের গ্রহন যোগ্যতা ঐ গ্রুপ ছাড়াও মোটামোটি বাইরে সবার কাছেই আছে। ওনাকে অনুরোধ করলাম – ঐ চার জনকে কৌশনে জেনে নিতে ওনারা প্রথম কার কাছ থেকে শুনেছেন।
দু’তিন মাস পর করিম ভাই তার মূল্যায়ন ও ফলাফল নিয়ে আসলেন। আবুল অথবা আব্দুল হাই, এরা একক ভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে এ বিষয়ের নেতৃত্ব আছেন। কারন হিসাবে যা বললেন – হিংসা ছাড়া অন্য কোন কারন তিনি খুজে পাচ্ছেন না। মূলত দু’এক বছর হলো এসেছি, এরই মাঝে হঠাৎ সবার মাঝে গ্রহন যোগ্যতা, প্রশংসাই দ্বায়ী এর জন্যে।
আরেকটি নতুন তথ্য দিলেন – প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া হলো “ক্যানবেরা’র ফোরাম” এর মত – ক্যানবেরা এসোসিয়সনের বিকল্প। প্রাক্তন ফোরামের লোক জনদের সাথে আমার উঠা বসা। এই সাইট করে আসলে আমি এসোসিয়সন ভেংগে ফেলার চেষ্টা করছি। প্রমান হিসাবে – আমাকে কখনো এসোসিয়সনের কোন কমিটিতে নেয়া সম্ভব হয়নি। আমি বললাম কিন্তু আমিতো প্রতিটি অনুষ্ঠানে কামলা দিচ্ছি (ঐ সময়টাতে)। আমি কি করে বিরোধী পক্ষ হলাম?
আবুল এবং আব্দুল হাই ভাইয়ের সাথে আলাদা করে কথা বললাম। সবাই আমার পক্ষে! মিথ্যা প্রচারনা ঠিক না – ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। সব সময়ই আমার পাশে আছেন। ওনারা জানেন, কতটা আত্মোৎসর্গ করলে এ ধরনের একটি সাইট, সমাজ সেবা করা যায়। যে কোন মুহুর্তে আমাকে সাহায্য করার জন্যে প্রস্তুত। আমি বললাম – যারা বলে তাদের কে কি বলবেন – বিনা খরচে আমি ওনাদেরকে সাইট করে দিব – যদি এটা এতই মানি মেকিং মেশিন হয়। শুধু, আপনারা এ ধরনের আলোচনায় উৎসাহ দিবেন না। কি ভাবে রেডিও ও এসোসিয়সনে জড়িত তাও বিস্তারিত বললাম। জবাবে জানালেন ওনারা সবই জানেন। আমার পাশে আছেন।
দাওয়াত নেয়া, দাওয়াতে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। তারপর ধিরে ধিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়াও কমিয়ে দিলাম। তার পরের চার পাঁছ বছর হাইবারনেশনে চলে গেলাম। সাইট চললো আগের মতই। ভাবলাম প্রিয়অষ্ট্রেলিয়া অন্য কারো হাতে তুলে দেব।
নতুন গাড়ী কিনব, পুরানো টা ছেড়ে দেবো, নিকট বন্ধু বললেন (মজা করে) – সাবধান – প্রিয় অষ্ট্রেলিয়ার আয় থেকে কিনছেন না তো!
[“প্রিয় মানুষের শহর” সব গুলোই কাহিনী। চরিত্রগুলোও কাল্পনিক। সত্য মিথ্যা জানতে চেয়ে বিব্রত করবেন না। গল্প – গল্পই। কারো সাথে মিলে যাবার কোন সম্ভবনা নেই। কাকতালীয় হবার সম্ভবনাও ক্ষীন।]
Related Articles
‘শেখ হাসিনা না থাকলে পদ্মা সেতু হতো না’- ড: আবুল বারকাত
-অজয় কর: ‘শেখ হাসিনা না থাকলে পদ্মা সেতু হতো না’, জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড: আবুল বারকাত। গতকাল ১৮ই
এডওয়ার্ড অশোক অধিকারী’র – চাপাই ভরসা
গামা কাদির: অস্ট্রেলিয়ায় একুশে একাডেমী প্রত্যেক বৎসরের মত এই বছরও ১৯ সে ফ্যাব্রয়ারি এসফিল্ড পার্কে আয়োজন করবে ২১সে বই মেলা
Why the Labor Party lost in the Australian Election?
Australia’s conservative opposition swept to power at an election held on 7th September, ending six years of the Australian Labor
wonderful
মনের কথা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। যাহাদের টাকা উপার্জনই জীবন, তাহাদের মাথার উপর দিয়ে তো যাবেই !