প্রিয় মানুষের শহর – ৬

প্রিয় মানুষের শহর – ৬

[প্রিয় মানুষের শহর]

আবুল কে নিয়ে একটা মহা সমস্যায় পড়েছি। কি করব বুঝতে পারছি না।

মালেসিয়ায় প্রায় ৭ বছর ছিলাম। ভুমিপুত্র মালেদের সাথে মিলা মেশার সুযোগ হয়েছিল। ও খানে চাকুরী, লেখা পড়া (নৈশ শাখায়) করার সুবাদে অনেক ভাল খারাপ দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। দু’একটা ঈদে ওদের গ্রামে গিয়েও ঈদ করার সৌভাগ্য হয়েছিল বন্ধুদের সাথে। ওদের “ঈদ ওপেন হাউস” আমাদের খুব ভাল লেগেছে। ঈদের দিন নির্দিষ্ট একটা সময়ে – সবার জন্যে (মুসলিম/অমুসলিম) দরজা খোলা থাকে। অনেক গুলো বয়ামে সাজানো থাকে শুকনো খাবার। যে কেউ এসে, যার যা ইচ্ছা মত খেয়ে যেতে পারে। বাচ্ছাদের জন্যে দু’টাকার কয়েন বা নোট থাকে। তারা ঐ পয়সার লোভেই দল বেধে নামে – কে কত বেশি বাসায় যেতে পারে। কত বেশি ঈদ মানি সংগ্রহ করতে পারে।

ক্যানবেরা’তে নতুন এসেছি। প্রথম ঈদ। হাতে গোনা চার পাছজন ছাড়া অন্য কেউই বাসায় এলেন না। দাওয়াত দিতে পারিনি বলে। চিনিই না, দাওয়াত দিব কি করে!

কয়েক বছর পর। প্রিয় ক্যানবেরা নতুন এবং বেশ জনপ্রিয় তখন। ভাবছিলাম ক্যানবেরাতে ঈদ ওপেন হাউস চালু করা যায় কিনা। নিকট কয়েজনের সাথে কথা বললাম। উৎসাহ দিলেন। প্রথম বছরেই বেশ জনপ্রিয় হল ব্যাপারটা। দ্বিতীয় বছর, আমরা আরো গোছানো হলাম। সাবার্ব অনুযায়ী লিষ্ট বানালাম – কার বাড়ীতে, কোন দিন, কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত ঈদ ওপেন হাউস। সাথে থাকতো – গোগল ম্যাপের লিংক। সে সময়ের প্রতিটি ঈদই আমার কাটতো -ওয়েব সাইট আপডেটের ব্যাস্ততায় – দাওয়াতের বাইরে, প্রতিটি ক্ষনই কম্পিউটারে। এমন কি ঈদের নামাজের আগে ও পরে এসে, ঈদ ওপেন হাউস আপডেট করতাম।

ক‌্যানবেরাতে নতুন আসা এমন অন্তত ১৫/২০ টা ফ্যামিলীর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে – আমার বাসায় – ওপেন হাউসে। যাঁরা আমার ঈদ ওপেন হাউসে না আসলে, অন্য কোন পথ ছিল না পরিচয় হ্ওয়ার। এর মধ্যে – এখনকার ক্যানবেরার অনেকগুলো জনপ্রিয় নামও আছে । ক‌্যানবেরার এই ঈদ ওপেন হাউজ ছিল – ক্যানবেরার নতুন ফ‌্যামিলীদের সাথে পরিচয় হ্ওয়ার ভাল একটা উপলক্ষ।

প্রতি বছর সারা ক্যানবেরা থেকে ৬০ থেকে ৯০টা ফ্যামিলি ওপেন হাউস করতো। তখন ২৫০ থেকে ৩০০টা ফ্যামিলি ছিল। কয়েক বছর পর, শ্রদ্বেয় এহসান উল্লাহ ভাই সুন্দর একটা ঈদ ওপেন হাউস আমন্ত্রন পত্র লিখে দিলেন:

“Dear friends,

The way Canberrans celebrate Eid is unique. Even our interstate friends have no idea how much we enjoy on the occasion. Some of our relatives who came to visit us from Bangladesh are so excited that they want to come again just to celebrate Eid with us. What makes us different? Well, during Eid celebration – Eid day and the following weekend – everyone visits everyone!! The whole city springs to life. Three hundred or so of us move from suburb to suburb, house to house, often in big groups, ‘kafela’ you may say, exchanging greetings. Our neighbours and friends living in different parts of Canberra replaces our close relatives living in Bangladesh – whom we miss in our celebration. It brings the whole community together, binds us even closer. To our children it is an experience of the life we left behind – to be part of and proud of carrying to our future generations.

People often misunderstand the ‘open house’ announcements that many of us post during Eid celebration. It may reflect an official connotation but the idea behind it is simply to help people not to miss each other. So that people knows who will be available when to better manage the limited time available to visit everyone. Traditionally, people send individual emails announcing date and time they will be available at home to greet others. This is fine, but keeping track of these loose emails and announcements is a bit difficult.

Like every year, this year also PriyoAustralia.com.au is dedicating a free web-space for people to post their Eid ‘open-house’ messages. This is solely to place all ‘open house’ information in one location to help us all to plan our visits.

If you are interested in posting a ‘open house’ message please send email to openhouses@priyoaustralia.com.au with the following information:

1. Your name:
2. Street address:
3. Suburb:
4. Date of open house:
5. Time of open house (from and to):
6. A short message:

Wishing you a very happy Eid.

Regards,

PriyoAustralia.com.au Team

[This above article originally written and contributed by Ehsan Ullah, Canberra, Australia]”

হঠাৎ করে – ওয়েব সাইটে “ঈদ ওপেন হাউসের” সংখ্যা কমতে শুরু করলো। শেষ পর্যন্ত ২০/৩০ জনে এসে ঠেকলো। তখন ক্যানবেরাতে ফ্যামিলি সংখ্যা ৫০০ আসে পাশে। মহা চিন্তার কারন। যত জনের সাথে কথা হয় সবাই ঈদ ওপেন হাউস পছন্দ করেন (বিশেষ করে যাঁরা অনেক দিন থেকে ক্যানবেরাতে আছেন) তবে, নাম পাঠাচ্ছেন না কেন?

যাঁরা সব সময় পাঠাতেন – তাঁদের একজন মুন্সী ভাই, ওনাকে ফোন দিলাম। ভাই এ বছর ঈদ ওপেন হাউস দিলেন না কেন? প্রতি বছরই দিয়ে থাকেন।

প্রথমে বললেন, এ বছর ঠিক ওপেন হাউস দেয়ার মত অবস্হা নাই। ইত্যাদি ইত্যাদি। ওনার কথার ধরন দেখেই কেন যেন তৃপ্ত হতে পারলাম না উত্তরে। কারন – ওনার ঈদ দাওয়াত অলরেডি আমি ইমেইলে পেয়েছি। আমার জানা মতে আরো অনেক কেই দাওয়াত দিয়েছেন। যখন উল্লেখ করলাম। কাউকে না সেয়ার করার সর্ত দিয়ে দিয়ে মুখ খুললেন।

আবুল ভাইদের একটা দাওয়াতী গ্রুপ আছে। মানে এরা সবাই সবাইকে নিয়মিত দাওয়াত দেন। মুন্সী ভাই এই গ্রুপেরই।

আবুল ভাই সবাইকে ফোন করে বলেছেন। এখন থেকে প্রিয় অষ্ট্রেলিয়ায় “ওপেন হাউস” দেয়ার কোন দরকার নাই। সবার নাম, ইমেইল সবার কাছেই আছে। সবাই মিলে একটা ধারাবাহিক দিন ক্ষন বেছে নিলেই হয়। অথবা ওপেন হাউস লিষ্ট যদি দিতেই হয় – এসোসিয়াসনের ই-গ্রুপেই দেয়া উচিৎ। প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া মানে মানিক, এরে হাইলাইট করার কি দরকার। অযথা।

কথা না মেনে চললে দাওয়াত বন্ধ! মুন্সী ভাই বললেন, এই সংঘতি রাখতে – এবার এই গ্রুপের কেউই ঈদ ওপেন হাউস প্রিয় অষ্ট্রেলিয়ায় দিবেন না। আমি যদিও বিশ্বাসে অবিশ্বাসে দোদুল্লমান ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুন্সী ভাইয়ের কথাই ঠিক হলো। বরং গ্রুপের বাইরেও অনেক কে দেখলাম – আবুল ভাইকে ফলো করতে। আবুল ভাইজান – মোটামুটি বিশ্বস্ত সবার সাথেই যোগাযোগ করেছেন।

আবুল ভাই আমার বাসার ঈদ ওপেন হাউসে আসলেন। মহা আনন্দে দল বল নিয়ে। আমার বাসার নানা পদের দেশীয় খাবার ওনি খবই মিস করেন। প্রচুর প্রসংসা করে গেলেন।

আবুল ভাইয়ের ঈদ দাওয়াত অনেক আগেই পেয়েছিলাম। ভাবলাম, আর কোথাও না গেলেও আবুল ভাইয়ের বাসায় যাবো। গেলাম।

প্রচুর লোক। লোক লোকারন্য আবুল ভাইয়ের বাসা। অনেক গল্প, কথা হলো, বাক পটু আবুল ভাইয়ের সাথে। কিছুক্ষন পর – আসল প্রশ্নটা করলেন। এ বছর প্রিয় অষ্ট্রেলিয়ায় “ঈদ ওপেন হাউসের” সংখ্যা এত কম কেন?

আমি বললাম, বড় একটা গ্রুপ ইচ্ছা করে, এবার সংঘবদ্ব ভাবে বয়কট করেছে প্রিয় অষ্ট্রেলিয়ায় “ঈদ ওপেন হাউস”। উনি বললেন তাই নাকি! বলেন কি!! বিস্তারিত জানতে চাইলেন। খুব বেশি বিস্তারিত বলতে পারলাম না।

আবুল ভাই বললেন – আপনার ভাবী অসুস্হ না হলে, এ বছরও প্রিয় অষ্ট্রেলিয়ায় “ঈদ ওপেন হাউস” এ নাম দিতাম। প্রিয় অষ্ট্রেলিয়ার “ঈদ ওপেন হাউস” উদ্যোগটা বেশ ভাল, চালিয়ে যান।

২০০৪ এ শুরু করে, ২০১৫ তে বন্ধ হয়ে গেল ক্যানবেরার অনন্য ঈদ ওপেন হাউস। স্হায়ী ভাবে।

[“প্রিয় মানুষের শহর” সব গুলোই কাহিনী। চরিত্রগুলোও কাল্পনিক। সত্য মিথ্যা জানতে চেয়ে বিব্রত করবেন না। গল্প – গল্পই। কারো সাথে মিলে যাবার কোন সম্ভবনা নেই। কাকতালীয় হবার সম্ভবনাও ক্ষীন।]


Tags assigned to this article:
প্রিয় মানুষের শহর

Place your ads here!

Related Articles

প্রিয় ছাত্রলীগ এবার থামো!

ফজলুল বারী: কয়েকদিন ধরে মনটা বেশ খারাপ। প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কিছু নেতার বক্তৃতা-বিবৃতির ভাষায় বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির বিরোধিতা উধাও!

‘বাদল-দিনে’ – মাথানষ্ট পর্ব ১ – কে তুমি ব্যাকুল করো হায়

আজ এই শ্রাবণ হাওয়ায় – কোন ধরণের সংগীত জ্ঞান ছাড়াই ভারতীয় উপমহাদেশের লাইট ক্লাসিকাল, ক্লাসিকাল গানের ভক্ত আমি। সেই ছোট

Hajj, Umrah and Gomrah

হজ্ব, ওমরাহ এবং গোমরাহ অধ্যাপক নজরুল হাবিবী (লন্ডন থেকে) (এই লেখাটি কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। যদি কারো

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment