প্রিয় মানুষের শহর – ৫

আবুল ভাইয়ের ছেলে, রহিম ভাইয়ের ছেলে, করিম ভাইয়ের মেয়ে ও অনিমে’র মেয়ে – একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। সবাই ক্লাস সেভেন এ – নতুন হাই স্কুলে। সম্পুর্ন নতুন একটা পরিবেশে। তারা প্রায় সবাই বিভিন্ন প্রাইমারী থেকে এসেছে – একই হাই স্কুলে।
আমার অভিজ্ঞতা বাচ্চাদের সব চেয়ে কঠিন সময় পার হয় হাই স্কুলে। বাড়ন্ত বয়স, নতুন পরিবেশে ভাল ভাবে মানিয়ে নেয়া বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ। পরিচিত কমিউনিটির বাচ্চারা একে অন্যকে সংগ দিলে তা অনেক সহজ হয়ে যায়। স্কুলটা আতংক থেকে উপভোগ্য হয়ে উঠে ধীরে ধীরে।
আবুল ভাইয়ের ছেলে বলল “রহিম ভাই, তার ছেলেকে বলেছে – স্কুলে কোন বাঙালিদের সাথে মিশতে না; সাদা’দের সাথে বন্ধুত্ব করতে”। আবুল ভাইয়ের ছেলেকে দেখলেই রহিম ভাইয়ের ছেলেটা “নাক তোলে”। অন্য বন্ধুদের সামনেই বলে “stay-away”, বাবা বলেছে তোমার সাথে কথা না বলার জন্যে।
আমার তো টাসকি খাবার জোগাড়!
এক অনুষ্ঠানে রহিম ভাই এগিয়ে এলেন। সম্ভবত ওনি টের পেয়েছেন – আমরা ব্যাপারটা জানি। কোন ভুমিকা ছাড়াই বললেন “ছেলেকে বলেছি – বাঙালিদের সাথে স্কুলে মেলা মেশা করার দরকার নাই; যে হেতু ওরা বিভিন্ন কমিউনিটি অনুষ্ঠানে একে ওন্নের সাথে মিশে – স্কুলে মিশার দরকার নাই। বাচ্চাদের লোকাল (সাদা) কমিউনিটিতেও নিজেদের উন্মীলিত করা বিষেশ প্রয়োজন।
আমি বললাম তথাস্তু! হা, তা হয়ত ঠিকই বলেছেন।
করিম ভাইয়ের মেয়ে তো বাঙালিদের সাথেই মিশে না এবং সাদা বন্ধুরাও এলিট গোছের। এলিট না হলে ও কারো সাথে মেশে না। অন্যদের না দেখার ভান করে। কিন্তু কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একে অন্যের জন্যে বেশ আন্তরিক দেখায় ওরা। ব্যাপারটা বেশ মজাদার।
অনিমের মেয়েটা আরো এক কাঠি উপরে। বাংলায় কখনো কথা বলে না স্কুলে। এমনকি যদি সবাই বাঙালি থাকে তখনও। কয়েক বছর আগে, পুরো পরিবার পশ্চিমা কোন এক দেশ থেকে এসেছে। ভাল বাংলা জানে। বলে না – কাউকে জানতে দিতে চায় না সে বাঙালি!
গ্রুপ ষ্টাডিতেও একে অন্যকে রাখতো না ইচ্ছা করে। শিক্ষক একই গ্রুপে ফেললেও, পরে ঐ শিক্ষক দিয়ে হলেও পরিবর্তন করিয়ে নেয় জেনেছি।
প্রতিটা বাচ্চার আচরন তাদের নিজেদের নয় বেশির ভাগ। তাদের পারিবারিক মানসিকতার অথবা অনুশাষনের ফলাফল, বহন করছে তারা, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।
[“প্রিয় মানুষের শহর” সব গুলোই কাহিনী। চরিত্রগুলোও কাল্পনিক। সত্য মিথ্যা জানতে চেয়ে বিব্রত করবেন না। গল্প – গল্পই। কারো সাথে মিলে যাবার কোন সম্ভবনা নেই। কাকতালীয় হবার সম্ভবনাও ক্ষীন।]
Related Articles
Pitha, Kabita-bikel and the Dhrupad music of the night
How poetry was inspired and born in a timeless legend: Thousands of years ago in a deep primordial jungle a
“লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার” – একুশের চেতনা’র বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক দর্শন(উপসংহার)
“লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার”– একুশের চেতনা’র বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক দর্শন উপসংহার (বাঙালির করনীয় এবং প্রাপ্তি) –নির্মল পাল ‘লাইব্রেরী’ তথ্য-উপাত্ত তথা তথ্য সম্পর্কিত
সবারই অধিকার রয়েছে কিছু বলার
মেলবোর্নের আবহাওয়াটা কেমন যেন দিন দিন ইয়ো ইয়ো (Yoyo) এর মত হয়ে যাচ্ছে। এক দিনে চার আবহাওয়া দেখা যায় সেটা