প্রিয় মানুষের শহর – ৪

প্রিয় মানুষের শহর – ৪

[প্রিয় মানুষের শহর]

আবুল ভাইদের একটা সবার উপরে আমরা গ্রুপ আছে – এই প্রবাসে। সব অনুষ্ঠান তাঁরা নিজেরা আয়োজন করে। নিজেরাই অতিথী। বাইরের মানে “সবার উপরে আমরা গ্রুপ” এর বাইরের কাউকে ডাকা নিষিদ্ব। স্বাধারনত ডাকেন না। উৎসাহ দেন না।

একবার এই ধরনের এক অনুষ্ঠানে যাবার ভাগ্য হয়েছিল। প্রথম প্রথম নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ন – এলিট এলিট মনে হচ্ছিল। শেষে মন খারাপ হলো – ভাবলাম এ অনুষ্ঠানে এসে আমি নিজেকেই নিজে “হিপোক্রেট” হিসেবে পাকাপোক্ত করলাম। ক্লাস সৃষ্টি, ক্লাসে’র অংশ হয়ে।

তবে নিজেরা গান নাচ করেন না অতটা। ভাবি কেন? আহারে, নিজেরা যদি নাচ গান, খাবার দাবার, নি্ত্ত প্রয়োজনীয় কর্ম গুলো করতে পারত! নিজেরাই নিজেদের ভূখন্ড দাবী করতে পারত। অন্যদের কোন প্রয়োজনই পড়তো না।

আবুল ভাইকে বল্লাম – এটা কি আরো ভালো হত না – যদি আপনাদের গ্রুপ যা কিছু আয়োজন করবে সব অনুষ্ঠানে সবাই আমন্ত্রিত! তা হলে তো – আপনাদের গ্রুপটা সম্পর্কে সবার ধারনা হত।নিদেনপক্ষে সাংস্কৃতীক আয়োজন গুলোও সবাই মিলে উপভোগ করতে পারত। এমনিতেই এই প্রবাসে কোয়ালিটী অনুষ্ঠানের সংখ্যা খুব একটা বেশি না। মজা কিন্তু বাড়বে বই কমবে না। আপনাদের কলেজ ইউনি স্মৃতি – আমরা আম জনতাদেরও জানার সুযোগ হত। জানি, হয়ত আপনাদের অনেক কথা আমাদের বোধগম্য হবে না। মাথার উপর দিয়ে চলে যাবে। তবে, হয়ত আপনাদের এই অনুষ্ঠান গুলিতে আসার সুযোগ করে দিলে – ধীরে ধীরে বোকার হাসি হেসে সামান্য হলেও বুঝতে পারবো। সুযোগ দিয়েই দেখুন না।

একবার আমার বাচ্চারা জানতে চাইলো – আমাদের বাসার পাশেই একটা অনুষ্ঠান হবে – তাদের বন্ধুরা আসবে। আমি কিছু জানি কিনা। বল্লাম জানি – কিন্তু বাবা – আমাদের যাবার সুযোগ নাই – এটা শুধু “তাঁদের”। তাঁরা’ই শুধু যেতে পারবেন। বল্ল – এটা কি কনফিডেনসিয়াল? আমি বল্লাম – কিছুটা। তাঁরা চান না “আমরা” “তাঁহাদের” অনুষ্ঠান উপভোগ করি। আমরা ওখানে যেতে পারবো না! কিছুটা মন খারাপ হলো ওদের। আমারও মন খারাপ হলো “কেন যে সবার উপরে” হলাম না! সুন্দর অনুষ্ঠান টা উপভোগ করতে পারতাম!

এক বার তো, শুনলাম আমার লেখা গান গাওয়া হবে। উৎসাহীত হলাম। বিধি বাম – যাওয়া যাবে না। “সবার উপরে আমরা গ্রুপ” এ আমি নাই। সদস্যদের কঠিন ভাবে বলা আছে – বাইরের (!?) কাউকে আমন্ত্রন জানানো যাবে না। আমার মেয়ে আর আমি মন খারাপ করে – ভাল একটা কাজ করলাম। মোনা গিটারে – আমি আর রওশনে’র জন্যে গাইলো কিছুক্ষন! আমি হেড়ে গলায় চিৎকার দিলাম কিছুক্ষন।

আমাদের বাচ্চাদের আমরা কি শিক্ষা দিচ্ছি? বাবা “ক” দের অনুষ্ঠানে যেতে হলে “ক” হও। আর যদি “খ” দের অনুষ্ঠানে যেতে চাও তবে “খ” তোমাকে হতেই হবে! আর আমি মানিকে’র মত যদি যগা খিচুড়ী হও তবে – কোন কিছুতেই পড়বে না। আহারে শ্রেনী বাদ – এখানে এসেও আমরা “চৌধুরী” “মোঘল” “ঠাকুর” চর্চা করে যাচ্ছি। বাচ্চাদের বলছি “দেখ, কি ভাবে করতে হয়”। আমাদের উদহারন অনুসরন করো!

আমার কথায় কেউ কোন মনে কষ্ট নিবেন না – এমনিতেই আমার বন্ধু সংখ্যা এই প্রবাসে তলানিতে ঠেকেছে। একটু মনের দৃষ্টিতে দেখলে বাধিত হব। এখানে ইনভাইটি অনলি অনুষ্ঠান গুলো’র কথা বলা হয়নি। কারন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওখানে শ্রেনী ভাগ করে দাওয়াত দেয় না। কেউ দাওয়াত দিতে শুনিনি।

এই সভ্য শতাব্দীতে এসেও আমাদের কেন বলতে হবে “আমরা আমরা” এবং “তোমরা তোমরা”? আমাদের আয়োজনে তোমাদের যায়গা নাই, অথবা তোমাদের আয়োজনে আমাদের যায়গা নাই।

আবুল ভাই আপনাদের হাতেই আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম।বুঝতেই পারছেন – এটা নিজস্ব অনুষ্ঠানের বিপক্ষে যাওয়া নয় – শুধ মাত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথাই তুলে ধরেছি।

[“প্রিয় মানুষের শহর” সব গুলোই কাহিনী। চরিত্রগুলোও কাল্পনিক। সত্য মিথ্যা জানতে চেয়ে বিব্রত করবেন না। গল্প – গল্পই। কারো সাথে মিলে যাবার কোন সম্ভবনা নেই। কাকতালীয় হবার সম্ভবনাও ক্ষীন।]

Shahadat Manik

Shahadat Manik

Writer, poet, lyricist and social activist.


Tags assigned to this article:
প্রিয় মানুষের শহর

Place your ads here!

Related Articles

র্দূনীতিবাজদের সঙ্গে সমঝোতা একটি উচ্চতর র্দূনীতি -ফরিদ আহমেদ

সরকার গুণগত পরিবর্তনের আশা করছেন যখন, তখন সবুজ-সাথী বাবা নেই এবং আর কোনদিন ফিরেও আসবে না। তাদের বাবা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের

Sea Boundary between Bangladesh and India: Its Progress at the International Arbitration

Bangladesh is not only a riverine country but also a maritime nation that opens to the south towards the Indian

নববর্ষে প্রবাসে বাঙালির নবজাগরণের উৎসব

বাংলা নববর্ষের আবাহনে মেতে উঠেছেন প্রবাসী বাঙ্গালীরা, উৎসব আয়োজনে মতোয়ারা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। বাঙালির জীবনে এ উৎসব আনন্দ

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment