প্রবাসে বসন্ত!

এখানে বসন্ত শুরু হয় September, October. একটানা কনকনে শীতের হিমেল হাওয়ার পর আকষ্মিক বসন্তের আগমন যেন সবাইকে এক পরম স্বস্তির আশ্বাস দিয়ে মনে করিয়ে দেয় যে আমরা সবাই এতদিন এরই প্রতিক্খাতেই ছিলাম !! চারিদিকে নানান রকম ফুলের সমারোহ,পাতাবিহীন সারি সারি গাছ গাছালিতে নতুন সবুজ পাতার আগমন, বিভিন্ন রকম পাখির কলতান, হাস গুলির শিশু কোলে মুক্ত বিহংগের মত এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করা…এসব কিছুই যেন বসন্তের আগমনের বার্তা বহন করে আর নব আনন্দের ঝুড়ি নিয়ে ঘরে ঘরে তা পৌছে দেয়!
মনে পড়ে যায় বাংলাদেশের কথা…
সেই অনুভূতি, সেই ভাল লাগা, সেই চেনা-পরিচিত সব কিছু, বাসন্তি রং এর শাড়ি পড়ে বধূয়াদের এদিক ওদিক বিচরন, পার্কে বা মাঠে বিশাল আয়োজনের মেলা, গান- নাচ, আরো কত্ত কি! কিন্তু এতসবের পরেও কোথায় যেন এক নাই নাই ভাব আর কিসের যেন অভাব দেখি আমি এখানে ! এমন চমতকার সময় সত্বেও আমি খুব মিস করি বসন্তের কোকিলের সেই কল-কাকলী! প্রবাস জীবনের প্রেক্খাপটে বসন্তের আর একটা পার্থক্য হচ্ছে…এখানে বাতাসের দিক এর যে পরিবর্তন, সেটা দেখা যায় দক্খিনের পরিবর্তে উত্তর দিক থেকে আসতে! এখানে ভোরের ফুরফুরে হাওয়ায়, লেকের পারে অথবা সাগরের ধারে যখন প্রাতভ্রমনে যাই, চারিদিকের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি মনকে পাগল করে দেয়, মন গেয়ে ওঠে “আসে বসন্ত ফুলবনে…” আবার যখন খোলা আকাশের নীচে, বিশাল মাঠে বা পার্কে, সবুজ ঘাসের ওপর বসে লাইন ধরে সাজানো পাইন গাছ গুলিকে দেখি তখন সেই চির পরিচিত গানই আকাশে- বাতাসে সুরে সুরে ভেসে ওঠে আর গুনগুনাতে থাকি…”যখনই বেড়াই আমি পাইন বনে…
or Summer Wine er strawberry cherrys …
প্রকৃতির বিষ্ময়কর এমন সৌন্দর্য্যে অবাক হয়ে শুধু ভাবি কিভাবে এমনটা সম্ভব? সময়ের সাথে সাথে প্রকৃতি কি করে একেকসময় একেক রুপের ডালি নিয়ে পৃথিবীর কোলে আবির্ভূত হয়?
এসময়টা যেন মানুষের আমোদ ফুর্তি করার সময়, সবাই ঘর থেকে বের হয়ে আসে বেড়াবার জন্য, শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সবাইকেই দেখা যায় সাগড় পাড়ে রোদ পোহাতে অথবা পানিতে ঝাপাঝাপি করতে আবার দলবেঁধে পার্ক বা সমুদ্রের পার্শ্বে বার্বিকিও করতে! প্রকৃতির এই অপরিসীম অপরুপ সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করবার জন্য বুঝি শীতকালও তার সময়কালের শেষের দিকে মানুষকে জানানো শুরু করে যে ” আনন্দ উতসব করবার মুহূর্ত এগিয়ে আসছে, তোমরা প্রস্তুত হও” আর সেই আনন্দে প্রকৃতি হয়ে ওঠে আরও বেশী মহিমান্বিত, আনন্দের আতিশয্যে আন্দলিত মনের মানুষেরা একদিকে যেমন শীতের বিদায়ী আয়োজন করে অপরদিকে বসন্তকে বরণ ডালা দিয়ে বরণ করবার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়, অস্থির পাগল মন তখন খুশীর আতিসয্যে গেয়ে ওঠে, রাংগিয়ে দিয়ে যাও যাও যাওগো এবার যাবার আগে….শীতের শেষে গাছের পাতা ঝরে পড়ে বসন্তের শুরুতে যেমন গাছে নতুন পাতা গজায়, সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে তেমনি আমাদের জীবনেরও সব কষ্ট মন মালিন্য মুছে গিয়ে জীবন যেন নতুন সবুজ পাতার মত সতেজ আর সজীব হয়ে আমাদেরকে নব আহ্বানে সাড়া দেয় আর আমরা আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সামনের দিকে, তবেইতো জীবনের সার্থকতা!!

Dr Naila Aziz Meeta
Home town is Bangladesh, live in Australia. Love to write, read, travel, and listening to music.
Related Articles
Bangladesh –Myanmar maritime boundary
Bangladesh and Myanmar are friendly neighbouring countries and the relations between peoples of the two nations exist independently of governments
প্রবাসীর বিজয় উদযাপন
“স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান। স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-“
সাহাদাত মানিকের ‘মানুষের সংলাপ’
আতিকুর রহমান শুভ: আমার পদ্য পছন্দ নয় একেবারেই৷ পদ্যের শব্দের কারুকার্য আমি কম বুঝি৷ গদ্যের সারল্য আমাকে বরাবর টানে৷ তবুও