তারায় খচিত সুর কারিগর

তারায় খচিত সুর কারিগর

দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা খুব গুরুত্বপূর্ন। সংস্কৃতির আগ্রাসন ও অনুকরনের ফলে স্বদেশীয় সংস্কৃতির অবক্ষয় হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের অনেক কিছুই মেলে না। ভারতীয়রা সেদিক থেকে আগিয়ে আছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগ, আকাশসংস্কৃতির ছোয়াঁয় তারা তাদের পরিবর্তন আনছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। মিডিয়া যেহেতু শক্তিশালী প্ল্যাটফরম প্রচন্ড দাপুটে, তাই এক্ষেত্রে প্রভাবটা চোখে পড়ে বেশী।

ভারতীয়দের মাঝে শিক্ষার হারও বেশী। নাগরিক সচেতনা বেশী। তারা যা করে, জেনে বুঝে করে। তাদের যা শোভন আমাদের কাছে তা অশোভন। তারা যাকে আধুনিকতা বলে আমাদের সংস্কৃতিতে তা নগ্নতা। আমরা হৈ চৈ করি বেশী, কাজের মূল্যায়ন কম করি। আমরা নিজেদের দেশপ্রেমিক বলে জাহির করতে গিয়ে দেশদ্রোহী হয়ে উঠি।নিজেদের কল্যান চেয়ে অকল্যাণই ডেকে আনি অধিকাংশ সময়।

গত ছ’মাস বিভিন্ন পত্রপত্রিকার কল্যাণে আমি তাই জেনেছি। সমাজ পরিবর্তনে সিনেমা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মিডিয়ার আশীর্বাদ ‘বর’ হয়ে এলে সোনায় সোহাগা। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে সেটা কখনো কখনো অনুকূলে থাকে না। এ অঙ্গনকে ঘিরে রঙ বেরঙের তর্ক-বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে শিল্পী-কলাকুশলীদের সৃষ্টি। শিল্পীদের ব্যক্তিগত রেষারেষি,নকলবাজি,ফিল্মি পলিটিক্স, অশ্লীলতা,যৌথ বানিজ্যসহ অনেক কিছুই দায়ী এর জন্যে।

অনেকেই বাংলা ছবি, ছবির গানকে বস্তাপচা বলে নাক সিটকান। কেউ কেউ নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। নিভৃত যাপন করছেন। কেউবা জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করেছেন। হাজারো প্রতিকূলতায় গান ও চলচ্চিত্রকে ভালবেসে গানের জগতে যারা এখনো বিচরণ করছেন Imon Shouquat শওকত আলী ইমন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। অনেকের মতে গান ছাড়া বাংলা চলচ্চিত্র অসম্পূর্ণ। চলচ্চিত্রের গানের প্রসঙ্গ আসলে সঙ্গীত পরিচালক শওকত আলী ইমনের নামটিও স্বরন করতে হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অধিকাংশ গানেই যিনি সুর বেঁধেছেন। অসংখ্য চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।সেরা সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অন্যান্য অনেক পুরুষ্কার। কিছুদিন আগে ইউটিউবের কল্যানে জানতে পেরেছি – রেকর্ড গড়েছে ‘বসগিরি’ বাংলা ছায়াছবির ‘দিল দিল দিল’ গানটি। ‘ এ গানটি এরই মধ্যে কোটি দর্শক দেখে ফেলেছেন। মাত্র ৬ মাসেই এক কোটি দর্শকের মন ছুঁয়ে গেছে গানটি। সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকাই ছবির ইতিহাসেও এটি বিরল রেকর্ড! গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান-কনা। এই গানের কথা লিখেছেন স্বনামধন্য গীতিকার কবির বকুল এবং সুর-সঙ্গীতায়োজনে ছিলেন শওকত আলী ছিত।এই গানটি প্রমান করে প্রয়োজনীয় সুযোগ সহযোগিতা পেলে আমাদের শিল্পীরাও কোনভাবেই পিছিয়ে নেই অন্য দেশের তুলনায়।

সব শেষ হয়ে গেল,নষ্টদের দখলে চলে গেল – রব না তুলে, ভালো কাজের প্রশংসা করা উচিত। দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা খুব গুরুত্বপূর্ন।সংস্কৃতির আগ্রাসন ও অনুকরনের ফলে দেশীয় সংস্কৃতির অবক্ষয় হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য।ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পীবৃন্দ।

সিনেমার প্রভাবে কৃষ্টি-সংস্কৃতি,আচার,ঐতিহ্য বা ইতিহাস তুলে ধরা যায় যুগের পর যুগ। সিনেমার কাহিনী দর্শক হৃদয়ে দাগ কাটে সহজেই। এর প্রতিফলন ঘটে বাস্তব জীবনেও।

প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন হোক। একটা ইন্টার্ভিউতে শওকত আলী ইমন বলেছিলেন – ‘ব্যক্তিগত ঝুট-ঝামেলা নিয়ে খুব স্পস্ট ভাষায় ইমন বললেন- ‘সবার জীবনেই ঝুট-ঝামেলা থাকে। এটা জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তবে আমি মনে প্রানে মিউজিশিয়ান। সঙ্গীতই আমার প্রথম ও শেষ বিচরন ক্ষেত্র। সুতরাং, জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনাই সঙ্গীতের ওপর প্রভাব ফেলতে দেইনি। আর যেসব ঘটনার সাথে আমাকে জড়িয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছিল, আদালত সেসব ঘটনায় আমাকে নির্দোষ বলেছেন। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম।’

ষড়যন্ত্রও জীবনের অংশ বলে মানেন ইমন। সুতরাং এসব নিয়েও খুব বিচলিত নন তিনি। এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়ই এক ধরনের অস্থিরতা। চারপাশে ষড়যন্ত্রের ভয়। এ ওর বিরুদ্ধে, ও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এটা যেন আমাদের ভয়ংকর কালচার হয়ে যাচ্ছে! এমন একটা সমাজ ব্যবস্থায় বাস করে আমি নিজেকে কী করে ষড়যন্ত্রের বাইরে রাখবো?’

ষড়যন্ত্র, অস্থিরতা জীবনে থাকবেই। তাতে জীবন থেমে থাকবে না। থাকেও না। সুতরাং ইমনকে কাজ করতেই হবে।‘

শওকত আলী ইমন ১৯৯৬ সালে রুটি ছবির মাধ্যমে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। কলকাতায়ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন, ছবির নাম – অন্যায় অবিচার ও বিচারক। শওকত আলী ইমনের জন্ম বাংলাদেশের ঢাকা জেলায় ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই। তার পৈতৃক নিবাস মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরে। তার মা মুসলিমা বেগম একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। তাঁর দুই বোন আবিদা সুলতানা ও রেবেকা সুলতানাও দেশের নামকরা সঙ্গীতশিল্পী।

আজ এই গুণী শিল্পীর জন্মদিন।
প্রিয় শিল্পী আপনার জন্ম শুভ হোক।
ভক্তদের হৃদয় খচিত তারা আপনি,
বাংলার সঙ্গীতাঙ্গনে জ্বলজ্বল করুন চিরদিন
তারায় খচিত সুরের কারিগর।

শুভ জন্মদিন।

হ্যাপি রহমান
সিডনি- অস্ট্রেলিয়া
১৯.০৭.২০১৭ইং

 


Place your ads here!

Related Articles

Let us usher in New Year 2013 with hope expectation!

In ancient days, there was no New Year. They used to say ‘in the tenth year of the reign of

স্পর্ধা

এই গলিটা পার হলেই নাজ বেকারি। ওখানে একটা বিস্কুট পাওয়া যায়। ভেতরে ক্রিম দেওয়া। বাইরেটা চকলেট। এত মজা! মেহমান আসলেই

My Son isn't Doing Well in School!

Temmy is a 7-year-old boy brought in by his mother to Child Psychiatrist at the school’s recommendation. Temmy’s mother Mrs.

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment