কেউ না বললে – সম্মান করতে শিখুন

কেউ না বললে – সম্মান করতে শিখুন

দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশী সমাজে হিন্দি সিনেমা দেখার জন্য অনেকেই মুখিয়ে থাকে। কবে যে বড় বাজেটের ছবিগুলো মুক্তি পাবে আর দেখবে। সিনেমা হলে যাবে আর চেক ইন দিবে কিংবা শুধু পোষ্ট দিয়ে জানান দিবে যে তারা এটা দেখছে। কেউ কেউ আবার অতি উৎসাহী হয়ে ফেসবুকে শেয়ারও দিয়েছে। মাঝে মাঝে ভাবি এইসব অধিকাংশ নিম্নমানের সিনেমা দেখে মানুষের মনোজগৎ এ কি কি পারসেপশান তৈরী হচ্ছে মহান ভারত এবং তার মানুষজন নিয়ে।

প্রথমেই বলে রাখি অধিকাংশ বলিউডের হিন্দি সিনেমাগুলি আসলে হিন্দিভাষী মানুষের সিনেমা না। কিংবা হিন্দিভাষী মানুষের জীবনকে ধারণ করে না। এইসব অধিকাংশ হিন্দি সিনেমাগুলো এক একটা চকচকে প্যাকেটে মোড়ানো পণ্য। বছরে হাজার খানেক বানাচ্ছে আর আমাদের মত আম জনতা গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে! এর একটা প্রভাব ত রয়েছে সমাজে। একটু ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।

ভাল সিনেমা পেলে অবশ্যই দেখব আমরা। ভাল সিনেমার আসলে কোন দেশ থাকে না। এর ভাষাটা সবাই বুঝতে পারে। সম্প্রতি একটা হিন্দি সিনেমা দেখলাম। নাম ‘পিংক’ ( PINK 2016)। হিন্দি ভাষী মানুষের জীবনকে ধারণ করে এই রকম একটা সিনেমা। অসম্ভব ভাল লেগেছে আমার। দুই লাইনে যদি মূল ভাবটা বলতে বলা হয় তাহলে বলব; যখন একজন নারী না বলে, তখন তার ‘না’ কে সম্মান করতে বাধ্য আমরা। একজন নারীর যৌন স্বাধীনতার কথা মনে করিয়ে এই সিনেমাটা।

ভারত এবং বাংলাদেশে যে পরিমাণ নারী নিগ্রহ এবং ধর্ষণ হচ্ছে সেসবের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের সমাজ যে কতটা মিসজেনিস্টিক ( Misogynistic) সেটা স্মরণ করিয়ে দেয়। পরিচালক এবং তার টিমের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে এই রকম একটা শক্তিশালী, সাহসী হিন্দি মূলধারার সিনেমা উপহার দেয়ার জন্য।

তিনজন তরুণ নারীর প্রতিদিনের বাস্তব জীবনের কিছু বিষয় নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা। শুধু ভারত এবং বাংলাদেশ না সারা বিশ্বের অনেক নারীই এই সিনেমার কাহিনী তে তার নিজের একটা সংযোগ খুঁজে পাবে।

এই সিনেমাটা দেখার পরে প্রতিটা বাবা-মার উচিৎ নিজের ছেলেটাকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া। মেয়েদের সম্মান করতে শেখানো, সমান ভাবতে শেখানো।

মেয়েরা ধূমপান করলে চরিত্র খারাপ হয়ে যায় আর ছেলেদের জন্য শুধু হেল্থ হ্যাজার্ড (Health Hazard)। মেয়েরা মদ্যপান করলে চরিত্র খরাপ হয়ে যায় আর ছেলেদের জন্য শুধু হেল্থ হ্যাজার্ড। মেয়েরা বন্ধুত্বপূর্ণ হলে, হাসিখুশি হলে ছেলেরা ধরে নিবে ভিন্ন ইশারা হিসেবে আর ছেলেদেরগুলো হবে সাধারণ আচরণ। নারীরা জিন্স পড়লে চরিত্র খারাপ আর ছেলেদের জন্য শুধুই আর একটা পোষাক এটা। সময় এসেছে এইসব কালো চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসার। সময় এসেছে আমাদের ছেলেদের সত্যিকারের ছেলে হিসেবে গড়ে তুলার। তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি সঠিক নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার। তাহলেই বোধকরি নারীর মুক্তি মিলবে, শান্তি মিলবে।

আমি এই সিনেমাটাকে ৮.৫/১০ দেব। চমৎকার একটা সিনেমা। আমি নিশ্চিত আপনাকে ভাবাবে এই সিনেমা। আপনার মনো জগৎকে একটা নাড়া দিবে। একদিন চকচকে প্যাকেটে মোড়ানো হিন্দি সিনেমা না দেখে একটা ভাল হিন্দি সিনেমা দেখুন।

আমি Netflix এ দেখেছি।


Place your ads here!

Related Articles

Pitha, Kabita-bikel and the Dhrupad music of the night

How poetry was inspired and born in a timeless legend: Thousands of years ago in a deep primordial jungle a

Synthetic Biology, deep-learning, and a new mind ; Is future inviting us?

Abed Chaudhury: Synthetic biology combines principles of biology and engineering to construct novel biological devices and organisms. Contrary to conventional

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment