নেলসনে নিউজিল্যান্ডকে হারানো যাবে কী

নেলসনে নিউজিল্যান্ডকে হারানো যাবে কী

ফজলুল বারী, নেলসন থেকে: বুধরার নেলসনের আকাশ রোদ ঝলমলে ছিল সারাদিন। বৃহস্পতিবারের ম্যাচকে সামনে রেখে এখানকার সেক্সটন ওভালের মাঠে এর রোদেলা দুপুরেই অনুশীলন করেছে টিম বাংলাদেশ। মাঠটি তাদের প্রায় সবার চেনা। সে কারনে খেলোয়াড়দের অনেকের ভাবখানা যেন ছিল অনুশীলন হচ্ছে মিরপুর স্টেডিয়ামের মাঠে। এমন এক চনমনে মেজাজে আছেন বাংলাদেশের বেশিরভাগ খেলোয়াড়। ২০১৫’র বিশ্বকাপে এই মাঠেই তারা বড় রান তাড়া করে স্কটল্যান্ড হারিয়েছেন। এবারে তাদের সামনে শক্তিশালী নিউজিল্যান্ড। এবারে প্রথম দেখায় তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৩৪১ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েছিল ক্রাইস্টচার্চে। সে ম্যাচে ৭৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এরপরও বৃহস্পতিবারের ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে কুচ পরোয়া নেই ভাব যেন! নিউজিল্যান্ডকেও তারা হারাবেনই। বড় কঠিন এক পরীক্ষা। কারন দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মুশফিক নেই। ক্রাইস্টচার্চের ম্যাচের সময় হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির শিকার হয়ে ওয়ানডে সিরিজ থেকে মোটামুটি ছিটকে পড়েছেন। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তার ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত না। টেস্টে যদি টেস্ট অধিনায়ক ফিরতে পারেন, সেটি হবে দলের ভাগ্য।

মুশফিক না থাকলেও নেলসনে নিউজিল্যান্ডকে হারানো যাবে এমন আস্থার কারন কী টিম বাংলাদেশের। মাশরাফি-তামিম দু’জনেই যা বলেছেন এর কারন টিমের বর্তমান সামর্থ্য তারা জানেন। তাই নিউজিল্যান্ডকেও হারানো অসম্ভব কিছু নয়। একটু যোগ করলে মাশরাফি। নেলসন আসার পথে বিমান বন্দরে তার কিউইদলের গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্যের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ম্যাশকে তিনি বলেছেন তোমাদের ঝটপট তিন উইকেট পড়ে যাবার পরও তোমরা এতোদূর চলে যাবে তা আমরা ভাবিনি। তার কথা উল্লেখ করে মাশরাফি বলেন তারাই আমাদের সামর্থ্য নিয়ে কথা বলছে। ক্রাইস্টচার্চে মুশফিক যদি ওই অবস্থায় ইনজুরিতে না পড়তো, সাকিব যদি ওই অবস্থায় আউট না হতো, আমাদেরও জেতার সম্ভাবনা ছিল।

বৃহস্পতিবার নেলসনের আকাশ থাকবে মেঘলা। তবে এখনও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। এখানে ওভালে দাঁড়িয়ে দেখা যায় দু’দিকে সবুজ গালিচায় মোড়ানো পাহাড়। মনোহরিনী তাসমান বে’ও দেখা যায় ওভালটায় দাঁড়িয়ে। তাই পাহাড়ে মেঘ আছড়ে পরে বৃষ্টি ঝরাতে কতক্ষন। তবে এখন পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলে বাতাস বইবে বলা হয়েছে। এই বাতাসটাও অনেক কিছু ওলটপালট করে ক্রিকেটে। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবছেনা বাংলাদেশ। মাশরাফি হাঁটতে হাঁটতে মজা করে বলেন একটু আধটু বৃষ্টি দিতে না কইয়েন ভাই। বৃষ্টি দিলে পুরাটা দিক। কার্টেল ওভারের খেলা আমাদের ভালো লাগেনা। মাশরাফির স্বস্তি হচ্ছে এখন পর্যন্ত বৃষ্টির কথা বলেনি এখানকার আবহাওয়া দপ্তর। তাই খেলা পুরো ১০০ ওভারই হবে।

বৃহস্পতিবারের ম্যাচকে সামনে রেখে নেলসন ওভালে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা ওড়ানো হয়েছে। এর আগে এ মাঠে বাংলাদেশের পতাকা উড়েছে ২০১৫’র বিশ্বকাপের সময়। আবার উড়ল বুধবার। ক্রিকেট এমনই বিদেশের মাটিতে বারবার ওড়াচ্ছে লাল সবুজ পতাকা। তাসমান সাগরের বে’র পাশে দাঁড়ানো ছোট শহর নেলসনের মানুষও তাই এখন বাংলাদেশের নাম জানে। কেউ কেউ হয়তো জানে আরও অনেক তথ্যও। দলের খেলোয়াড়দের মতো বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনেকেও নেলসনের অনেক কিছু এখন জানেন ভালো। বিশেষ করে সেক্সটন ওভালের নানা তথ্য। ছোটখাটো একটি মাঠ। মাঠের একপাশে শুধু দর্শকদের বসার গ্যালারি আছে। খেলা উপলক্ষে বসানো হয়েছে আরেকটি অস্থায়ী গ্যালারি। এ মাঠে সাংবাদিকদের বসার কোন প্রেসবক্স নেই। গত বিশ্বকাপের সময় তাবুর মধ্যে প্রেসবক্সের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সে ব্যবস্থাটি করা হয়েছে এবারও। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত প্রেসবক্স স্থাপন সহ ওভালের আরও অনেক কাজ শেষ হয়নি। তবে এসব কাজের বহর গত বিশ্বকাপের চেয়ে বেশি মনে হয়েছে। বিশ্বকাপে এখানে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে খেলা ছিল। এবার খেলা আয়োজক দেশ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। তাই এ খেলাটি নিয়ে স্থানীয়দের আগ্রহ বেশি। সে কারনে ধারনা করা হচ্ছে মাঠ উপচে পড়বে দর্শকে।
নেলসনে আমরা এখনও কোন বাংলাদেশি বাসিন্দার দেখা পাইনি। গত বিশ্বকাপের সময়ও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। খেলা দেখতে ক্রাইস্টচার্চ সহ আশেপাশের শহরগুলো থেকে কিছু বাংলাদেশি এসে পৌঁছেছেন নেলসনে। স্থানীয় ওয়াইমেয়া রোডের যে হোটেলে আমরা হোটেলে উঠেছি বুধবার হোটেলটায় এসে উঠেছেন সিডনিবাসী কয়েকটি প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবার। এরা ক্রাইস্টচার্চের মাঠেও ছিলেন। একটি বড় গাড়ি ভাড়া নিয়ে চালিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছেন নেলসনে। এখান থেকে চলে যাবেন নেপিয়ারের ম্যাচ দেখতে! ক্রিকেট এমন দেশবিদেশে বিস্তর মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করেছে দেশপ্রেমে। এমন দেশপ্রমিকদের ওভাল জুড়ে উচ্ছাসের মতো বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচ খেলবে নেলসনে। দলের সামর্থ্য আর দেশপ্রেমিক দর্শকদের ভালোবাসায় বাংলাদেশ দল জিতবে এমন প্রত্যাশা নিয়েই বৃহস্পতিবার সবাই মাঠে যাবেন। গুডলাক বাংলাদেশ দল টিম টাইগার্স। তোমাদের খুব ভালোবাসি আমরা। খু-উ-ব।


Place your ads here!

Related Articles

দ্বি-খন্ডিত জাতীয়তা: কিভাবে উন্নয়ন সম্ভব?

বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে সম্প্রতিকালে কিছু লেখা ছেপেছে বাংলাদেশের পত্রিকা। সেসব লেখা প্রমাণ করে নেতৃত্বের সংকট উন্নয়নের মূল প্রতিবন্ধকতা। ১/১১ পর

Bangla Article on Higher Education in Bangladesh

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে কিছু চিন্তাভাবনা অধ্যাপক বিজন বিহারী শর্মা ভুমিকাঃ কিছুদিন আগে আমি আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন শিক্ষকের কাছ

Few ways to reduce private car in Dhaka city

ঢাকা শহরে প্রাইভেট গাড়ী কমানোর কয়েকটি পন্থা সূচনাঃ ঢাকা শহরের যানজট সমস্যা সমাধানের একটি অত্যন্ত সহজ এবং কার্য্যকরী উপায় হচ্ছে

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment