সাঈদি রাজাকার ছিলো কিনা!

সাঈদি রাজাকার ছিলো কিনা!

একটা সত্য আমি বিভিন্ন সময়ে লিখেছি। আবারও লিখছি। আমাদের দেশের কিছু মানুষের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ঈমানি কমজোরির কারনে মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় সাঈদি রাজাকার ছিলো কিনা! এমনকি অনেক আওয়ামী লীগারের মধ্যেও এ সন্দেহ কাজ করে! সাঈদি যে রাজাকার ছিলো এটি আমি সাপ্তাহিক বিচিন্তায় লিখেছি ১৯৮৭ সালে। রাজাকারদের নিয়ে লেখালেখির জন্য তখন আজকের মতো এত লোকজন ছিলোনা।

পায়ে হেঁটে বাংলাদেশ ভ্রমনের সময় আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার রাজাকারের তালিকা সংগ্রহ করেছিলাম। আমার তখন স্বপ্ন ছিল রাজাকারদের তালিকা ছেপে দেশের আর সব মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষনা করা। বিচিন্তায় সেই রাজাকারের তালিকা ছাপা হচ্ছিলো। সাঈদির বিষয়টি তখন আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড আমাদের কাছে একটি চিঠি লিখে। সেই চিঠিতে তারা লিখেছিলেন “আমাদের এলাকায় দেইল্লা রাজাকার নামের একটি নৃশংস প্রকৃতির রাজাকার ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর সে পালিয়ে যাওয়াতে তাকে আমরা ধরতে পারনি। সে এখন নাম পালটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেলোয়ার হোসেন সাঈদি নামে ওয়াজ করছে।”

সেই চিঠিতে আরও লেখা হয় সেখানকার পাড়ের হাট বাজারে হাটবারে সে হিন্দু বাড়ি লুটের মালামালও বিক্রি করতো। সাঈদি যে রাজাকার ছিল তা বিচিন্তার আগে কোন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল কিনা তা আমার জানা নেই। এরপরে আমি বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে সাঈদির ইন্টারভ্যুর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাঈদি বরাবর আমাকে এড়িয়ে গেছে। রাজারবাগ এলাকায় তার বাসা থাকতে আমাকে একবার সে ইন্টারভ্যুর এপোয়েন্টমেন্ট দেয়। কিন্তু তার বাসায় যাবার পর জানানো হয় তিনিতো নেই, তিনি বিদেশে গেছেন। এমন একটা মিথ্যুক ব্যক্তি ছিল সাঈদি।

পরবর্তিতে জনকন্ঠের ‘সেই রাজাকার’ সিরিজে, গণ তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে সাঈদির একাত্তর বৃত্তান্ত উঠে আসে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে সাঈদি জনকন্ঠের পিরোজপুর প্রতিনিধি শফিউল আলম মিঠুকে হত্যা করতে তার ওপর গুন্ডা লেলিয়ে দেয়। মিঠুর চিকিৎসায় অনেক দিন সময় লেগেছে।

সাঈদির একাত্তর নিয়ে পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্যাডে লেখা চিঠিটি তখন বিচিন্তায় ফিল্ম করে ছাপা হয়। ঢাকায় বিচিন্তা সংশ্লিষ্টদের কাছে বিচিন্তার ফাইল আছে।

ঘটনাক্রমে সাঈদির আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ও বিলাত থেকে বহিষ্কারের রিপোর্ট দুটিও আমার হাতে লেখা ছাপা হয়েছে জনকন্ঠে। উল্লেখ্য আমেরিকায় ৯/১১ এর পর সেদেশে যাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয় বাংলাদেশ থেকে সে তালিকায় একমাত্র সাঈদির নামটি ছিল। বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন বিভাগকে লেখা চিঠিতে তখন বলা হয় সাঈদি যাতে আমেরিকাগামী কোন বিমানে চড়তে না পারে। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। জামায়াত তাদের ক্ষমতার শরীক। তাই মার্কিন চিঠিটি চেপে যায় বিএনপি সরকার। সিভিল এভিয়েশনের অজ্ঞাত একটি সূত্র চিঠির কপি আমাকে ফ্যাক্স করে পাঠায়। সেটি চিঠিকে ভিত্তি করে খবর ছাপলে জামায়াত প্রতিবাদ পাঠায়। প্রতিবেদকের বক্তব্যে আমরা লিখেছিলাম, চিঠিতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিবাদতো পাঠাবেন মার্কিন দূতাবাসে। খুব স্বাভাবিক এ নিয়ে আর কোন উচ্চবাচ্য করেনি জামায়াত।

২০০৫ সালে সাঈদী শেষবারের মতো বিলাত গেলে চ্যানেল ফোর তার বিলাতে উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কারন তারা কক্সবাজার এলাকায় সাঈদির এক বক্তব্যের ভিডিও পায় যেটিতে ইরাকে হামলার শোধ নিতে মার্কিন-ব্রিটিশ স্থাপনায় হামলার উস্কানি ছিল। চ্যানেল ফোর এ নিয়ে হৈচৈ তুললে ব্রিটিশ গোয়েনদারা লেবার পার্টির বাংলাদেশি প্রভাবশীলী ব্যক্তিত্ব আমিন আলীর কাছে পরামর্শ চান তারা সাঈদিকে গ্রেফতার করে আমেরিকার হাতে তুলে দিলে প্রবাসী কমিউনিটির হাতে তুলে দলে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আমিন আলী তাদেরকে বলেন সাঈদিকে গ্রেফতার করলে সে আন্তর্জাতিক ফিগার হয়ে যাবে। এরচেয়ে বরং তাকে একটা খবর পাঠাই সে চলে যাবে। সাঈদিকে খবর পৌঁছানো হয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড তাকে আটক করে আমেরিকার হাতে তুলে দেবার চিন্তা করছে। সাঈদি তখন বিলাতের সব মাহফিল বাতিল করে চুপচাপ দেশে চলে আসেন। এভাবে আমেরিকা-বিলাতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তার আয়ের বড় উৎস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আগেই।


Place your ads here!

Related Articles

কৃষক না থাকলে সরকার থাকেনা

ফজলুল বারী: ধান-চালের দাম নিয়ে দেশে অস্বাভাবিক বিব্রত একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের চড়া সুরের একটি রাজনৈতিক

London: Ditio Bangla

লন্ডনঃ দ্বতিীয় বাংলাঅধ্যাপক নজরুল ইসলাম হাববিীশব্দ বাক্যের প্রাণ। বাক্য রচনার চোখ। চোখ দিয়ে আমরা যেমন দেখি, একজন লেখক বাক্য দিয়ে

ওরা ৫১ জন – অজয় দাশগুপ্ত

অজয় দাশগুপ্তঃ  খবরে দেখলাম বিএনপিকে চাঙ্গা করার জন্য ৫১ জনের কমিটি করা হয়েছে। এই ৫১ জন নতুন কেউ নয়। সেই

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment