অনুভব

অনুভব

আমি তার চোখের দিকে চেয়ে থাকি, গভীর মনযোগে চেয়ে থাকি। কী যে এক পরিবর্তন, এক অদ্ভূত ধরনের চাঞ্চল্য খেলা করে যায় চোখের তারায়। মেঘ কিংবা বৃষ্টি দেখলে কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যায় মেয়েটা। ভারী সুন্দর দেখায়। হয়তো ওর ভেতর অদ্ভূত কোন ভাললাগা কাজ করে তাই। ছেলেমানুষী করে। বৃষ্টি নামলেই হলো! বলে, “চলো, ভিজি”। একবার ভিজলাম উত্তরার এক রাস্তায়, কী যে প্রবল বৃষ্টি- তার মধ্যে!

ওর ছেলেমানুষীগুলো আমার বেশ লাগে। রিক্সাকরে যাচ্ছি- বলবে,“আইস্ক্রীম খাব”। ফেরিওয়ালা দেখে বলবে, “ঝালমুড়ি খাওয়াবে? আমড়া?” অথচ, ভাল কোথাও খেতে গেলে আমাকে বিল দিতে দেবে না। ওর সঙ্গটা আমি খুব এনজয় করি। এত হাসতে পারে! শুরু করলে আর থামতেই চায় না। আবার হাসাতেও পারে! ছোটখাট বিষয় এত মজা করে বলবে! তবে, ওর গোমড়া মুখ দেখলে আমার ভিতরটা নড়ে ওঠে। কেমন যেন মোচড় দেয়!

আজ সে আছে অদ্ভূত এক ভাললাগা মুডে। মেঘ দেখে ক্ষণে ক্ষণে তার অভিব্যক্তির এই পরিবর্তন- দেখে আমি তাকিয়ে আছি একমনে। হঠাৎ করেই এসে আমার কাঁধে হেলান দিয়ে বসে। আমার হাতের ভেতর হাত দিয়ে পেঁচিয়ে রাখে। অভিমানি গলায় বলে, “তুমি তো একটা কদম ফুল দিলে না কোনদিন আমাকে!” আমি ওর কোমর পেঁচিয়ে ধরে বলি, “আমি তো আমাকেই দিয়ে দিয়েছি তোমাকে”।
“আহা, কি ঢং হচ্ছে!” ঠোঁট চেপে হাসল সে। অন্য প্রসঙ্গে জাম্প করে, “শোন, আমাকে একদিন বেড়াতে নিয়ে যাবে, নৌকায়? আমি কোনদিন নৌকায় চড়িনি। তোমার সাথে নৌকায় বসে ভাত খাব, খোলা আকাশের নিচে, নেবে?”

আজ সে আমার বাসায় এসেছে। আমরা দুই ভাই ছোট একটা বাসায় থাকি, চিলেকোঠা টাইপের। আমার ভাই জানে ওকে, তাই এখানে আসতে পারে। অবশ্য সে আসে না বললেই চলে। বলে, বিয়ের আগে বরের বাড়ি বেশি যেতে নেই। যেদিন আসে রান্না করে দিয়ে যায়। আজ খিচুড়ি রান্না করল বেগুন ভাজা আর ডিমের কারি। সঙ্গে আচার। আসবার সময় কিনে এনেছে।

বললাম, “আচার কেন, আমার কি বাবু হবে নাকি?”
সে হেসে বলে, “হ্যাঁ, হবেই তো! তোমার হবে না তো কি আমার হবে নাকি? মেয়েদের কখনো বেবি হয়, দেখেছো?!”
এই মেয়েটা তাৎক্ষণিক এমন কথা বলবে যে… ভালই লাগে। সত্যি মন্দ হয় না এমনটা হলে। আমাদের যখন হবে, ও একা কেন এত কষ্ট করবে? আচ্ছা, এই বাচ্চা মেয়েটা সত্যি কি একদিন মা হবে? মায়ের মত গুরু দায়িত্ব পালন করবে? ভাবলে মেলে না, মনে হয় ও সারাজীবন এমনই থাকবে। আচ্ছা, সত্যি কি আমি ওর হতে পারব? ও আসবে আমার কাছে? এই একদিন না, চিরদিনের মত। ভাবনাগুলো বাধা পায়।

“কি এত ভাব সবসময় বল তো?”
হেসে বলি, “তোমাকেই ভাবি”।
“থাক, আর আহ্লাদ করতে হবে না!” বলে নিজেই আহ্লাদির মত কাছে এসে বসল। আমি ওর চুলে আঙ্গুল দিয়ে খেলা করি, স্পর্শ করি গ্রীবা, ফর্সা পিঠে নাক ছোঁয়াই। “ওহফ” বলে লাফিয়ে উঠে সরে যায় সে।

এই হলো আমার প্রিয়তমা – নীলা, আমার সমস্ত ভাললাগার আধার। নীল আকাশের মতই। মেঘ-রোদ্দুর খেলা করে- গাঢ় নীল রঙের মতই রোমান্টিক। নীলকন্ঠী ময়ূরের মত মেঘ দেখলে নেচে ওঠে। স্বপ্ন জগতের একজন মানুষ যেন। আমি প্রায়ঃশই ভাবি বাস্তবতার সম্মুখে এই মানুষতো হারিয়ে যাবে। নুন নাই, তেল নাই- যাও নিয়ে এসো বলে বাজারের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দেবে। তখন কি এমনি করে ওকে ভাল লাগবে আমার? নাকি অন্য কারো মাঝে ওকে খুঁজব তখন। না না না কি সব ভাবছি আমি!! জীবনের সব ধাপেই একটা ভাললাগা আছে। আবার ভাবতে ভাল লাগে সেদিনটার কথা।

ভাবনায় এবারো বাধা পড়ে, বাজ পড়ার মত বিকট শব্দে। সাথে সাথে ঘরে ঘুরতে থাকা ফ্যানের গতি কমে আসে। বাইরে ইলেক্ট্রিক তারে বসে থাকা করেকটা নিরাশ্রয় কাক কা কা  করতে করতে উড়ে যায়। আমি, নীলা দুজনেই দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে বাইরে উঁকি দেই। ট্রান্সফ্ররমার বার্স্ট নয়, অন্য দৃশ্য!

বিদ্যুতের লোক এসেছিল কোন কানেকশন ঠিক করতে। কোনকিছুতে ভুল হয়েছে হয়ত। একটা তার ছিঁড়ে ঝুলছে। যে লোকটা কাজ করছিল সে ওপরেই আছে, নামতে পারছে না আর।

বাঁশের মই বেয়ে অন্য একজন উঠে গিয়ে নামাল তাকে। পথচারী কয়েকজনও এগিয়ে এল। রিক্সা ডেকে তাতে তাকে তুলে হাত-পা ঘষতে ঘষতে কোথাও নিয়ে গেল। মাত্র কয়েক মিনিটের ঘটনা।

এই প্রথম যেন মনে হলো প্রতি নিয়ত কত মানুষের সেবাই না আমরা নিয়ে থাকি। যেগুলো না হলেই নয়। আর কাজে একটু এদিক-সেদিক হলেই…! সামান্য সম্মানীর বিনিময়ে ইলেক্ট্রিসিয়ান, ফায়ার সার্ভিস এই জাতীয় কর্মীরা জীবন বাজির ঝুঁকিটা নেয়।

নীলার দিকে ফিরলাম। একটু আগে কী রোমান্টিক মূহুর্তই না ছিল! এখন সে আতঙ্কে স্থির হয়ে গেছে। জানালার গ্রীল শক্ত করে ধরে আছে- নড়ছে না, মুখটা ফ্যাকাশে আর এতটুকু হয়ে গেছে। আমি তার কাছে গিয়ে আমার বুকের মধ্যে ওর মুখটা নিয়ে মাথায় হাত রাখলাম। আর মনে হলো… আচ্ছা লোকটা বাঁচবে তো? তার স্ত্রীও এমন নিরাপদ আশ্রয়টা হারাবে না তো, আর বাচ্চারা? নীলার মুখটা জড়িয়ে রেখে ওকে সহজ করতে চেষ্টা করতে লাগলাম।


Place your ads here!

Related Articles

মেলবোর্নের চিঠি – ১২

কুমড়ো ফুলে-ফুলে; নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাঁটায় ভরে গ্যাছে গাছটা আর, আমি; ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি, খোকা তুই কবে আসবি।

Australia’s Biggest Morning Tea – by BUET Alumni Australia

BUET Alumni Australia invites all to join them at their Biggest Morning Tea on 29th June, SATURAY, 9 am to

My Story: Facebook

While I was in higher grade in Primary School, two of my friends told me about a social networking site

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment