ফিরে দেখা: পনেরো আগস্ট

ফিরে দেখা: পনেরো আগস্ট

ভোরবেলা ঘুম ভাঙলো আব্বার হাঁকডাকে। উনি চিৎকার করে সবাইকে ডাকছেন, তাড়াতাড়ি উঠো, সর্বনাশ হয়ে গেছে, শুনো রেডিওতে কি বলছে। প্রতিদিন ভোরে উঠে রেডিও শোনা আব্বার বহুদিনের অভ্যাস। সেদিন ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু রেডিও খুলে সেদিন যা শুনলেন তার জন্য তিনি মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। কেউই ছিলো না। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো বেতারে ভেসে আসছে একটি ভয়ংকর ঘোষণা। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে রেডিওর সামনে বসলাম। নির্মম নিষ্ঠুর সেই ঘোষণা নিজ কানে শুনলাম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। ক্ষমতায় বসেছে খন্দকার মোশতাক আহমেদ।

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। বঙ্গবন্ধু আর বেঁচে নেই এটা বিশ্বাস করাটা কঠিন ছিল। আর খন্দকার মোশতাক আহমেদ তো আওয়ামী লীগেরই একজন সিনিয়র নেতা, মন্ত্রিসভারও সদস্য, বঙ্গবন্ধুর অতি ঘনিষ্ঠ জন। খন্দকার মোশতাক কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করবে? আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না এসব কি হচ্ছে। আমার বয়স তখন মাত্র পনেরো বছর।

আস্তে আস্তে সবকিছুই স্পষ্ট হয়ে উঠলো। দেশে সামরিক অভ্যুত্থান হয়ে গেছে। সেই অভ্যুত্থানে সপরিবারে নিহত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু । আর এই অভ্যুত্থানের সাথে সরাসরি জড়িত খন্দকার মোশতাক।

মীরজাফরের নাম শুনেছি। চরম ঘৃণার সাথে নামটি উচ্চারিত হয় বাংলার ঘরে ঘরে। সেদিন মীরজাফর নামটির সাথে আরেকটি নাম যুক্ত হলো চরম বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসাবে। খন্দকার মোশতাক আহমেদ। এই লোকটিকে বড় বেশী বিশ্বাস করতেন বঙ্গবন্ধু। তাকে সম্মানও দিয়েছিলেন যথেষ্ঠ। অথচ ক্ষমতার লোভে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে তার প্রতিদান দিলো বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক।

মোশতাকের মন্ত্রিসভা গঠন করা হলো। খুনি মোশতাকের সাথে হাত মিলিয়ে তার মন্ত্রিসভায় যারা যোগদান করলো তাদের অনেকেই ছিল বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ। সেই বালক বয়সেই প্রত্যক্ষ করলাম কতটা নীতিহীন এবং নিষ্ঠুর হতে পারে বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতি।

রাতারাতি রাজনীতির পট পরিবর্তন হয়ে গেল । বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হলো সবকিছু থেকে। বাংলাদেশের স্থপতিকে অস্বীকার করা হলো প্রতিপদে। নিষিদ্ধ হলেন তিনি। শুরু হলো তাঁর চরিত্র হননের পালা। তারপর ক্রমান্বয়ে শুরু হলো স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রশ্রয় দেবার রাজনীতি। উদ্ভট উটের পিঠে চড়ে উল্টোপথে হাঁটা শুরু করলো বাংলাদেশ। পুরো একটি প্রজন্ম বড়ো হলো ভ্রান্তির বেড়াজালে।

হত্যাকারীরা ভেবেছিলো এভাবেই তারা চিরতরে মুছে ফেলবে বঙ্গবন্ধুর নাম। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিলো একটি সহজ সত্য, যেটি কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখে গেছেন:

“যতকাল রবে পদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।”

তারা হাজারো চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুর নাম মুছতে পারেনি। বাংলাদেশ নামের দেশটি যতদিন থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম এদেশের আকাশে বাতাসে আদিগন্ত সৌরভ ছড়াবে। বাংলাদেশের হৃদয় থেকে কেউই মুছতে পারবেনা তার স্থপতির নাম।


Place your ads here!

Related Articles

Bangladesh Politics : When Time entered in the tunnel

It was clearly visible to the people of Bangladesh the failure of the above two top leaders prior to 1

দাওয়াত

আমাদের গ্রাম বাংলায় দাওয়াতের একটা প্রতিশব্দ ছিল জিয়াপত। দাওয়াত হোক বা জিয়াপত হোক আমার দাদি আমাকে একটা মজার জিনিস শিখিয়ে

21st February: A Day of Mourning, Pride Action

21st February is a day of national mourning, pride, reflection and action. It is the Language Martyr’s Day. It is

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment