যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসি
যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের বিচার শেষ হওয়ায় ফাঁসি হচ্ছে জেনে শান্তি লাগলো। কারন জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের যাদের ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম-জানতাম কামারুজ্জামান তাদের অন্যতম। তাদের একাত্তরের অপরাধ নিয়ে অনেক দিন সামনাসামনি আলাপ করেছি। এরা কোন দিন বাংলাদেশের জন্মের বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র যুদ্ধকে ভুল মনে করেনি। উল্টো ধৃষ্ট দম্ভোক্তি করে বলতে চেয়েছে তাদের বিচারের সাহস-সামর্থ্য কারো নেই! শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যখন সন্তান হত্যার বিচারের দাবিতে এদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন, এরা তার বিরুদ্ধে ধৃষ্ট সব কটুক্তি করেছে। যেমন একাত্তরে এরা মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতিকারী বলতো! এসব জেনেশুনে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর জন্ম হওয়া স্বত্ত্বেও যারা এদের অনুসারী হয়, বাংলাদেশ জন্মের বিরুদ্ধে এদের সশস্ত্র শয়তানিকে অপরাধ মনে করেনা, রাজনৈতিক কৌশলের কথা বলে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া স্বত্ত্বেও যারা এদের পক্ষ নেয়, তাদের করুনা ও ঘৃণা করি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর এ নিয়ে অনেক তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন কামারুজ্জামান! এমন কী গ্রেফতারের আগেও লুকিয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে এসেও পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে যাবার পরও তিরষ্কার করে বলেছিলেন, তোমাদের এই ট্রাইব্যুনাল-ফাইবুন্যালকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেবেন! দেশেবিদেশের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচে লবিষ্ট-দালাল এসব নিয়োগের মাধ্যমে তাদের মূল চেষ্টাটি ছিল বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা! পৃথিবীর কোথাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ নেই। বাংলাদেশে আপিলের সুযোগের ভালোমানুষির কারনে এই বিচারে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে এই বিচার। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতালের নামে এক রকম যুদ্ধ ঘোষনা করেছে পাকিস্তানি দল জামায়াতে ইসলামী! সর্বোচ্চ আদালত কী এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনা? এমন দূর্বল সুপ্রীম কোর্ট কীভাবে দেশের আম জনতার আইনগত অধিকার রক্ষা করবে?
একাত্তরের খুনি এই যুদ্ধাপরাধী স্বাধীন বাংলাদেশে নিজেকে আড়াল করতে সাংবাদিকতাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে! যে লোকটি পাকিস্তান রক্ষায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, সে কীনা ‘সোনার বাংলা’ নামের একটি জামায়াতি পত্রিকা সম্পাদনা করতো! জাতীয় প্রেসক্লাব এই খুনি যুদ্ধাপরাধীকে সদস্যপদ দিয়ে শুধু ঘৃণ্য একটি অপরাধ শুধু না, তাকে রক্ষার চেষ্টা করেছে শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত! বাংলাদেশের মিডিয়ায় আমি প্রথম কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লার জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিলের দাবিতে লেখালেখি শুরু করি। প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক তখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলার চেষ্টা করেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখনও প্রমানিত হয়নি! এ অবস্থায় তারা তাদের সদস্যপদ কীভাবে বাতিল করেন! আমি তখন বলার চেষ্টা করেছি, আপনারাতো নানান ছলছুতোয় নানান জনের সদস্যপদ বাতিল অথবা স্থগিত করেন! বাংলাদেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমানের সদস্যপদ আপনারা বাতিল করেছিলেন, তাকে আর কোন দিন সদস্যপদ দেননি! এটা পারবেন না কেন? প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ তখন আর আমার সঙ্গে বাহাস না বাড়িয়ে অন্য কূটকৌশলের আশ্রয় নেন! আমি যেখানে বিষয়টি নিয়ে লিখেছিলাম, সেখানে তারা আমার লেখা বন্ধ করেন! এরপরও তারা কাদের মোল্লা-কামারুজ্জামানের সদস্যপদ বাতিল করতে চাননি! কিন্তু এই মুক্ত যুগে এভাবে কী কারো লেখা বন্ধ করা সম্ভব? এরপর গণজাগরন মঞ্চ যখন ধমক দেয়, এদের সদস্যপদ বাতিলের জন্যে আল্টিমেটাম ঘোষনা করে, তখন আবার পিঠ বাঁচাতে বিচার শেষ হয়নি, অভিযোগ প্রমান হয়নি, বলা লাগেনি! তড়িঘড়ি তখন তারা দুই যুদ্ধাপরাধীর সদস্যপদ বাতিলের ঘোষনা দেন! জাতীয় প্রেসক্লাবে এর প্রয়াত সদস্যদের জানাজা হয়। কাদের মোল্লার লাশ পুলিশ প্রহরায় গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়াতে তারা প্রেসক্লাবে তার জানাজা পড়াতে পারেননি! প্রেসক্লাবের সদস্য না হওয়া স্বত্ত্বেও এর নেতারা বাংলাদেশের জন্মশত্রু গোলাম আযমের জানাজা পড়তে গেছেন! কামারুজ্জামানের জানাজা প্রেসক্লাবে করার সাহস দেখাতে পারবেন কী এর নেতারা? বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ন ইতিহাসের স্বাক্ষী জাতীয় প্রেসক্লাব। কিন্তু এর কলংকের ইতিহাসে লেখা থাকবে বাংলাদেশের ফাঁসি হওয়া প্রথম দুই যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান এর সদস্য ছিলেন!