জীবন ভ্রমন ১৫ , ১৬
জীবন ভ্রমন ১৫ : শিশু কালে প্রথম অ আ ক খ বাড়িতে , আর আলিফ বা তা চা হুজুরের কাছে । সুরা, নামাজ, কোরান শরিফ পড়া ইত্যাদি মুঠ -চাল হুজুরের কাছে শিখেছি । অর্থাৎ প্রতিদিন সকালে কয়েক মুঠ চাল নিয়ে কাচারির সামনে পাড়ার ছোট ছোট বাচ্চারা আরবি পড়তে যেতাম ।
চাল গুলো একটা চাটাই এর উপর আমরা ছোট ছোট স্তুপ করে লাইন করে রাখতাম । হজুর প্রথমেই দেখত কার মুঠ ছোট । মন খারাপ হলে বলতেন ” তোদের ভাতের চাল কমে গেছে বুজতে পারছি , বেশি কস্ট হলে আনিস না , আমরা পেটে ইট বাইধা রাখুম ” ।
সেই মুঠ-চাল হুজুরের কাছ থেকে সুরা -নামাজ- কালাম যা শিখেছি তা দিয়েই চলছে এখনো । আদব কায়দা , গুনাহ , সওয়াব এর বিষয় গুলো সেই শিশু কালে শিখেছিলাম সরল প্রাণ হুজুরের কাছ থেকে । এইটাই ছিলো সুফী ইজমের মহ্ত্ব ।
সেই দিন এক বড় ভাই আমাকে প্রশ্ন করলেন কেন ধর্ম পালন করতে হবে ? আমি বললাম কঠিন প্রশ্ন করলেন । উনি বললেন তুমি যা বুঝ তাই বল । আমি বললাম ” time to time religion came to keep people in discipline life through different rules , regulations and restrictions and to have some sorts of spiritual peace by obeying the almighty -the creator… religion help people to enjoy social and domestic life ignoring fighting but ensures social justice .”
উনি বললেন এই জিনিস গুলো ওরা বুজে না কেন ! বললাম আমরা মুঠ-চাল হুজুর থেকে শিখেছি । আর ওরা এখন বিভিন্ন ‘মতবাদ ‘ থেকে শিখছে , তাই ।
আমাদের সেই হুজুর দুই সপ্তাহ পর পর বাড়ি যেতেন বেতন বাবদ পাওয়া চাল নিয়ে । একবার উনার ১৫ সের চাল কাচারী ঘর থেকে চুরি হয়ে যায় । আমার আজও মনে পড়ে হুজুরের সেই করুন চেহারা । মন খারাপ করে আমার জেঠার কাছে বসে আছে । বাড়িতে যাবে কি নিয়ে । জেঠা আমাকে বললেন তোমাদের হুজুরকে এক টুকরি (১৫ সের ) ধান দিতে বল । আমি জিগ্গেস করলাম হুজুর নিবেন কেমনে । ” একটা চটের ব্যাগে দাও , আমি ব্যাগ ফেরত নিয়ে আসব ”
আমি আমার জেঠিকে সাথে কিছু চালও ধানের সাথে দিতে বললাম । জেঠি বলল যা দুই পট চাল নিয়ে আয় কলস থেকে । একটা গামছা দিয়ে চাল বাধার সময় জেঠি জিগ্গেস করলো কয় পট দিছস । বললাম ৪ পট, ওনারা চারজন । যৌথ পরিবারে ছিলাম । জেঠি বলল ” তোর মাথা , যা দিয়ে আয়, হুজুর তোরে দুই নম্বর বেশি দিবো ” । আমি বললাম : না , সকালে দেরিতে গেলে বকা দিবে না ।
হুজুরকে কানে কানে বললাম চালের কথা । হুজুর মাথা বুলিয়ে বেশ দোয়া করলেন । হুজুরের দোয়া কাজে লাগছে কিনা জানিনা । তবে হুজুর একটু চিন্তা মুক্ত হয়েছিলেন বলে মনে হয়েছে । পরে স্থানীয় হাট থেকে চাল চুরির ঘটনা জানা যায় বলে শুনেছি । চোরেরা সব সময় কিছু ক্ষুত রেখে যায় তাদের ধরার জন্য ।
জীবন ভ্রমন ১৬ : পবিত্র ঈদ উপলক্ষে এক টিকেটে দুই ছবি । কি মজা । ঈদ নিয়েও ব্যবসা । মোল্লা দের এই নিয়ে হৈ চৈ করতে কখনো শুনেনি । তখন ঈদের সময় সিনেমা দেখা আনন্দের একটা অংশ ছিল । কিন্তু আসল দামে টিকেট পাওয়া লটারী পাওয়ার মত ছিল ।
এক ঈদের পর টিকেটের জন্য জোনাকি সিনেমা হলে যাই । সকাল ১০টায টিকেট ছাড়বে । টিকেট কাটা তো দুরের কথা , কাউন্টার এর ১০০ হাতের মধ্যে ও যেতে পারলাম না । কয়েক বন্ধু মিলে ব্ল্যাকার দের পেশী শক্তি দেখলাম । জানতাম পুলিশ কমিশন পেত ব্ল্যাকারদের কাছ থেকে । তাই ওদের সামনেই বেচাকেনা চলত ।
মুখ চেনা এক ব্ল্যাকার এর সাথে দামাদামি করতেই বলল , “ওই পুলিশ সারের টিকেট , আমারে বিক্রি করতে দিছে ” আমাদের কথা বলতে দেখে পুলিশ সাহেব সামনে এসে বলল কি হইছে ? ছেলেটা বলল ৫ টাকা করে দিতে চায় । আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল ” আর নাই ! ” আমরা বললাম আছে , তবে বাদামের পয়সা । পুলিশ সাহেব বলল , ” ঠিক আছে, দিয়ে দাও ” ব্ল্যাকার হলেও মনটা ভালো ছিল ।
গেটে গিয়ে হলে ডুকতেই বাধা । গেইট কিপার মোটা মচুয়াল মামুর প্রশ্না- টিকেট পাইছ কোথায়? বললাম পুলিশ ব্ল্যাকারের কাছ থেকে কিনেছি । ফিসফিস করে বললো “শালা, আমাদের ভাত মারতে আইছে ” ।
একবার ওই পুলিশ ভাইকে ঢাকা স্টেডিয়ামে আবাহনী মোহামেডান খেলার সময় দেখি । চিনতে পেরেছিলেন । জিগ্গেস করলো খেলা দেখবা ! হা সূচক উত্তর দিলাম । বলল ওই ছেলের কাছ থেকে টিকেট নিয়ে আস । ক্যাশ ইকোনমি । উভয়ের লাভ । বাফুফের রেভিনু লস । পরে বুঝতে পারলাম লোক বুঝে কিছু টিকেট না ছিড়ে তারা রেখে দেয় । সেই টিকেট তাদের লোকের মাধ্যমে হাফ দামে বিক্রি করে । একেই টিকেট কয়েকবার বিক্রি করে । ঠেউ গুনে ঘুষ খাওয়ার মত ।
একবার হাউস ফুল । ব্ল্যাকেও টিকেট নাই । পরিচিত ব্ল্যাকার বলল মচুয়াল গেট কিপার মামুর কাছে যেতে । দেখা করার পর বলল, “পরের শো তে আস” আমরা বললাম এই শো দেখতে চাই । দুই জনের জন্য ১৫ টাকা আছে । কয়েক মিনিট পর হলে নিয়ে বসিয়ে দিল ।
কিছুক্ষণ পর এক লোক বলল এইটা আমার সিট । আমরা টিকেট চেকারের সাথে কথা বলতে বললাম । এক পর্যায়ে টিকেট চেকার তাকে বলল ” ব্ল্যাকার থেকে টিকেট করেছেন , দুই নম্বর টিকেট , যান ওই সামনে গিয়ে বসে থাকেন ” মনে মনে খারাপ লাগছিল । কিন্তু কিছু করার ছিল না । ক্যাশ ইকনমির ভালো মন্দ দুইটাই আছে ।
Related Articles
Why should Begum Khaleda and Sheikh Hasina talk to each other?
A series of articles have appeared in the newspapers recently on the proposed dialogue face- to-face between the two former
Tahara – A documentary
Trailer of our documentary – ‘Tahara’ is going to showcase true stories and memories of some outstanding Australians who lead
দেশে ফিরতে পারেন এনআরসির শিকার বাংলাদেশীরাও
ফজলুল বারী: আমার এ লেখার শিরোনামটি দেখে অনেকে চমকে যেতে পারেন। বিরক্তও হতে পারেন। আমি আমার লেখার প্রশ্নে যুক্তি দেবো।