জীবন ভ্রমন ১৫ , ১৬

by Anamul Bhuiyan Mukul | August 4, 2015 11:13 pm

জীবন ভ্রমন ১৫ : শিশু কালে প্রথম অ আ ক খ বাড়িতে ,  আর আলিফ বা তা চা হুজুরের কাছে । সুরা, নামাজ, কোরান শরিফ  পড়া  ইত্যাদি মুঠ -চাল হুজুরের কাছে শিখেছি । অর্থাৎ  প্রতিদিন সকালে কয়েক  মুঠ চাল নিয়ে  কাচারির সামনে পাড়ার ছোট ছোট বাচ্চারা আরবি পড়তে যেতাম ।

চাল  গুলো  একটা চাটাই এর উপর আমরা  ছোট  ছোট  স্তুপ  করে লাইন  করে  রাখতাম । হজুর প্রথমেই দেখত কার মুঠ ছোট । মন খারাপ হলে বলতেন ” তোদের ভাতের চাল কমে গেছে বুজতে পারছি , বেশি কস্ট হলে আনিস না , আমরা পেটে  ইট  বাইধা রাখুম ” ।

সেই মুঠ-চাল হুজুরের কাছ থেকে সুরা -নামাজ- কালাম যা শিখেছি তা দিয়েই  চলছে এখনো । আদব কায়দা , গুনাহ , সওয়াব এর বিষয় গুলো সেই শিশু কালে শিখেছিলাম সরল প্রাণ হুজুরের কাছ থেকে । এইটাই  ছিলো সুফী ইজমের মহ্ত্ব ।

সেই দিন এক  বড় ভাই আমাকে প্রশ্ন করলেন কেন ধর্ম  পালন করতে হবে ?   আমি বললাম কঠিন প্রশ্ন করলেন ।  উনি বললেন তুমি যা বুঝ তাই বল । আমি বললাম ” time  to time religion came  to  keep  people in  discipline life  through different rules , regulations and restrictions and to  have  some sorts of   spiritual  peace by  obeying  the  almighty -the creator… religion   help  people to enjoy  social and domestic  life  ignoring fighting but ensures  social  justice  .”

উনি বললেন  এই  জিনিস  গুলো ওরা  বুজে না কেন  ! বললাম আমরা মুঠ-চাল হুজুর থেকে শিখেছি   । আর ওরা এখন বিভিন্ন ‘মতবাদ ‘ থেকে শিখছে , তাই ।

আমাদের সেই হুজুর দুই সপ্তাহ পর পর বাড়ি যেতেন বেতন বাবদ পাওয়া চাল নিয়ে । একবার উনার ১৫ সের  চাল কাচারী ঘর থেকে চুরি হয়ে যায়  । আমার আজও  মনে পড়ে  হুজুরের সেই করুন চেহারা । মন খারাপ করে আমার জেঠার  কাছে বসে আছে । বাড়িতে যাবে কি নিয়ে । জেঠা   আমাকে বললেন তোমাদের হুজুরকে এক টুকরি (১৫ সের ) ধান দিতে বল । আমি জিগ্গেস করলাম হুজুর নিবেন কেমনে । ” একটা চটের ব্যাগে দাও , আমি ব্যাগ ফেরত নিয়ে আসব ”

আমি আমার  জেঠিকে সাথে কিছু  চালও ধানের সাথে  দিতে  বললাম ।  জেঠি বলল যা দুই  পট  চাল নিয়ে আয় কলস থেকে । একটা  গামছা দিয়ে  চাল  বাধার  সময় জেঠি জিগ্গেস করলো কয়  পট দিছস । বললাম ৪ পট, ওনারা  চারজন ।  যৌথ পরিবারে ছিলাম  ।  জেঠি  বলল  ” তোর মাথা , যা দিয়ে  আয়, হুজুর তোরে দুই নম্বর  বেশি  দিবো  ” ।  আমি বললাম  : না , সকালে দেরিতে  গেলে  বকা দিবে  না  ।

হুজুরকে কানে কানে বললাম চালের কথা । হুজুর    মাথা বুলিয়ে বেশ দোয়া  করলেন । হুজুরের দোয়া কাজে লাগছে কিনা জানিনা । তবে  হুজুর একটু চিন্তা মুক্ত হয়েছিলেন বলে মনে হয়েছে । পরে স্থানীয় হাট থেকে চাল চুরির ঘটনা জানা যায়  বলে শুনেছি । চোরেরা সব সময় কিছু ক্ষুত রেখে যায় তাদের ধরার জন্য ।

 

জীবন ভ্রমন ১৬   : পবিত্র ঈদ উপলক্ষে এক টিকেটে দুই ছবি ।  কি মজা । ঈদ নিয়েও  ব্যবসা । মোল্লা দের এই নিয়ে হৈ চৈ করতে কখনো শুনেনি । তখন ঈদের  সময় সিনেমা দেখা আনন্দের একটা অংশ ছিল । কিন্তু আসল  দামে টিকেট পাওয়া লটারী পাওয়ার মত ছিল ।

এক ঈদের  পর টিকেটের জন্য জোনাকি সিনেমা হলে যাই । সকাল  ১০টায টিকেট ছাড়বে । টিকেট কাটা তো দুরের কথা , কাউন্টার এর ১০০  হাতের মধ্যে ও যেতে পারলাম না । কয়েক বন্ধু মিলে  ব্ল্যাকার দের পেশী শক্তি  দেখলাম । জানতাম পুলিশ কমিশন পেত ব্ল্যাকারদের কাছ থেকে । তাই  ওদের  সামনেই বেচাকেনা  চলত ।

মুখ  চেনা এক ব্ল্যাকার এর সাথে দামাদামি করতেই  বলল , “ওই পুলিশ  সারের টিকেট ,  আমারে  বিক্রি করতে দিছে ” আমাদের কথা বলতে দেখে পুলিশ  সাহেব সামনে এসে বলল কি হইছে ? ছেলেটা বলল ৫ টাকা করে দিতে  চায় । আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল ” আর নাই ! ” আমরা বললাম আছে , তবে বাদামের পয়সা । পুলিশ   সাহেব বলল , ” ঠিক আছে,  দিয়ে দাও ” ব্ল্যাকার হলেও মনটা ভালো ছিল  ।

গেটে  গিয়ে হলে ডুকতেই বাধা । গেইট কিপার মোটা  মচুয়াল মামুর প্রশ্না- টিকেট পাইছ কোথায়? বললাম পুলিশ ব্ল্যাকারের কাছ থেকে কিনেছি ।  ফিসফিস  করে  বললো  “শালা, আমাদের ভাত মারতে আইছে ” ।

একবার ওই পুলিশ ভাইকে ঢাকা স্টেডিয়ামে  আবাহনী মোহামেডান খেলার সময় দেখি । চিনতে  পেরেছিলেন  । জিগ্গেস  করলো  খেলা  দেখবা ! হা সূচক উত্তর দিলাম । বলল ওই ছেলের কাছ থেকে টিকেট নিয়ে আস ।  ক্যাশ ইকোনমি । উভয়ের লাভ । বাফুফের রেভিনু লস ।  পরে বুঝতে পারলাম লোক বুঝে কিছু টিকেট না ছিড়ে  তারা রেখে দেয় । সেই  টিকেট তাদের লোকের মাধ্যমে হাফ দামে বিক্রি করে । একেই টিকেট কয়েকবার বিক্রি করে । ঠেউ গুনে ঘুষ  খাওয়ার মত ।

একবার হাউস ফুল । ব্ল্যাকেও টিকেট নাই । পরিচিত ব্ল্যাকার বলল মচুয়াল গেট কিপার মামুর কাছে যেতে । দেখা করার পর বলল, “পরের শো তে আস” আমরা বললাম এই শো দেখতে চাই । দুই জনের জন্য ১৫ টাকা আছে । কয়েক মিনিট পর হলে নিয়ে বসিয়ে দিল ।

কিছুক্ষণ পর এক লোক বলল এইটা আমার সিট ।  আমরা টিকেট চেকারের সাথে  কথা  বলতে বললাম । এক  পর্যায়ে টিকেট চেকার তাকে বলল  ” ব্ল্যাকার থেকে টিকেট করেছেন , দুই নম্বর টিকেট , যান ওই সামনে গিয়ে বসে থাকেন ” মনে মনে খারাপ  লাগছিল । কিন্তু কিছু করার ছিল না । ক্যাশ  ইকনমির ভালো মন্দ দুইটাই আছে ।

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2015/%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%a8-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a8-%e0%a7%a7%e0%a7%ab-%e0%a7%a7%e0%a7%ac/