ব্রিসবেনের আবহাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ!
শুক্রবার বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমিদের জানার আগ্রহের তালিকার পয়লা নম্বরে ছিল ব্রিসবেনের আবহাওয়া রিপোর্ট! সারাদিনই নানাজন ফোনে, ক্ষুদে বার্তায় অথবা ফেসবুকের ম্যাসেজবক্সের মাধ্যমে জানতে চাইছিলেন কী অবস্থা এখন ব্রিসবেনের? ঝড়বৃষ্টি থেমেছে বা থামার সম্ভাবনা আছে কীনা? ব্রিসবেনের আকাশের দিকে তাকিয়ে আর আবহাওয়া বিভাগের ওপর আস্থা রেখে এর উত্তরে বলা চলে, ‘না’। বৃষ্টি থামার কথা আগামি বুধবার! বাংলাদেশ দল তখন থাকবে মেলবোর্নে! অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানীতে।
শুক্রবার দুপুরে কিন্তু একবার বৃষ্টি হঠাৎ থেমে গিয়েছিল ব্রিসবেনে। আধাঘন্টার মধ্যে আবার শুরু হয় বৃষ্টি! আর থামেনি। সাধারনত যে কোন সাইক্লোনের সময় অথবা পরে একটি এলাকাজুড়ে যা হয় আর কী! সাইক্লোন উপকূল অঞ্চল অতিক্রমের সময় ফোঁসফাঁস আক্রোশে প্রচন্ড বেগে ঝড় হয়। আর সাইক্লোনটি যাবার বিশাল ব্যসার্ধের পথ ধরে বায়ু মন্ডলে যে রেশ রেখে যায়, তার প্রভাবে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি চলে গোটা এলাকায়! ব্রিসবেন সহ সারা কুইন্সল্যান্ড এলাকা জুড়ে এখন যা চলছে! ঘূর্নিঝড় মারসার ব্যাসার্ধ ছিল সত্তুর কিমির বেশি! এই ব্যাসার্ধ দাপিয়ে লন্ডভন্ড করে যাবার সময় বায়ু মন্ডলে যা প্রতিক্রিয়া রেখে গেছে, তাতে আগামি চব্বিশ ঘন্টার ব্রিসবেনের বৃষ্টির হিসাব নেবেন? শনিবার ব্রিসবেন সময় সকাল ৫:৩৫ মিনিটে সূর্য উঠবে সেখানে। এই সূর্যোদয়টাও হবে ঝড়ো বৃষ্টির মধ্যে! এরপর ঘন্টাওয়ারি সকাল ৬ টা থেকে সারাদিনই বৃষ্টির ঝরবে সেখানে! এখন পর্যন্ত এদেশের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুসারে এই বৃষ্টি চলতে থাকবে আগামি বুধবার পর্যন্ত! আইসিসি অফিসিয়েলি ম্যাচ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিতে পারে ম্যাচের দিন সকালে। কিন্তু গাব্বার মাঠ-পিচের যে অবস্থা তাতে এখন সেখানে হাডু-ডু খেলা সম্ভব! অন্তত ক্রিকেট নয়। ব্রিসবেনে বৃষ্টির বাগড়া দেখে মেলবোর্নে বাংলাদেশের পরের ম্যাচের আবহাওয়া কেমন থাকবে তাও অনেকে জানতে চাইছেন। এখন পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসারে আগামি সোমবার বৃষ্টি হতে পারে মেলবোর্নে। কিন্তু বৃহস্পতিবার শ্রীলংকার সঙ্গে খেলার দিন মাঝে মাঝে মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরির খেলা চলতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই।
ব্রিসবেনের এই সাইক্লোনজনিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ কুইন্সল্যান্ডের নতুন লেবার সরকারের কপালে চিন্তার ভাজ তুলেছে। কারন এই কুইন্সল্যান্ড থেকেই সারা অস্ট্রেলিয়ার সিংহভাগ কৃষিপন্যের যোগান যায়। কুইন্সল্যান্ড ঝড়-প্রাকৃতিক দূর্যোগ মানে কলা সহ নানান কিছুর দাম বেড়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ায়! এ রাজ্যের তিন বছর আগের ঘূর্নিঝড়ের পর কলার কেজি ১০-১২ ডলারে চড়েছিল! কিন্তু আইসিসি অথবা অন্যতম হোষ্ট অস্ট্রেলিয়া, গেষ্ট বাংলাদেশ দল নিশ্চয় কলার দাম নিয়ে ভাবছেনা। ঘূর্নিঝড় মার্সা যে কলা দেখিয়ে যাচ্ছে তা আইসিসিকে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি অনেকের অনেক ক্ষতি অথবা লাভের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানান হিসাব-নিকাশ!
খেলা পন্ড হলে টিকেটের মূল্য ফেরত দিতে হবে আইসিসিকে। কিন্তু খেলার আয়োজনের আরও যত খরচাপাতি এর সবই তাকে পরিশোধ করে দিতে হবে। টিম অস্ট্রেলিয়ার যে হিসাবনিকাশে গড়বড় দেখা দেবে তা তাদের মিডিয়া ব্রিফিং’এর চেহারাগুলো দেখেই ঢের বোঝা গেছে। ইনজুরি থেকে ফেরা মাইকেল ক্লার্ক এ ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে চেয়েছিলেন! কিন্তু তা হচ্ছে কই? বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ প্রতিটি পয়েন্ট মূল্যবান যে কোন দলের জন্যে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের জন্যেতো বটে। অস্ট্রেলিয়া দলের মতোই শুক্রবার বিসবেনের গাব্বা স্টেডিয়ামের ইনডোরে প্রেকটিস করেছে মাশরাফি বাহিনী। বাইরে তখন চলছিল সাইক্লোন মার্সার ধকলে সৃষ্ট বিরতিহীন বৃষ্টিধারা! প্রেকটিস শেষের রুটিন মিডিয়া ব্রিফিং’এ বাংলাদেশ কাপ্তান মাশরাফি ঠিকই বলেছেন, গাব্বার মাঠ-উইকেট কিছুই আমরা চিনিনা-জানিনা। বৃষ্টির কারনে মাঠ-উইকেট কিছুই দেখতে যেতে পারিনি। কিন্তু আমরা এখনও আশা করছি বৃষ্টি থামবে এবং খেলা হবে। নিজেদের সমস্ত কিছু উজাড় করে খেলতে উন্মুখ টিম বাংলাদেশ। খেলা যদি না হয় তাহলে গাব্বার মতো বিখ্যাত এক ভেন্যুতে খেলতে না পারার দূ:খ থেকে যাবে বাংলাদেশ বাহিনীর।
খেলাটি নিয়ে অনেক দূ:খ-হতাশা কাজ করছে ব্রিসবেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের। জার্সি-পতাকা কেনা থেকে কত প্রস্তুতি অনেক দিনের! সবকিছুর বাড়াভাতে পানি ঢেলে দিয়েছে ঝড়বৃষ্টি! ব্রিসবেনের বাইরে থেকে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি গেছেন শহরটায়। মেলবোর্ন প্রবাসী কবি ও লেখক ডা আহমেদ শরীফ শুভ পারিবারিক বন্ধুবান্ধব নিয়ে বড় একটা দল নিয়ে পৌঁছেন ব্রিসবেন। বিমানের টিকেট- হোটেলভাড়া সহ তাদের খরচাপাতির বাজেট তিন হাজার ডলার ছাড়াবে। কিন্তু ব্রিসবেনের পরিস্থিতি দেখে তারা ভীষন হতাশ। এমন মানসিক অবস্থা আরও অনেকের। আবার অনেকের মনের ভিতর অন্য একটি আনন্দও আছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে নিরাপদে ছিনিয়ে নেবার আনন্দ-স্বস্তি। মেলবোর্নে শ্রীলংকার সঙ্গে খেলার আগে পর্যন্ত মুখ বড় করে বলা যাবে, অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের পয়েন্ট সমান।