জীবন ভ্রমন ৭ , ৮
জীবন ভ্রমন ৭ : সখের দাম নাকি ৫ সিকি । একদিন এক লোক একটি বিড়াল বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যাচছিল । পথিমধ্যে এক লোক জিজ্ঞেস করল ‘ভাই বিড়াল টির দাম কত ‘ । উত্তরে বলল দুই টাকা অর্থাৎ ৮ সিকি । ক্রেতা লোকটি ৬ সিকি দিয়ে কিনতে চেয়েছিল । কিন্তু বাজারে গিয়ে দামাদামি করে বিক্রি করা বিক্রেতার সখ । তাই অনেক অনুরোধের পর ও সে বিক্রি করল না । ফিরতি পথে বিড়াল ওয়ালার সাথে আবার দেখা । জিজ্ঞেস করলো ‘ ভাই বিড়াল কত বিক্রি করলেন ‘ । উত্তর: ৫ সিকি । লাভ হয়েছে কত ? উত্তর: বিড়ালের নখের আচড় ।
ছোটকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষণস্থায়ী সখ ছিল । যখন পত্রিকা পড়া শিখেছি তখন আকর্ষন ছিল রণবীর কার্টুন । দৈনিক বাংলার প্রথম পাতার কর্নার কত যে কেটেছি । তারপর একটু বড় হয়ে সিনেমা ও খেলার খবর সংগ্রহ করা । ঢাকা স্টেডিয়াম ও বায়তুল মোকারম এরিয়া ছিল আমার অতি পরিচত জায়গা । স্কুল জীবনে কতবার যে গিয়েছি তা হিসাবের উর্ধে ।
একদিন স্কুলের পর বিকেলে বায়তুল মোকারম এলাকয় যাই । ফিরার সমর দেখি এক হুজুর নানাবিধ মসলা দিয়ে হালুয়া বানাচ্ছে । আর সুমিং পুল ও মসজিদ এর মাঝখানের খালি জায়গায় মানুষ গোল হয়ে দাড়িয়ে হালুয়া বানানো দেখছে , আর তার বক্তিতা শুনছে । আমিও চিপা দিয়ে ঠুকে যোগ দিলাম । কখন যে সন্ধা হয়ে গেছে বুঝতে পারি নাই ।
সংগত কারণে এদিকে বাসায় খোজাখূজি শুরু হয়েছে । তাড়াতাড়ি ফকিরাপূল বাজার হয়ে রওয়ানা দিলাম । ভয়ে পানির টাংকির নিচ দিয়ে গেলাম না । বাজার মসজিদের সামনে আসতেই একজন হাত ধরেই কোথায ছিলি বলেই কষেছিল এক থাপড় । ফিরে দেখি বড় মামা । মামা মারার কথা না । আর বুঝতে বাকি থাকলো না আমার সখের মূল্য আরো কয়েকটা থাপড় অপেক্ষা করছে ।
আমার ছেলে এখন সেই বয়স পার করছে । সব কিছু বদলে গেছে । পিতামাতা হিসাবে আমারা আরো বেশি সতর্ক । আজ অবধি একা কোথাও যেতে দেই নাই । মাঝে মাঝে সকালে বাসে করে স্কুলে যেতে চায় । অনুমতি পায় না । বলি তোমাকে স্কুলে দিযে আসা আমাদের আনন্দ ।
জীবন ভ্রমন ৮ : আমার নাম ঠিকানা সংক্রান্ত লং টার্ম মেমরি ভালো না । এই ব্যপারে নাহিদের উপর কিছুটা নির্বরশীল । অনেকের নাম এখন স্মরণ করতে পারি না । সম্ভবত শরৎ বাবুর কথা -“তের চোদ্দ বছরের মত বালাই আর পৃথিবীতে নাই ” । বালাই আমলের একটা ডিম ট্রিটমেন্ট অতি সতর্কতার করার পরও ধরা পড়ে যাই । কারন যে বুক শপের ছেলেকে দিয়ে ৩ টি ডিম কিনেছিলাম ব্যাক ট্রাক করে সনাক্তকৃত হয়ে যাই । টিভি সিরিয়াল CSI দেখলে নিজেকে এখন বোকা মনে হয় ।
সপ্তম কি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি । বাসার পাশের খালি জায়গায় সাত ছারা , টেনিস বল দিয়ে বম বাস্টিং ( বল ছুড়ে আগত করা ), মার্বেল , ক্রিকেট ইত্যাদি খেলতাম । প্রতিদিন ওই জায়গা দিয়ে আমাদের স্কুলের সমাজ বিজ্ঞান / ইতিহাসের শিক্ষক রউফ স্যার যেতেন । আর আড় চোখে দেখতেন । সম্ভবত উনি আসে পাশে কোথাও টিউশনি করতেন ।
সেই স্যার প্রতিদিন আমাকে পড়া ধরতেন আর খেলার রেফারেন্স দিয়ে তিরস্কার করতেন । আমি ইতিহাস -ভুগলে ভালো ছিলাম না । বিশেষ করে দিন ক্ষণ মনে থাকত না । রউফ স্যরের বেতের বাড়ি বেশ মজা ছিল । একবার খাইলে অনেক দিন মনে থাকত । মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের FB ন্ধুদের নিশ্চয় মনে আছে ।
ক্লাস নাইন উঠার পর মনে হল স্যারের সাথে একটু মশকরা করি । কারণ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র । আর ইতিহাস ভূগোল নাই । স্যার প্রতিদিন রাস্তার কোনার টং দোকান থেকে বিড়ি ও পান কিনতেন । আমরাও তখন দুই একটা টান দেওয়া শিখেছি । পাতার বিড়ির কথা হয়ত আমাদের মনে আছে ।
সমবয়সী দোকানি ছেলেকে বললাম একটা কাজ করতে হবে । পানের ভিতর সিগারেটের তামাক দিতে হবে । তোমার পুরস্কার আছে । কয়েকটা বক মার্কা সিগারেটের পয়সা দিয়ে দিলাম ।পরের দিন । স্কলে যাওয়র সময় । প্লান মত কাজ । আমরা দূর থেকে দাড়িয়ে দেখলাম ।।
স্যার ৫০ মিটারের মত হেটে গিয়ে পানের খিলি মুখে দিল । কিছু ক্ষণের মধ্যে গালে হাত । থু মেরে সব বের করে দিল । দ্রুত বেগে দোকানের দিকে ফেরত আসছে । দোকানি ছেলেটা ভয়ে একজনকে রেখে টয়লেটের কথা বলে সরে গেল । দোকানের সামনে দাড়ানো একজনের সাথে কথা বলে স্যার চলে গেলেন স্কুলে । আমরাও অন্য পথে স্কুলে ।
পরের দিন ছেলেটার বাবার মাধ্যমে ব্যাক ট্রাক করেছিলেন । সন্দেহের তীর ছুড়েছিল অংকের শিক্ষক রহমান স্যারের মাধ্যমে । রহমান স্যার ভালো জানতেন বিধায় কোনো লাভ হয়নি । এর পর থেকে সালাম দিলে শুধু মাথা নাড়তেন আর হযত মনে মনে বলতেন ” তোদের যদি আর একবার ভূগোল ক্লাস্সে পাইতাম সদর ঘাটের পান খিলি খাওয়াইতাম “।
Related Articles
Why the government cannot solve Dhaka city's transportation problem ?
ঢাকার যাতায়াত সমস্যার সমাধান হয় না কেন ? ভূমিকাঃ আজকের বিজ্ঞানের এই চরম উন্নতির যুগে কোন শহরের যাতায়াত সমস্যা কি
জীবন ভ্রমন ১১ , ১২
জীবন ভ্রমন ১১ : শনিবার । রোজার সকাল । একটু বাংলা টিভি দেখতে বসলাম । সবজির বাজার দরের উপর ৭১
জালাল আসছে ক্যানবেরায়
জালালের গল্প বাংলাদেশের ছবি ৷ এবারের অস্কার প্রতিযোগিতায় মনোনয়ন পেয়েছে এটি ৷ তার মানে অস্কারে ছবিটি দেখানোর জন্য শর্ট লিস্টেড