জীবন ভ্রমন ১৭, ১৮ :
জীবন ভ্রমন ১৭ : ধুম পান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর । একবার রাস্তার পাশে এই রকম একটা লেখার নিচে দাড়িয়ে এই অস্বস্তিকর কাজটি করছিলাম । পরিচিত এক লোক এসে বলল আগুন আছে । সিগারেটটি বাড়িয়ে দিলাম । উনি কোনো কথা না বলে ফুকতে ফুকতে হাটা ধরলেন । বললাম ভাই কি ব্যাপার । উপর দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল , এক সাথে দুইটা অন্যায় করা যায় না । একটা কাজ আমারে করতে দে । বুজলাম উনার পকেটে খুচরা পয়সা নাই ।
এক বন্ধুর কাছ থেকে ধুমপান শিখি । সব কিছুর জন্য গূরু লাগে । বন্ধু আমাকে কিভাবে ধুয়া গিলে আবার নাক দিয়ে বের করতে হয়, কিভাবে গোল করে ছাড়তে হয় ইত্যাদি শিখিয়েছে । আবার বলত “এইটা আমার ইনভেস্টমেন্ট “। বললাম কিভাবে । “তুই যখন কিনবি তখন আমি তোরটা শেয়ার করতে পারব , আর সিগারেট গুরু হিসাবে নিশ্চয় আমার জন্য দুই একটা কিনবি ” । হিসাবটা একেবরেই সহজ সরল এবং সত্য ।
আমি যখন ফুকতে শিখি তখন সিজার ছিল ২০ পয়সা আর ষ্টার ছিল ১৫ পয়সা । আমার ডেবু হয় সিজার সিগারেট দিয়ে । তারপর কাপ্স্টান । তখন দাম ছিল ৪০ পয়সা । ষ্টার আমি কখনো টান দিতে পারতাম না । বন্ধু বলত ” ষ্টার টানতে পারছ না , তোর জীবন ১৬ আনাই মিছা ” । একবার কোনো এক কারণে এক ক্লাস মেট আমাকে এক প্যাকেট কাপ্স্টান সিগারেট দিয়েছে । বলতে পারেন এক ধরনের ঘুষ ।
আমি প্যাকেটটি দক্ষিনা হিসাবে আমার সিগারেট গুরুকে হস্তান্তর করি । বললাম তোর investment এর interest । উত্তরে বলল ” শালা এক শলা সিগারেট কিনা খাওয়ার যে মজা তা নস্ট করে দিলি , দিয়াশলাই আনছস ! “।
আমাদের এক বন্ধু ছিল । তাকে এখন মাঝে মাঝে বাংলা নাটকে দেখা যায় । তার একটা টেকনিক ছিল । সে ১০ পয়সা দেখিয়ে বলত ” দোস্ত ৫ পয়সা short আছে , দেখত পকেটে ৫ পয়সা আছে কিনা ” । এইভাবে তিন জনের কাছ থেকে ১৫ পয়সা collection করে একটা ষ্টার সিগারেট ।
বন্ধুর ওই ১০ পয়সার কয়েন কখনো শেষ হত না । একদিন আমরা confirm হওয়ার জন্য ৫ পয়সা দেওয়ার আগে ১০ পয়সার কয়নে একটু মার্ক করে দিলাম । পরের দিন বিকালে ওই একই কয়েন । হাসাহাসির পর বলত ” ওই শালারা , বাপের কাছে কি বিড়ির পয়সা চাওয়া যায় ! , ১৫ পয়সা চাইলে তো তোরা আবার চোখ কপালে তোলছ ! “।
একদিন সন্ধ্যায় আমরা কয়জন এলাকার মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছি । হঠাথ এক বন্ধু এসে হাজির । সে চিটাগং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছে মাত্র । মন খুব খারাপ । জিগ্গেস কলাম কি হইছে MM ( স্কুলে ওর টাইটেল ছিল MM)। উত্তর ” আমার মনে হয় মেডিকেলে পড়া হবে না , আমি তিন মাস পার করতে পারি নাই , হলে থাকতে খুব অসুবিধা হয় ” । আমরা জানতাম ওর এক ধরনের OCD এর কথা ।
আমি বললাম তোর টাইটেলের দ্বিতীয় M থেকে বের হয়ে আসতে হবে । ইউনিভার্সিটি এক মাস বন্ধ । এইটা তোর ট্রেনিং পিরিয়ড । রাজি আছস কিনা বল । বলল “আমি রাজি” । এখন থেকেই তোর ট্রেনিং । আমরা একটা সিগারেট ধরলাম । তিনজন কয়েক টান দেওয়ার পর বললাম এইবার তুই টান । খুব করুন সুরে বলল , “এইটাই খাইতে হইবো মামা , নতুন একটা ধরাই ” । আমরা বুজিয়ে বললাম না । ধম বন্ধ করে ফুকতে থাকলো ।
ওই সন্ধায় দ্বিতীয় লেসন । পাশেই একটু গোবর পরে ছিল । বললাম “সেন্ডেল দিয়ে এইটা মাড়াবি , গোবর তোরে খাইবো না, তারপর ওই পানির কলে গিয়ে সেন্ডেল পরিস্কার করবি “। এর পর থেকে সে আমাদের আগেই আড্ডাস্থলে চলে আসত । আমরা দেরিতে আসলে উল্টা বকা বাদ্য করত । পরের বছর ওই বন্ধু মেডিকেল ছেড়ে মেরিনে । বহু বছর পর দেখা হয় সিডনিতে । স্মৃতি চারন করতে গিয়ে বলে সেই আড্ডার দিন গুলি ছিল তার টার্নিং পয়েন্ট।
জীবন ভ্রমন ১৮ : কথায় আছে অলস মস্তিস্ক শয়তানের চাবি কাঠি । ১৯৮১ সালে এইচ এস সি পাস করার পর প্রায় ৩ বছর এরশাদ ভেকেসনে কেটেছে । এই সময় অনেকটা সময় পার করেছি কার্ড খেলে । এক সিনিয়র বন্ধু আমাদের স্মোকিং পার্টনার ছিল । তার কাছ থেকে কার্ড খেলা শিখেছি । স্পেধ ট্রাম , ব্রে , 29 ইত্যাদি । এর পর কম কার্ডের খেলা- নাইন কার্ড , থ্রি কার্ড । এই গুরুর কথা সব সময় মনে পরে । এলাকা ত্যাগ করার পর আর কখনো দেখা হয় নি ।
একদিন ঢাকা কলেজের দুই বন্ধু আর আমরা নটরডেম কলেজের ৩ বন্ধু মিলে ৯ কার্ড খেলছিলাম । হঠাৎ বন্ধু JK বলল আমাকে এখন যেতে হবে । আমরা বললাম তুই শালা প্রতিদিন জিতে চলে যাস । JK প্রায় সব সময় জিততো । আর আমি উল্টোটা । আমরা বললাম চার হাত লসে আছি । তুই যেতে পারবি না । JK বলল ” ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন , এই দেখ সব কাগজ পত্র , শেরেবাংলা নগরে এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউটে যেতে হবে ” ।
আমরা দুই জন বললাম এইটা কোথায় । কয়েকটা গালি দিয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কুইক করে দেখে নিলাম । আর বললাম ” শালা জুয়ার পয়সা দিয়া ফর্ম জমা দিবি , চান্চ পাবি না “। আমরা তিন জন একটা বেবি ট্যাক্সি নিয়ে রওয়ানা দিলাম । ফর্ম জমার সময় স্যার বলল “তোমার অরিজিনাল মার্ক সিট কোথায় , টোটাল স্কোর চেক করতে চাই ” । বললাম “স্যার DU তে সায়েন্চ ফেকাল্টিতে জমা আছে , এখানে চান্চ পাইলে ওখানে ভর্তি বাতিল করে দিব ” । স্যার বলল মুচলেকা দিয়া যাও ।
লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষা । সেই স্যার ইন্টারভিউ বোর্ডে আছে । আবার অরিজিনাল মার্ক সিট দেখতে চেয়েছে । আমার হার্ট বিট বেড়ে যায় । “তুমিত DU তে ক্লাস শুরু করেছ , প্রায় ৮ / ৯ মাস হয়েছে , আসতে চাও কেন “। প্রশ্ন কমন পড়েছে । অবশেষে নাইন কার্ড খেলা থেকে উঠে আসা তিন জনের মধ্যে আমি একাই চান্চ পাই । এই জন্য বন্ধু JK কে অনেক বার চা বিড়ি খাওয়াতে হয়েছে ।
তাসে নাকি নাস । ওই দিন কার্ড না খেললে হয়ত এগ্রিকালচাল সাইন্স পড়া হতো না। DU তে একদিন টিএস সির কেন্টিনের পিছনে ফেন্সের ভিতরে বসে বিকালে ৫ জন নাইন কার্ড খেলছে । আর আমি সহ কয়েক জন পাশে বসে বসে দেখছি । এক পর্যায়ে আমি ঘাসের উপর ঘুমিয়ে পড়ি । হঠাৎ ৫ টার দিকে কিছু আর্মি টিএসসিতে ঢুকে পরে ।
আমরা ফেন্সের ভিতর থাকার কারণে দেখতে পাই নাই । সাথে টিএসসির ডিরেক্টর ছিলেন । ” এই তোমরা এইখানে কি কর ” । সবাই কিচেনের পিছন দিয়ে দৌড়ে পালালো । আমরা দুই জন মাথা নেড়ে উঠতেই ধরা । কয়েটা কার্ড এবং কয়েকটা টাকা সামনে পড়েছিল ।
“ডিরেক্টর স্যার বলল don’t রান, গেট খুলে এইখানে আসো , কোন ডিপার্টমেন্টে পড় ?” । পোষাক পরা একজন বলে উঠলো মনে হয় জুয়া খেলছে । আমি বললাম “স্যার আমি আর জুবায়ের (স্যারের ছেলে ) এক সাথে পড়ি , দুইটার পর কার্জন হলে কোনো ক্লাস ছিল না , তাই লাঞ্চ এর পর গল্প করতে ছিলাম ” ।
স্যার বললেন তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাও । বের হযে দেখি কযেক ট্রাক আর্মি টিএসসির সামনে । কোনো রকম সরওযারর্দি উদ্দানে এসেই দৌড় , কাকরাইল হয়ে বাসায় । ঐ দিন সান্ধা আইন জারি হয়েছিল । আমি প্রায় টিএসসিতে যেতাম ৬ টাকা দামের বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য, আর আর্টস ফাকালটির বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য ।
তারিখ ঠিক আমার মনে নেই । সেই দিন ছিল DU তে আমার শেষ ক্লাস । বন্ধু দের বললাম আর হয়ত ক্লাস করার জন্য আসতে হবে না । আজ ৫ টার মধ্যে আমাকে এগ্রিকালচারে ভর্তি হতে হবে । পকেটে ভর্তির টাকা সহ ৫০০ টাকা । বন্ধু হ্যাপি বলল চল মহসিন হল হয়ে চলে যাবো । নামটা মনে নেই । বেস্ট বয় অফ ইকোনমিকস । তার রুমে গিয়ে দেখি কয়েক জন থ্রি কার্ড খেলছে ।
কয়েক জন সমস্বরে বললে “দোস্তরা বসে পড় , পরে জায়গা পাবা না “। আমি বললাম ” আজকে হারলে খবর আছে , ভর্তির পয়সা ” । ওভার হিটের খেলা । ৭ হাত খেলছে । শেষে আমরা দুই জন হিট দিচ্ছি । আমি পেয়েছি সাহেবের পেয়ার । আমার পিছনে পরিচিত হলের একজন বসে ছিল । সে অপর হাতকে সিগনাল দিয়ে বুজিয়ে দিয়েছে আমার হাতে কি আছে ।
সে তিন গুন ওভার হিট করলো । আমি আর শো করার সাহস পেলাম না । আমি ছেড়ে দিলাম । পরে দেখলাম শুধু টেক্কা দিয়ে ধাপ্পা মেরে নিয়ে গেল পুরো তিন চারশ টাকার বোর্ড । এক বন্ধু ওই ছেলেকে বলল তুমি কাজটা ঠিক কর নি । আমি বললাম ” তুমি শালা পিছনে বসে এই কাজ করছ ” । আর আমাকে দুই বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে ৫ টার মধ্যে ভর্তি হতে হয়েছে ।
Related Articles
আজ আমাদের আম্মা শহীদ জননীর জন্মদিন
ফজলুল বারী: শহীদ জননীকে আমাদের প্রজন্মের সাংবাদিকরা সবাই আম্মা ডাকতাম। তাঁকে আমাদের সবার আম্মা ডাকার বিশেষ একটি কারন ছিল। শহীদ
প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী শামিম আরা নিপা’ ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস-এর উপস্থিতেতে সিডনিতে ট্যালেন্ট শো
কাজী সুলতানা শিমিঃ প্রতিভা অন্বেষনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্ম বাংলা সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে যেন শিকড় হিসেবে ধারণ
Kothoker 'Chetonay Rabindranath'
রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষে কথক:‘চল তোরে দিয়া আসি সাগরের জলে’ দিলরুবা শাহানাকবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম বা সার্ধশততম জন্মদিন উদযাপন নিয়ে নানা উৎসব