জীবন ভ্রমন  ১৭, ১৮ :

by Anamul Bhuiyan Mukul | August 10, 2015 11:20 am

 

জীবন ভ্রমন ১৭ :  ধুম পান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর । একবার রাস্তার পাশে এই রকম একটা লেখার নিচে  দাড়িয়ে এই অস্বস্তিকর কাজটি করছিলাম ।  পরিচিত এক লোক এসে বলল আগুন আছে । সিগারেটটি বাড়িয়ে দিলাম । উনি  কোনো কথা না বলে ফুকতে ফুকতে হাটা ধরলেন । বললাম ভাই কি ব্যাপার । উপর দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল , এক সাথে দুইটা অন্যায় করা যায় না । একটা কাজ আমারে করতে দে । বুজলাম উনার পকেটে খুচরা পয়সা নাই ।

এক বন্ধুর কাছ থেকে ধুমপান শিখি । সব কিছুর জন্য গূরু লাগে । বন্ধু আমাকে কিভাবে ধুয়া গিলে আবার নাক দিয়ে বের করতে হয়, কিভাবে গোল করে ছাড়তে হয় ইত্যাদি শিখিয়েছে   ।  আবার বলত “এইটা আমার ইনভেস্টমেন্ট “। বললাম কিভাবে ।  “তুই যখন কিনবি তখন  আমি তোরটা শেয়ার করতে পারব , আর সিগারেট গুরু হিসাবে নিশ্চয়  আমার জন্য দুই একটা কিনবি ” । হিসাবটা একেবরেই সহজ সরল  এবং সত্য ।

আমি যখন  ফুকতে শিখি তখন সিজার ছিল ২০ পয়সা আর ষ্টার  ছিল ১৫ পয়সা । আমার ডেবু হয় সিজার সিগারেট দিয়ে । তারপর কাপ্স্টান । তখন দাম ছিল ৪০ পয়সা । ষ্টার  আমি কখনো টান দিতে পারতাম না । বন্ধু বলত  ” ষ্টার  টানতে পারছ না , তোর জীবন ১৬ আনাই মিছা ” ।  একবার কোনো এক কারণে এক ক্লাস মেট আমাকে এক প্যাকেট কাপ্স্টান  সিগারেট দিয়েছে  । বলতে পারেন এক ধরনের  ঘুষ ।

আমি প্যাকেটটি দক্ষিনা হিসাবে আমার সিগারেট গুরুকে হস্তান্তর করি । বললাম তোর investment  এর interest ।  উত্তরে বলল ” শালা এক শলা সিগারেট কিনা খাওয়ার যে মজা তা নস্ট করে দিলি , দিয়াশলাই আনছস ! “।

আমাদের এক বন্ধু ছিল । তাকে  এখন মাঝে মাঝে  বাংলা নাটকে দেখা  যায় । তার একটা টেকনিক ছিল । সে ১০ পয়সা দেখিয়ে বলত ”  দোস্ত ৫ পয়সা short  আছে , দেখত  পকেটে  ৫ পয়সা আছে  কিনা ”  ।  এইভাবে  তিন জনের কাছ থেকে ১৫ পয়সা collection  করে একটা  ষ্টার  সিগারেট ।

বন্ধুর  ওই ১০ পয়সার কয়েন কখনো শেষ হত না । একদিন আমরা confirm  হওয়ার  জন্য ৫ পয়সা দেওয়ার আগে ১০ পয়সার কয়নে একটু মার্ক করে দিলাম । পরের  দিন বিকালে  ওই একই  কয়েন । হাসাহাসির  পর বলত ” ওই শালারা , বাপের কাছে কি বিড়ির পয়সা চাওয়া যায় ! ,  ১৫ পয়সা চাইলে তো তোরা  আবার চোখ কপালে  তোলছ ! “।

একদিন  সন্ধ্যায়  আমরা কয়জন এলাকার মাঠে  বসে আড্ডা দিচ্ছি । হঠাথ এক বন্ধু এসে হাজির । সে চিটাগং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছে  মাত্র । মন খুব  খারাপ । জিগ্গেস কলাম কি হইছে MM  ( স্কুলে ওর টাইটেল ছিল MM)। উত্তর ” আমার মনে হয় মেডিকেলে পড়া  হবে না , আমি তিন মাস পার করতে পারি নাই , হলে  থাকতে খুব অসুবিধা হয় ” । আমরা জানতাম ওর   এক  ধরনের OCD এর কথা ।

আমি বললাম  তোর টাইটেলের  দ্বিতীয়  M থেকে  বের  হয়ে আসতে হবে । ইউনিভার্সিটি  এক মাস বন্ধ  । এইটা তোর  ট্রেনিং পিরিয়ড ।  রাজি আছস কিনা বল । বলল “আমি রাজি” । এখন থেকেই তোর ট্রেনিং । আমরা  একটা সিগারেট ধরলাম । তিনজন   কয়েক টান দেওয়ার পর  বললাম এইবার তুই টান ।  খুব  করুন সুরে বলল , “এইটাই খাইতে হইবো মামা , নতুন একটা ধরাই ” । আমরা বুজিয়ে বললাম না । ধম বন্ধ করে ফুকতে থাকলো ।

ওই সন্ধায়  দ্বিতীয়  লেসন ।   পাশেই একটু গোবর পরে ছিল । বললাম “সেন্ডেল দিয়ে এইটা মাড়াবি , গোবর তোরে খাইবো না, তারপর ওই পানির কলে গিয়ে সেন্ডেল পরিস্কার  করবি “। এর  পর থেকে সে আমাদের আগেই আড্ডাস্থলে  চলে  আসত । আমরা দেরিতে আসলে উল্টা  বকা বাদ্য করত । পরের  বছর  ওই বন্ধু মেডিকেল ছেড়ে মেরিনে । বহু বছর পর দেখা হয় সিডনিতে ।  স্মৃতি চারন করতে গিয়ে বলে সেই আড্ডার  দিন গুলি ছিল তার টার্নিং পয়েন্ট।

 

জীবন ভ্রমন ১৮ : কথায়  আছে অলস মস্তিস্ক শয়তানের চাবি কাঠি । ১৯৮১ সালে এইচ এস  সি  পাস করার পর প্রায় ৩ বছর এরশাদ ভেকেসনে  কেটেছে । এই সময় অনেকটা সময় পার করেছি কার্ড খেলে । এক সিনিয়র বন্ধু আমাদের স্মোকিং পার্টনার ছিল । তার কাছ থেকে কার্ড খেলা শিখেছি । স্পেধ ট্রাম , ব্রে , 29  ইত্যাদি । এর পর কম কার্ডের খেলা- নাইন  কার্ড , থ্রি কার্ড । এই  গুরুর কথা সব সময় মনে পরে । এলাকা ত্যাগ করার পর আর কখনো দেখা হয় নি ।

একদিন  ঢাকা  কলেজের  দুই  বন্ধু  আর আমরা  নটরডেম  কলেজের  ৩ বন্ধু  মিলে  ৯ কার্ড খেলছিলাম  । হঠাৎ   বন্ধু  JK  বলল আমাকে এখন যেতে হবে । আমরা বললাম তুই শালা প্রতিদিন জিতে চলে যাস । JK  প্রায় সব সময় জিততো । আর  আমি উল্টোটা । আমরা বললাম চার  হাত লসে আছি । তুই যেতে পারবি না । JK  বলল ” ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন , এই দেখ সব কাগজ পত্র , শেরেবাংলা নগরে  এগ্রিকালচার   ইনস্টিটিউটে যেতে হবে ” ।

আমরা দুই জন বললাম এইটা কোথায় ।  কয়েকটা গালি দিয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কুইক করে দেখে নিলাম । আর বললাম  ” শালা জুয়ার  পয়সা দিয়া ফর্ম জমা দিবি , চান্চ  পাবি  না “। আমরা  তিন  জন একটা বেবি ট্যাক্সি নিয়ে রওয়ানা দিলাম । ফর্ম জমার সময় স্যার বলল “তোমার অরিজিনাল  মার্ক সিট কোথায় , টোটাল  স্কোর চেক করতে চাই ” । বললাম “স্যার DU তে সায়েন্চ ফেকাল্টিতে  জমা আছে , এখানে  চান্চ  পাইলে ওখানে ভর্তি বাতিল করে দিব ” । স্যার বলল মুচলেকা দিয়া যাও ।

লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষা । সেই স্যার ইন্টারভিউ  বোর্ডে আছে । আবার অরিজিনাল মার্ক সিট দেখতে  চেয়েছে । আমার হার্ট বিট বেড়ে যায়  । “তুমিত DU  তে ক্লাস শুরু করেছ , প্রায় ৮ / ৯ মাস হয়েছে ,  আসতে চাও কেন “। প্রশ্ন কমন পড়েছে  । অবশেষে নাইন  কার্ড খেলা থেকে উঠে আসা তিন জনের মধ্যে আমি  একাই চান্চ  পাই । এই জন্য বন্ধু JK  কে অনেক বার চা বিড়ি  খাওয়াতে  হয়েছে ।

তাসে নাকি নাস । ওই দিন কার্ড না খেললে  হয়ত এগ্রিকালচাল  সাইন্স পড়া হতো না। DU তে  একদিন টিএস সির কেন্টিনের  পিছনে ফেন্সের ভিতরে বসে বিকালে ৫ জন নাইন কার্ড খেলছে । আর আমি সহ কয়েক জন পাশে বসে বসে দেখছি  । এক পর্যায়ে আমি ঘাসের উপর ঘুমিয়ে পড়ি । হঠাৎ  ৫ টার  দিকে কিছু আর্মি টিএসসিতে  ঢুকে পরে ।

আমরা ফেন্সের ভিতর থাকার কারণে দেখতে পাই নাই । সাথে  টিএসসির  ডিরেক্টর ছিলেন ।  ” এই তোমরা এইখানে কি কর ” । সবাই কিচেনের পিছন দিয়ে দৌড়ে  পালালো । আমরা দুই জন  মাথা  নেড়ে  উঠতেই ধরা ।  কয়েটা  কার্ড  এবং কয়েকটা টাকা সামনে  পড়েছিল  ।

“ডিরেক্টর  স্যার  বলল don’t  রান,  গেট খুলে এইখানে আসো , কোন ডিপার্টমেন্টে  পড় ?” । পোষাক  পরা  একজন বলে উঠলো মনে হয় জুয়া খেলছে । আমি  বললাম “স্যার আমি আর জুবায়ের (স্যারের ছেলে ) এক সাথে পড়ি , দুইটার পর কার্জন হলে কোনো ক্লাস ছিল না , তাই লাঞ্চ এর পর গল্প করতে ছিলাম ” ।

স্যার বললেন তাড়াতাড়ি  বাসায়  চলে যাও ।    বের হযে দেখি কযেক ট্রাক  আর্মি টিএসসির  সামনে । কোনো  রকম সরওযারর্দি উদ্দানে  এসেই দৌড় , কাকরাইল হয়ে  বাসায় । ঐ দিন   সান্ধা আইন জারি  হয়েছিল । আমি প্রায়  টিএসসিতে  যেতাম ৬ টাকা দামের  বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য, আর  আর্টস ফাকালটির বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য ।

তারিখ ঠিক আমার মনে নেই । সেই দিন ছিল DU  তে  আমার  শেষ  ক্লাস  । বন্ধু দের বললাম আর হয়ত ক্লাস করার জন্য আসতে  হবে না । আজ ৫ টার মধ্যে আমাকে এগ্রিকালচারে  ভর্তি হতে হবে । পকেটে ভর্তির টাকা সহ ৫০০ টাকা । বন্ধু হ্যাপি বলল চল মহসিন হল হয়ে চলে যাবো । নামটা মনে নেই । বেস্ট বয় অফ ইকোনমিকস । তার রুমে  গিয়ে দেখি কয়েক জন থ্রি কার্ড খেলছে ।

কয়েক জন সমস্বরে বললে “দোস্তরা বসে পড়  , পরে জায়গা পাবা না “। আমি বললাম ” আজকে হারলে খবর আছে , ভর্তির পয়সা ” । ওভার হিটের খেলা ।  ৭ হাত খেলছে । শেষে আমরা দুই জন হিট  দিচ্ছি । আমি  পেয়েছি সাহেবের পেয়ার ।  আমার পিছনে পরিচিত হলের একজন বসে ছিল । সে অপর হাতকে সিগনাল দিয়ে বুজিয়ে দিয়েছে আমার হাতে কি আছে ।

সে তিন গুন  ওভার হিট করলো । আমি আর শো করার সাহস পেলাম না । আমি ছেড়ে দিলাম । পরে দেখলাম শুধু টেক্কা দিয়ে ধাপ্পা মেরে নিয়ে গেল পুরো তিন চারশ টাকার বোর্ড । এক বন্ধু ওই  ছেলেকে বলল তুমি কাজটা ঠিক কর নি । আমি বললাম ” তুমি শালা পিছনে বসে এই কাজ করছ ” । আর আমাকে দুই বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে ৫ টার মধ্যে ভর্তি হতে হয়েছে ।

 

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2015/%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%a8-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a8-%e0%a7%a7%e0%a7%ad-%e0%a7%a7%e0%a7%ae/