জীবন ভ্রমন ১৩ , ১৪ :

জীবন ভ্রমন ১৩ , ১৪ :

জীবন ভ্রমন ১৩ : জীবন চলার পথে যার সাথে রিদয়ের বন্দন থাকে তাকে বন্ধু বলে । একদিন  স্কুলের টিচার্স রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম । ভিতর  থেকে “এই হলদে পাখি” বলে ঢাক পড়ল । আমার একটা হলুদ প্রিন্ট এর শার্ট ছিল ।  পছন্দের ছিল বলে মাঝে মাঝে স্কুলে পরতাম । তাই ওই স্যার আমাকে হলদে পাখি বলতে ডাকতেন ।

ডাক শুনে আমি ভিতরে যাই । স্যার বললেন কাল বিকালে কোথায় ছিলি ।  উত্তর  দেই ।  আবার প্রশ্ন – সাথে ওই ছেলেটা কে ছিল । বললাম আমার এক বন্ধু । ওই সময় তোর হাতে কি ছিল । স্যার বেত হাকিয়ে বলল আর খাবি ! রুমে বসা  কয়েক জন শিক্ষক দেখছিল । তারপর বলল ,  ঠিক  আছে  মাপ করবো যদি  বন্ধুর  সংগা  বলতে পারিস ।  উত্তরে  বললাম “জীবন চলার পথে যার সাথে রিদয়ের বন্দন থাকে তাকে বন্ধু বলে ” ।

স্যার বলল এই সংগা পাইলি কই ? উত্তর দিলাম আপনার চটি বইতে । স্যার ক্ষেপে গিয়ে বললেন চটি বই মানে !! ঘুরিয়ে বললাম স্যার আপনার লেখা পাতলা বইতে । ” ও তাহলে বইটা পড়েছিস ” এই বলে বিদায়  দিল । “আর যেন হাতে কোনো আগুন না দেখি “। জ্বী স্যার বলে বিদায় নিলাম ।

স্বাধীনতার পর এক সময় লম্বা চুল রাখার স্টাইল আসে ।  আর এইটা মুরুব্বি ও হুজুর শ্রেনীর লোকের চক্ষু শূল ছিল । এক বছর  আব্বার  সাথে বনিবনা করে ঈদের  পর চূল কাটবো বলে  কথা হয় । ঈদের পর  চূল না কেটে স্কুলে যাই । আবার  টিচার্স রুমের ভিতর থেকে “হলদে পাখি” বলে ডাক পড়ল ।  ওই একেই স্যার পকেট থেকে ৫ টাকা বের করে দিয়ে বলল দোকানে  গিয়ে চুল কেটে আয় ।

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম । কোন  উত্তর দিতে না পেরে হাতে ৫ টাকা নিয়ে বের হয়ে গেলাম । কিছুক্ষণ  পর আবার অনুমুতি নিয়ে রুমে ঢুকলাম । বললাম স্যার আব্বা বলেছে এই শুক্রবারে চুল কাটতে নিয়ে যাবে । স্যারের ছেলে আমাদের সাথে পড়ত । রাজীব কে  বললাম তোর বাপে  আজ আমারে ডুবাইছে । উত্তরে রাজীব বলল ” আব্বা  তোরে পছন্দ করে , টাকাটা ফেরত দিছস কেন , টিফিন টাইমে খাওয়া যেত ”  ।

বাসায় গিয়ে আব্বাকে ঘটনাটা বলি । আর যাই কই । সাথে সাথে ফকিরাপল বাজারের  সামনের   রাস্তায়  আমতলায় গিয়ে বাটি চাট । পরের দিন ইংলিশ ক্লাসে স্যার কাছে এসে বলল ” পরিপাটি চুল ” ইংলিশে অনুবাদ কর । বললাম ” hair  with small  head ” । সাথে সাথে “কি বললি ”  বলে ধমক । আমি  সরি  বলে ঘুরিয়ে বললাম  head with small hair  । স্যার বললেন it  is  tidy  hair । মনে মনে বললাম কচু  , it  is  ন্যাড়া মাথা ।

 

জীবন ভ্রমন ১৪  : হাই স্কুল থেকে টুকটাক  পত্রিকা পড়তাম । তখন ফুট বল ও সিনেমার খবর ছাড়াও কিছু রাজনৈতিক খবর পড়তাম । বিশেষ করে বঙ্গ বন্ধুর দেশে ফেরার পর থেকে উনার ছবি সহ   যে কোনো খবর , বেওয়ারিশ লাশের খবর , রাজনৈতিক হাঙ্গামা ও কিলিং এর খবর ইত্যাদি পড়তাম । আজ অবদি এই অভ্যাস রয়ে গেছে ।

প্রথম রাজনৈতিক পদাচারণ ঘটে রেসকোস  ময়দানে  । দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধুর প্রথম পাবলিক স্পিচ । স্কুল থেকে লাইন ধরে পায়ে হেটে আসা যাওয়া । দুইটা ললি ( গোল চকলেট ) পেয়েছিলাম । বলা  যায় প্রথম রাজনৈতিক উপঠৌকন ।

এলাকায় মঞ্জু নামে এক ভাই থাকতেন । জাসদ করতেন । সালটা ঠিক আমার মনে নাই । উনি জাসদের মিটিং এর জন্য মাইকিং করছেন । কিন্তু  পুলিশের ভয়ে রাজারবাগ শান্তিনগর  এলাকায় যেতে পারছেন না । আমরা দুই জন কলোনির গেটে দাড়িয়ে টং দোকান থেকে কিছু একটা খাচ্ছিলাম । উনি কাছে এসে বললেন মাইকিং করতে পারবি ! এইখান থেকে শান্তি নগর মোড় পর্যন্ত যাবি আর আসবি । আর ফেরত এসে দুই টাকা দিয়া সিঙ্গারা খাবি ।

আমরা মাইক হাতে পাব এই খুশিতে রাজি হয়ে গেলাম । লিফলেট হাতে  নিয়ে বলতে লাগলাম – ” ভাইসব  ভাইসব ……..ঐতিহাসিক বায়তুল মোকারম প্রাঙ্গনে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হইইইইয়াছে …..উক্ত জনসভায় বক্তিতা করিবেন …..” । তখন  শুধু  ভাইরা  মিটিং এ দাওয়াত পেত । পুলিশ লাইন এর গেট পার হয়ে শান্তিনগর মোড়ের কাছাকাছি যেতেই  পুলিশের ভ্যান এসে রিক্সা থামালো ।

পুলিশের জেরার মুখে ঘটনা খুলে বলি । এক পুলিশ জিগ্গেস করলো সিঙ্গারার টাকা পাইছস । বললাম – না , মঞ্জু ভাই হোটেলে বলে দিছে । অর্থাৎ  oral credit note । বিশ্বস্ততার  প্রতিক ।  গ্রামের এক দাদার  কাছ থেকে শুনেছি পুরানো দিনে নাকি গাছের পাতা দিয়ে বায়না করত ।  কান ধরে  তওবা করার  পর  পুলিশ ছেড়ে দিল । আর রিক্সা সমেত মাইক থানায় নিয়ে গেল । বলা যায় প্রথম পলিটিকাল পুলিশের ধাক্কা ।

একবার বায়তুল মোকারম প্রাঙ্গনে  বাদাম খেতে খেতে  এক বক্তিতা শুনছিলাম । ঐ  জাযগায কয়েক শত লোক এমনিতেই ঘুরাফেরা করে  । মনে  হয় মিটিং  এর লোক  । সম্ভবত   ন্যাপ  ভাসানীর কেও একজন বক্তিতা করছিলেন । মঞ্চের সামনে ৭০ / ৮০ জন লোক  বসা ।  তিনি বলছিলেন ” বহু বছর ধরে এইখানে বক্তিতা করছি , লাভ হইছে শুধু ওই চিনা বাদাম ওয়ালার ” ।


Place your ads here!

Related Articles

Festival of Durga Puja Fills My Heart With Sorrow

Durga Puja is the most important festival for Bengali and the most important Hindu religious festival in Bangladesh and West

Tourism in Bangladesh and Image Building Mechanism

Tourism is one of the most promising and progressive forms of thriving factor to build up the socio-economic status and

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment