জীবন ভ্রমন ১১ , ১২
জীবন ভ্রমন ১১ : শনিবার । রোজার সকাল । একটু বাংলা টিভি দেখতে বসলাম । সবজির বাজার দরের উপর ৭১ টিভির লাইভ রিপোর্ট । গতানুগতিক ভাবেই ইফতার আইটেমের দাম দুই থেকে তিন গুন বেড়েছে । যারা কর ফাকি দিয়ে অথবা অবৈধ ভাবে টাকা আয় করছে তাদের জন্য হয়ত ঠিক আছে । পরক্ষভাবে তাদের অবৈধ টাকা কিছুটা মার্কেটে রলিং হচ্ছে । কিন্তু যারা সীমিত আয়ের উপর নির্ভরশীল তাদের কথা । তারা হয়ত সংযমের কথা বলে অত্নাতৃপ্তি পাবে । কিন্তু তাদের মনোকস্টের অভিশাপ কেউ বনধ করতে পারবে না ।
এই মূল্য বৃদ্ধি ফিক্সড আয়ের মানুষের জন্য যে কি যন্ত্রনা তা বলার অপেক্ষা রাখে না । ছোট কাল থেকেই আমি কাঁচা বাজারে যেতাম । তখন এত রেফ্রীজারেটর ছিল না । মোটামুটি ৩০ দিনই বাজারে যেত হত । ফিক্সড আয়ের সংসারে মা-দের ধৈয্য আল্লাহ নিজ হাতে দিয়েছেন । তাদেরকে প্রতিদিনের খাওয়ার জন্য অনেক পারমূটেশন- কম্বিনেশন করতে হয় ।
সায়েস্তা খার আমলে টাকায নাকি ১৬ মন চাল পাওয়া যেত । আর ৭২ / ৭৩ সালে ২ টাকার মাছ আর ১ টাকার তরকারী কিনলে মোটামুটি এক দিন চলে যেত । ৫ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে একটু ভালো মাছ তরকারী কিনা যেত । ১০-১৫ টাকা হলে মাছ মাংস কেনা যেত । আয় ব্যয় এর মধ্যে কিছুটা ব্যালান্স ছিল । ৭৪ সাল থেকে হঠাৎ গজব শুরু হয়ে গেল । সেই গজবের রেশ এখন ও চলছে । বিনা কারণেই দাম বেড়ে যায় ।
বঙ্গবন্ধু কসকর ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু করেও কন্ট্রোল করতে পারে নাই । কিছু লোকের পকেট ভারী হয়েছে মাত্র । এইসব রেশন ও ন্যায্য মূল্যের দোকান নিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা । একদিন স্কুল ড্রেস এর জন্য সাদা ( লং ক্লথ ) কাপড়ের লাইনে ৪ /৫ ঘন্টা দাড়িয়ে থাকার পর কপালে জুটে নাই । হটাৎ দোকান বন্ধ করে দিত । প্রকাশ্যে মানুষের হক নিয়ে কালো বাজারের প্রচলন শুরু । কথায় আছে – পাতা চুরি , লতা
চুরি , তারপর রাজার হাতি চুরি । তাই হচ্ছে এখন ।
ঘুষ দাতা ও ঘুষ খোর উভয়ে নাকি দোজখের আগুনে জলিবে । আবার ধর্মে ব্যবস্যা হালাল করা হয়েছে । কিন্তু কালোবাজারি , কমিসন বাজ , বিনা কারণে দাম বৃদ্দি কারকদের কি হবে । এরা কি শেষ বিচারের দিনেও হাদিস কালামের লুপ হোল দিয়ে পার হয়ে যাবে !!! ভয় হয় । ঢেকি সর্গে গেলেও নাকি ধান বানে । এরা ওখানে গিয়েও ফাইভ স্টার রুম মেনেজ করে নিবে ।
কয়দিন আগে মাছ রাঙ্গা টিভিতে কুইজ দেখছিলাম বন্ধু কায়সারের সুবাদে । একটা প্রশ্ন ছিল কোন অমুসলিম বেহেস্থ পাবে ? উত্তর ছিল যিনি ক্ষুধার্ত ও গরিব দুখিকে পানাহার করিয়েছেন ( যদি আমার শুনার ভুল না হয়ে থাকে ) ছোট কাল থেকে দেখছি পয়সা ওয়ালারা সময়ে সময়ে এই কাজটি করে থাকেন । আমার মনে হয় তারা এই আইনে আল্লাহর কাছে আপীল করতে পারে । আল্লাহ পরম দয়াময় ও ক্ষমাশীল ।
জীবন ভ্রমন ১2 : এই বিদেশের মাটিতেও ছোলা মুড়ি বেগুনি পিয়াজু না খাইলে ইফতার সম্পন্ন হয় না । আমার ছেলে হঠাৎ হঠাৎ কিছু প্রশ্ন করে । ছোট কালে তোমরা এইটা করছ কিনা , এইটা খাইছ কিনা । বলি আমরা তোমাদের মত এত লাকি ছিলাম না । বেশির ভাগ জিনিস আমাদেরকে শেয়ার করত হতো । তাছাড়া তোমার মত একা ছিলাম না । সাধারণত এক জনের আয়ে গড়ে ৫/৬ জনকে চলতে হতো ।
গতকাল কানাডায় বসবাসরত এক বন্ধু মেসেজ পাঠালো আমার জীবন ভ্রমণ গল্পের সুত্র ধরে । তারপর বহু দিন পর ফোনালাপ । স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলল – ” তুই তো আমাদের বাসা চিনতি । ১৯৭১ সালে বাবা পুলিশের অফিসার ছিলেন । আমাদের পরিবারের সদস্য় সংখা ছিল ৯ জন । আমাদের একটা গরু ছিল । দুধ দিত । গরুর খড়ের দাম ছিল ৫ টাকা ।
একদিন আব্বার সাথে খড় কিনতে যাচ্ছিলাম । আব্বা হঠাৎ বললেন খড় না কিনে ৩ টাকা দিয়ে একটা কাঠাল নিয়ে যাই । এতে তোমরা কাঠাল খেতে পারবা , তোমার মা বিচি দিয়ে বক্তা করতে পারবে , গরুকে কাঠালের খোসা খাওয়ানো যাবে , আর বাকি দুই টাকা নিয়ে আমি কালকে অফিসে যেতে পারবো । ”
বন্ধুর স্মৃতিচারণ শুনে আমি অনেকক্ষণ চিন্তা করতে থাকি । মেমরিকে ব্যাক ট্রাক করতে থাকি । এইটাই ছিলো ফিক্সড আয়ের বাবা মা দের ৩০ দিনের প্লান । বেতন পেয়ে আব্বা একদিন বাজারে যায় । মাছ বাজারে ডুকতেই কখন যে পকেট কাটা হয়েছে বুজতে পারে নাই । মাছের দাম দিতে গিয়ে মাথায় হাত । বিক্ষ্ন্ন মনে বাসায় ফেরত আসে । পূরো মাসের ডাল , তেল, লবন ইত্যাদির খরচ পকেট মারের কাছে ।
পাশের বাসার এক বড় ভাই ব্যাপারটি বুজতে পেরে বাজারের এক সর্দারকে ডেকে নিয়ে ঘটনাটি বলে । কিছুক্ষণ পর এক লোক এসে ওই বড় ভাই এর কাছে ৫০% টাকা ফেরত দিয়ে যায় । ততক্ষণে বাকি ৫০% ভাগাভাগি করা হয়ে গেছে । অর্থাৎ চোরের সর্দারের কাছে যা ছিল তাই ফেরত এসেছে । তখন বুঝতে পেরেছি বাগধারা- Timely attention pays a lot এর মর্মার্থ ।
আমাদের স্কুলের কোনো এক সাপ্তাহিক পরীক্ষায় এই বাগধারার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই চুরির টাকা ফেরত পাওয়ার উদাহরন টি দিয়েছিলাম । আমাদের সময় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে ক্লাসে পরীক্ষার খাতা রিভিউ করার জন্য আমাদেরকে কিছুক্ষণের জন্য দিত । আবার ফেরত নিত । এই সময় স্যার আমাকে ডেকে কাছে নিয়ে বলে – তুই তো জীবন্ত উদাহরন দিছস , কত টাকা ফেরত পাইছিলি । আমি বললাম এত পেয়েছি । বেশি দেরী করে খবর নিলে কিছুই পাইতাম না । স্যার বলল ‘যাক তাও ভালো ১০০ টাকা ফেরত পাইছস , তবে ফাইনাল পরীক্ষায় আসলে পড়া লেখার উদাহরন দিবি ‘ বললাম জ্বী স্যার, ব্যাকরণ বইতে আছে ।
Related Articles
পদ্মার সমাধি
১. পদ্মার জলে ভাসছে, পঁচছে মানব সন্তানের লাশ! এখানে ওখানে লাশ। মানুষের লাশ। তা খুবলচ্ছে রাক্ষুসে জলজ প্রাণি ও মতস্যকুল।
সিডনির অনিক এখন চিরঘুমে রকউড গোরস্তানে
ফজলুল বারী: শোকার্ত বাবা-মা-ভাই-স্বজন, সহপাঠী-বন্ধুরা চোখ ভেজানো কান্নায় শেষ বিদায় জানালেন অনিককে। মনোয়ার সরকার অনিক (২৪) । অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বুকে
প্যারিসের চিঠি – ৪ ওয়াসিম খান পলাশ
আটলান্টিকের পাড়ে ফ্রান্সের নরমন্ডির একটি শহর। জুলাই মাসে প্যারিসে পিকনিকের হিড়িক পড়ে যায়। এমনিতেই সামারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। যেন তর