ধর্মে বিশ্বাস আছে কি নেই – দ্বায় আপনাকে নিতেই হবে

ধর্মে বিশ্বাস আছে কি নেই – দ্বায় আপনাকে নিতেই হবে

আমার ক’জন ভাল বন্ধু, যারা আমাকে বেশ ভালবাসেন, তারা আমাকে অনুরোধ করেছেন, ড: অভিজিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছু না লেখার জন্য। ভেবেছিলাম, ঠিক আছে, লিখব না – কি হবে এ সব নিয়ে লিখে? কিন্তু যতই সময় যাচ্ছিল, ততই, বিবেকের দায়বদ্ধতার কাছে হেরে যাচ্ছিলাম।

কথা বলার স্বাধীনতা। বিষয়টা যে কি, এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। কিছু কথাকে বলতে দেয়া, না কি সব রকম কথাকে বলতে দেয়া? কথা বলার স্বাধীনতায় কি নিজের বিশ্বাসকে বলার স্বাধীনতা আছে? অদ্ভুত এক পৃথিবীতে বাস করছি আমরা। মূর্খরা ঠিক করে, লেখকরা কি লিখবেন, কি লিখবেন না, কি বলবেন, কি বলবেন না!

২৯ জুলাই ২০১৪, ড: অভিজিত রায়ের ফেইসবুক স্টাটাস ছিল “আমি নাস্তিক। কিন্তু আমার আশে পাশের বহু কাছের মানুষজন বন্ধু বান্ধবই মুসলিম। তাদের উপর আমার কোন রাগ নেই, নেই কোন ঘৃণা। তাদের আনন্দের দিনে আমিও আনন্দিত হই। তাদের উপর নিপীড়ন হলে আমিও বেদনার্ত হই। প্যালেস্টাইনে বা কাশ্মীরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য বোধ করি না। অতীতেও দাঁড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবো। এটাই আমার মানবতার শিক্ষা। // এই দিনে একটা আনন্দের খবর দেই। আমার ‘বিশ্বাসের ভাইরাস ‘ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বেরিয়ে গেছে। আজ নয়, প্রায় দুই মাস হল। ফেসবুকে আসা হয় না। তাই খবরটাও দেয়া হয়নি। // “অবিশ্বাসের দর্শন” বইটারও নতুন সংস্করণ বেরুচ্ছে সামনে। এটি হবে বইটির তৃতীয় সংস্করণ। // আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বই বেরুতে চলছে অধ্যাপক মীজান রহমানের সাথে – “শূন্য থেকে মহাবিশ্ব” সামনেই বেরুবে। // পাঠকদের সবাইকে ঈদের শুভেচছা। ঈদ মুবারক।”

একটু খেয়াল করলেই বুজতে পারবেন, (সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই লিখছি) প্রয়াত ড: হুমায়ুন আজাদের সাথে ড: অভিজিত রায়ের পার্থক্যটা কোথায়। তিনি অন্যের বিশ্বাসকে কখনও অসম্মান করেননি। একই সাথে – মন, মুখ, এক রেখেই তাঁর লেখনিতে লিখে গেছেন সব সময়ই। কোন প্রকার হিপোক্রেসি ছিল না কোথাও। গবেষক হিসাবে যা বিশ্বাস করতেন, তাই লিখতেন, বলতেন। বলতেই পারেন, তিনি তাঁর বিশ্বাসের যায়গা থেকে। আমার মনে হয় – সত্যিকারের লেখকের দায়বদ্ধতা এখানেই, এটাই একজন লেখকের মাপকাঠি।


আমি ব্যক্তিগত ভাবে কয়েক জন লেখককে চিনি, যাঁরা মুখে বলেন এক, লেখেন আরেক, মনে আরেক। এঁরাই আমাদের মুখ উজ্জল করেন – নানা কারনে। চরমপন্থী ধ্যান ধারনার কিন্তু লেখেন খুবই আধুনিক ধারায়। দীর্ঘ দিন না মিশলে ওদের মুখসের নিচের মানুষকে চেনা সহজ নয়। ইদানিং আমরা ধর্মান্ধতার চরম পর্যায়ে বসবাস করছি। বসবাস করছি এমন এক সময়ে – যখন এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকের উপর বিশ্বাস করতে পারছেন না আর। যেন কোন ভাবে, এ অন্ধকার সময়টা পার করে চলেছেন সবাই। কিন্তু বিষয়টা কি এতই সহজ?

মুক্তমনা ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের খুনের নিউজটি পড়ুন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ফেসবুক পেজ এ। হাজার ছয়েক লাইক আর হাজার খানেক কমেন্ট আছে। কমেন্টের মাঝে খুজে পাবেন এক অন্যরকম বাংলাদেশ। সেটিই হয়ত আসল বাংলাদেশ। লিখেছেন – তাসলিমা মিজি

বাংলা মায়ের দামাল ছেলে আবীর হাসান লিখেছেন, “আল্লাহু আকবার কাবিরা…. খবরটা শুনে এতো ভালো লাগতেছে যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না,, নাস্তিকদের মারার জন্যে এখনো বাংলাদেশে অনেক মুসলিম ভাইয়েরা আছেন.. যেই সব মুজাহিদ ভাইয়েরা এই কুত্তাকে মেরেছেন তাদেরকে সালাম এবং স্যালুট।

রিপন খান লিখেছেন, “ রাসুলের অপমানে যদি কাদে না তোর মন মুসলিম নয় নাস্তিক তুই আল্লাহর দুশমন । যারা এই মহৎ কাজটা করেছেন আল্লাহ তাদের হেফাজত করুন আমীন।

তাসলিমা মিজি তাঁর ফেইসবুক স্টাটাস এ লিখেছেন – এত জঞ্জাল জমেছে দুয়ারে, অধর্মের ব্যাঙের ছাতারা রীতিমত একটা জঙ্গল তৈরী করে ফেলেছে। এই আগাছা সরাবে কে?

ধন্যবাদ সুহৃদ্‌ তাসলিমা আপনার ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ফেসবুক পেজ এর উদ্ধৃতি গুলোর জন‌্য।


এখন ঘরোয়া আয়োজনে রাম, রহিম, জন’দের এক সাথে দেখা ভার, ফেইসবুকে একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, রাম’রা এক, রহিম’রা আর এক গ্রুপে। রাম’দের ঘরোয়া আয়োজনে রহিম, জন অথবা রহিম’দের ঘরোয়া আয়োজনে রাম, জন – এখন সচরাচর নয়। এটা আমাদেরই তৈরী। এই আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে, এই বিভেদ দুর করবার প্রয়োজনে। যদি, আমরা আর বর্বরতার দিকে ফিরে যেতে না চাই। যদি ধরে রাখতে চাই বাংগালীর আদি অকৃত্রিম সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে।

এই চরমপন্থী ধর্মীয় উন্মাদনার দ্বায় আমাদেরকেও নিতে হবে। এ সব আমাদেরই সৃষ্ট।

দু:খিত ড: অভিজিত রায়, আমরা, বাংলাদেশ, আপনাকে, আপনার মত প্রকাশের বিশ্বাসকে বাঁচাতে পারলাম না। যেখানেই থাকুন ভাল থাকবেন।


Place your ads here!

2 comments

Write a comment
  1. Optimist
    Optimist 27 February, 2015, 14:42

    Shahadat- what you aspire for is good, but will it ever happen? Unfortunately, religion divides the hindus and the muslims, equally. Those who escape their country to live overseas and get educated, even they are the ones creating the divide. It is a deep cancer, there is no hope.

    Reply this comment
  2. Humanity
    Humanity 28 February, 2015, 01:44

    Dear Manik Bahi.Thanks for this excellent article

    Feel good to see your positive thinking.

    But Iam not optimistic.

    Tell me why people changes when they come to these countries Australia,USA ,England etc .

    I can see changes my friends Muslim,Hindus- most of them become more religious and support religoius fundamentalist parties.but when they were in Bagldesh were secular minded.

    Likewise I have many friends from India – all most all them support fundamentalist BJP.

    when I ask them why they support BJP.

    Almost all them say there were supporter of secular congress party before but since they came to Australia they change their support to BJP.

    I wonder why ? Is there any problem in these socities?what makes them to become fundamentalist minded after coming to these secular countries.

    Reply this comment

Write a Comment