ছিটমহল নিয়ে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহার তীব্র প্রতিক্রিয়া

ছিটমহল নিয়ে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহার তীব্র প্রতিক্রিয়া

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি রাহুল সিনহা ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল সমস্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। কলকাতা বিজেপি পার্টি অফিসে ছিটমহল সম্পর্কে তিনি জানান, বাংলাদেশ আমাদের স্বাভাবিক বন্ধু। এই দুই দেশের মধ্যে কোন কৃত্তিমতা থাকা উচিত না। সেইজন্য আমরা মনে করি ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল চুক্তি কার্যকর করা উচিত। কিন্তু হিসাবগত দিক থেকে যদি আমরা বিচার করি তাহলে পুরোটাই ভারতের লোকসান। বাংলাদেশের গঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে এসেছে। উল্টোদিকে বাংলাদেশও ভারতকে অনেক সহযোগিতা করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে সরকার আছে সেই সরকার ক্ষমতায় আসুক আমরা সেটা চেয়েছিলাম। অকপটে স্বীকার করছি আজ। কারণ ভারতের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক একমাত্র এই সরকারই রাখতে পারবে। আমরা চাই বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে। পাশাপাশি দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি বজায় থাকে না।

আমি আপনাদের কাছে একটা নতুন দিক তুলে ধরছি যেটা আজ পর্যন্ত কেউ বলে নি। ছিটমহল এবং সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের সাথে সাথে আজকের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদ দমন। আগে উগ্রপন্থীরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকে পড়ত। বাংলাদেশকে তারা করিডর হিসাবে ব্যবহার করেছে। এখন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারের সহায়তায় উগ্রপন্থীরা পশ্চিমবঙ্গেই ডেরা বেঁধেছে। এখানে বসেই বাংলাদেশে আগুন লাগানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টাকা, অস্ত্র রসদ গেছে এখান থেকে। করেছে বাংলাদেশের লোক। আগে বাংলাদেশ থেকে এখানে হত। এখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে হচ্ছে। যেটা আমাদের পক্ষে উদ্বেগজনক। দুর্ভাগ্যজনক। চিন্তার বিষয়। এখানে বসেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মারার ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিরোধী দলনেত্রী খালেদা জিয়াকে মারার ষড়যন্ত্র চলছে। বর্ধমানে যে বোমা বিস্ফোরণ হল তা প্রথমে গ্যাস সিলেণ্ডার বিস্ফোরণ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির চাপে তারা স্বীকার করল সিলেণ্ডার না পেটি বোমা বিস্ফোরণ। আমাদের জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার এনআইএ তদন্ত শুরু করেছিল রাজ্য সরকারের শত আপত্তি থাকা সত্ত্বেও। আমি মনে করি যদি ভারত-বাংলাদেশ সীমানা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় তাহলে এই জঙ্গীবাদ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে হবে। তাহলে দুদেশের অপরাধীরা এপাড়-ওপাড় কোন জায়গাতেই তাদের আস্তানা গড়তে পারবে না। দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোড়ালো হবে।

যদিও এখন বাংলাদেশ আভ্যন্তরীন অশান্তিতে বিধ্বস্ত। বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের কোন্দলে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। তবুও যারা ছিটমহলে আছে তাদের মত করুণ দশা পৃথিবীর কোন নাগরিকের হতে পারে না। দুপারেরই। কোন ভোটিং সুবিধা নেই তবু তারা ভোটার। কোন নাগরিক সুবিধা নেই তবু তারা নাগরিক। আমি দুপারের ছিটমহলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছি বিভিন্ন সময়। বিভিন্ন ভাবে। অবাক হয়ে গেছি বাংলাদেশ ছিটমহলের বাসিন্দা হয়েও বাংলাদেশের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই বা ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দা হয়েও ভারতের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। একটা অদ্ভূত জীবন যাত্রা। মানুষকে অন্য দেশ দিয়ে ঘিরে রাখার কোন অধিকার আমাদের নেই। এটা অন্যায়। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, বাঁচার অধিকারে আমরা হস্তক্ষেপ করছি। মানুষ চায় স্বাধীনতা। তাকে বাড়িতে বন্দি করে রাখা বা একটা জায়গায় বন্দি করে রাখা একই ব্যাপার। আমি মনে করি ছিটমহল মানে স্থলদ্বীপ। আগে আন্দামানে জলদ্বীপে যেমন মানুষকে বন্দী রাখা হত বর্তমানে ছিটমহল নামক স্থলদ্বীপে মানুষকে সেইভাবে বন্দী রাখা হয়েছে। ওরা একটা রাজনৈতিক ফাঁসে আটকে। ওদের এই ফাঁস থেকে উদ্ধার করুন। বাংলাদেশের কাছে আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে একটাই আর্জি যে দুদেশের মধ্যে এই ছিটমহলগুলি বিনিময়ের পাকাপাকি বন্দোবস্ত করুন। দুটি নতুন ছিটমহল দহগ্রাম এবং আঙ্গারপোতা বেরিবাড়ির বদলে বিনিময় হয়েছে। এই দহগ্রাম আঙ্গারপোতার বিনিময় পাকাপাকি করে দেওয়া হোক। কুচলিবাড়িও আর একটা নতুন ছিটমহল। এই ছিটমহলগুলির বিনিময় পাকাপাকি হয়ে গেলে তিন বিঘা করিডরের বিশাল খরচ দুদেশের মধ্যে কমে যাবে। তিন বিঘা করিডর অর্থহীন হয়ে যাবে। এই দহোগ্রাম এবং আঙ্গারপোতা এখনও চোরা-চালানকারীদের ঘাঁটি। ভারত-বাংলাদেশের চারিদিকের সীমানা সীল করে দিয়েও যদি দহগ্রাম আঙ্গারপোতা খোলা থাকে তাহলে উগ্রপন্থীরা এই রুট দিয়ে খুব সহজেই দু দেশে সন্ত্রাস চালাতে পারবে। সেইজন্য বাংলাদেশেরও উচিত এই বিষয়টা ভাবা। দহোগ্রাম আঙ্গারপোতা যদি পাকাপাকিভাবে ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায় তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে। ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময়ই দুই দেশের সমস্যা সমাধানের এক মাত্র উপায়।

আপনাদের পত্রিকার মাধ্যমে আমি বাংলাদেশ সরকারকে একটা অনুরোধ করতে চাই যে ওই দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অনেক নির্যাতন হচ্ছে। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকা মানেই ওই দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকবেন এটাই আমরা আশা করি। স্বাভাবিক আশা। এই স্বাভাবিক আশাটা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেটা দেখার দায়িত্ব বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের। এখানে যারা সংখ্যালঘু আছে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব যেমন আমাদের তেমনই ওই দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপদের দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। যদিও আজকের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে এটা পড়ে না। কিন্তু আমি মনে করি আপনাদের মারফত খুব সহজেই আমাদের এই অনুরোধ সরকারের কাছে পৌঁছে যাবে।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রধান আলোচ্য বিষয়ই হবে ছিটমহল সমস্যা এবং তিস্তা পাণি বন্টন চুক্তির বাস্তবায়ন। তবে সবার আগে দরকার বিরোধী দলকে নিরস্ত্র করা। এত গণ্ডগোলের মধ্যে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment