আতঙ্ক আছে, তবু ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে প্যারিস – পার্থপ্রতিম মজুমদার

আজ সকালে ঘুম ভেঙে উঠতেই মনে পড়ল তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে। মূকাভিনয়ের পাশাপাশি শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত অফিসপাড়ায় বেশ কয়েকটি অফিসে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ শেখানোর ক্লাস রয়েছে। সেই মতো তৈরি হয়ে সকাল ৮টার মধ্যে তড়িঘড়ি রাস্তায় পা রাখলাম। শহরতলিতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে আমার ফ্ল্যাট। সাততলায় থাকি। ব্যালকনি থেকে আইফেল টাওয়ারের চূড়াটা বেশ স্পষ্ট চোখে পড়ে। গত শুক্রবারের হামলার পর নিহতদের জন্য সেখানে কয়েক মিনিটের নীরবতা পালন হয়েছে। রবিবারের সেখানে জমায়েত হয়েছিলেন বহু মানুষ। যাই হোক, রাস্তায় বের হয়েই ট্র্যাফিক জ্যামে পড়লাম। যে দিকে চোখ যায় গাড়ি আর গাড়ি। গত কাল মেট্রোতে শুনছিলাম, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নয়, নিজের গাড়ি বা রাস্তা ধরে গন্তব্যে যেতেই পছন্দ করছেন আশপাশের মানুষজন। এ বোধহয় তারই জের! আজ শুনলাম, প্যারিস জুড়ে ২১ কিলোমিটারের দীর্ঘ যানজট হয়েছে। যতটা পারা যায় পাতাল পথ এড়িয়ে মানুষ চলেছে মাটির উপরের রাস্তা দিয়েই।
বেশ খানিকটা সময় যানজটে অপেক্ষা করার পর অফিসে পৌঁছলাম। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম, হামলার পর থেকে বন্ধ থাকার পর আজ খুলেছে। তবে ক্লাসে অনেকেই গরহাজির। আর যাঁরা আসবেন বলে ঠিক করেছেন, তাঁদের পৌঁছতে দেরি হবে। অতএব অপেক্ষা। ক্লাস শেষ করে ফের রাস্তার যানজটে পড়লাম। দুপুর নাগাদ ফ্ল্যাটে ফিরলাম। কিন্তু লিফ্ট বন্ধ। অতএব সিঁড়ি ভেঙে ওঠা। সাততলায় উঠতে উঠতে ভাবছিলাম, ৩২ বছর এ দেশে আছি। যে কোনও বিপদেই এ দেশের সকলে একজোট বেঁধে তার মোকাবিলা করে। এ বারের দুর্যোগও ঠিক কেটে যাবে। টিভিতে দেখছিলাম, সিরিয়ায় হামলাকারীদের ধ্বংস করতে ফ্রান্স-সহ যৌথবাহিনী বোমা বর্ষণের খবর দেখাচ্ছিল। মনে মনে ভাবছিলাম, মানুষ হিসাবে যাঁরা খারাপ, যারা এই হামলা করেছে, তাদের শিকড় থেকে উপড়ে ফেলাটাই উচিত হবে! না হলে যে কতগুলো ধর্মান্ধ নিরীহদের ব্যবহার করবে হামলাকারীরা। আর বহু নিরাপরাধ মানুষের প্রাণ যাবে।
তবে এটাও ঠিক যে, সকলের মনে একটা চাপা আতঙ্ক থাকলেও যে ভাবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে আমার প্যারিস, তা দেখে একটা কথাই মনে হয়, জীবন চলবেই, কোনও হামলা বা অন্ধকারইও তাকে আচ্ছন্ন করে রাখতে পারবে না। তা আলোর দিকে ধাবিত হবেই।
(লেখক প্রখ্যাত মূকাভিনেতা। জন্ম বাংলাদেশের পাবনায়। ১৯৫৪ সালে। গত সাড়ে তিন দশক ধরে থাকেন প্যারিসে। ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ সাংস্কৃতিক সম্মান ‘নাইট অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ পেয়েছেন ২০১১ সালে। পেয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘একুশে পদক’। ২০০৯ সালে পেয়েছেন নাট্যমঞ্চে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান ‘মলিয়ের অ্যাওয়ার্ড’।)
Related Articles
এবার গাজী শুভ্রর প্রতি প্রতারনার অভিযোগ
বিউটি ফুল বাংলাদেশ আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন মুকুল: এবার গাজী শুভ্রর প্রতি প্রতারনার অভিযোগ জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্যঃ অনলাইনে বিউটিফুল বাংলাদেশ সার্চ করলে
নির্বাচনী ইশতেহারের বেকার ভাতা!
ফজলুল বারী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারেতরুন ভোটারদের সামনে টানতে নানা সুযোগ সুবিধার টোপ দেয়া হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগঅস্বচ্ছ
Festival of Durga Puja Fills My Heart With Sorrow
Durga Puja is the most important festival for Bengali and the most important Hindu religious festival in Bangladesh and West