সুইডেন প্রবাসী লিও আহমেদ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী

সুইডেন প্রবাসী লিও আহমেদ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী

ইউরো নির্বাচনে ফিনল্যান্ডের ফারুক আবু তাহেরের প্রার্থী হবার প্রশংসা দেশে-বিদেশে চলমান থাকতেই যোগ হলো আরেকটি একটি সুসংবাদ। সুইডিশ-বাংলাদেশি লিও আহমেদও সামিল হয়েছেন ইউরো এমপি হবার দৌঁড়ে। ২৫ মে ‘ইলেকশান ডে’। সুইডেনের বিরোধী বামপন্থী দল ‘ভ্যানস্টার’ থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। দলের ৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭ নম্বরে আছেন স্টকহল্মের মেইনস্ট্রিম পলিটিক্সের অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ লিও আহমেদ।

জন্ম ১৯৮১ সালে ঢাকায়। পারিবারিক সূত্রে সুইডিশ রাজধানীতে স্থায়ীভাবে বসবাস ১৯৯৭ সাল থেকে। শিক্ষকতা করেন স্টকহল্মের একটি কিন্ডার গার্টেনে। সময়ের পরিক্রমায় মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে তাঁর সম্পৃক্ততা আজ এতোটাই গভীর যে, রীতিমতো একজন ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ানের পথেই হেঁটে চলেছেন লিও আহমেদ। হঠাত করে অবশ্য তাঁর রাজনীতিতে আবির্ভাব নয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ৮ বছর আগে থেকেই তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন ‘ভ্যানস্টার’ পার্টির স্টুডেন্ট ফ্রন্টের সাথে।

২৬ এপ্রিল এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় লিও আহমেদ জানান, ‘‘২০১০ সালে বর্ণবাদী রাজনৈতিক দলের যখন আবির্ভাব ঘটে সুইডিশ রাজনীতিতে, ঠিক তখনই আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, বর্ণবাদ মোকাবেলায় মূলধারার রাজনীতির সাথে মিশে যাওয়াই হবে আমার আগামীর পথচলা’’। সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে লিও আহমেদকে তখন থেকেই আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘ভ্যানস্টার’ পার্টির স্টকহল্মের ‘সিস্তা’ অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।

এই দায়িত্বের পাশাপশি পার্টির স্টকহল্ম এক্সিকিউটিভ কমিটির মেম্বার হিসেবে ৩ বছর অত্যন্ত সাফল্যের সাথে কাজ করার পর চলতি বছরের শুরুতেই এসে যায় তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। মেধা-যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে ভুল করেনি বামপন্থী দল ‘ভ্যানস্টার’, পুরো স্টকহল্মের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয় লিও আহমেদকে। সবশেষ সংযোজন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রার্থীতা। এখানেই শেষ নয়। আসছে সেপ্টেম্বরে স্টকহল্ম সিটি কাউন্সিল নির্বাচনেও ‘কাউন্সিলর’ হিসেবে নিজের আসনটি প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন লিও আহমেদ।

মেধা প্রজ্ঞা আন্তরিকতা আর একাগ্রতায় এই মেধাবী বাংলাদেশি আজ সুইডিশ রাজনীতির এক অতি পরিচিত মুখ, একাধারে স্টকহল্ম প্রশাসনের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ব্যক্তিত্ব। সফলতার সাথে জনপ্রিয়তা আর খ্যাতি যখন আজ মিলেমিশে একাকার, সেই লিও আহমেদের হৃদয়ে যথারীতি লাল-সবুজের বাংলাদেশ। দৃপ্তকন্ঠে বললেন, ‘‘ইউরো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি, জয়-পরাজয় এদেশীয় রাজনীতিতে মূখ্য নয়। আপনাদের দোয়াতে ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমি আমার পার্টিতে এবং এদেশের জাতীয় রাজনীতিতে আরো ভালো অবস্থানে চলে আসবো এবং এর মাধ্যমেই আমি বাংলাদেশের কল্যানে নিজেকে নিবেদন করতে চাই। বাংলাদেশকে ভালোবাসি বলেই আমি আজ সুইডিশ রাজনীতিতে আমার মতো করেই এগিয়ে যাচ্ছি’’।

প্রবাসে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চাকে রীতিমতো একটি ট্র্যাজেডি বলে মনে করেন লিও আহমেদ। অনেকটা ক্ষোভের সাথেই বললেন, ‘‘বিদেশে বাংলাদেশি রাজনীতি না করে আমরা মূলধারার রাজনীতি তথা মেইনস্ট্রিম পলিটিক্সের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারলে আসলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম’’। শিক্ষকতা আর রাজনীতির পাশাপশি সুইডিশ ইমিগ্রেশান ও স্যোশাল সেক্টরের সাথেও যুক্ত আছেন লিও আহমেদ। স্টকহল্মে কোন বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কোন সমস্যায় পড়লে তিনি এগিয়ে এসেছেন সবার আগে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি পরবর্তী ‘ভ্যানস্টার’ পার্টি কর্তৃক সংগৃহীত তহবিল ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নিজেই পৌঁছে দেন লিও আহমেদ।

বাংলাদেশে নিয়মিত যাওয়া-আসা আছে তাঁর। শত ব্যস্ততার মাঝেও স্ত্রী, ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান নিয়ে ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ক্যাপিটাল’ সুইডেনে তাঁর সুখের সংসার। অনেক অনেক পথ পাড়ি দেবার দৃঢ় প্রত্যয় এই সুইডিশ-বাংলাদেশির।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment