মরে যাব (অনুগল্প )

মরে যাব  (অনুগল্প )

প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

মা সবসময় বলেন একটু স্থির হও। কিন্তু রোদেলা স্থির হওয়ার জন্য জন্মায়নি। সবসময় একটা অস্থিরতা।ছটফটানি একটা ভাব সারাক্ষণ আঠার মত লেগে থাকে রোদেলার সাথে। রোদেলা এইসব নিয়ে ভাবে না। রোদেলা শুধু আবিরকে গভীরভাবে ভালবাসে আর অন্যকিছুর গভীরে যাওয়ার আর তার ইচ্ছে নেই। ওর ভাবনা জীবন তো একটাই। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে মজা করে বলে, জিন্দেগি কো মজা লুট জিন্দেগী তোমারি হ্যাঁয় । হাসতে হাসতে নিজেই গড়িয়ে পড়ে নিজের রসিকতায় ।

রোদেলা আবিরকে চোখে হারায় যত আবদার,মান ,অভিমান রোদেলার আবিরকে ঘিরে। রোদেলার আবিরকে ভালবাসে নানাকারনে। আবির বইর পোকা। সব বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান।নানা বিষয়ে কথা বলা যায়। কথারা যেন শেষ হয় না । কথা বলাটা একধরনের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ একদিন আবির রোদেলা কে বলল তুমি কি কোন পাখিকে মরে যেতে দেখেছো? রোদেলা একটু ভেবে বলল ,হুম দেখেছি ছোটবেলায় একটি শালিক একটি চড়ুই পাখিকে। আবির বলে না তুমি ওদের আহত অবস্থায় দেখেছো। জানো পাখির মৃত্যু টা খুব ইন্টারেস্টিং । পাখিরা বুঝতে পারে কখন মারা যাবে, তাই তারা লোকালয় ছেড়ে নির্জনে যেয়ে মারা যায়। রোদেলা বলে উঠে সত্যি ? আমার খুব ভালো লেগেছে শুনে। আমিও নির্জনে পাখির মত করে মারা যাব একদিন। আবির কথা শুনে খুব আহত হয়, তার চোখ দুটো ভিজে যায় গোপনে। আবির বলে প্লিজ রোদেলা তুমি এতো অনায়াসে কথাগুলো বলনা। তুমি যতটা মায়াবী কোন কোন সময় ঠিক ততটাই নিষ্ঠুর। আমি তোমাকে বুঝে উঠতে পারিনা সময় সময়। তুমি আমাকে বারবার কোন না কোন ভাবে রক্তাক্ত করতে ভালবাস। রোদেলা আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলে এই কান ধরে বলছি আর বলবনা । রোদেলা কথা ঘোরানর জন্য বলে এই তোমার নায়কের কথা বল, রোদেলা জানে এই মুহূর্তে হুমায়ুন আজাদ কে নিয়ে কিছু বলতে পারলেই সব ভুলে যাবে। আবির বলে তুমি কি জান হুমায়ুন আজাদ জার্মান কবি Hynrikh hynsh উপর পি ,এইচ, ডি করতে জার্মানি গিয়েছিলেন ? রোদেলা বলে আমি কি ভাবে জানব? তুমি কি জানো ১৯৮৫ এ উনি একটি বই লিখেছিলেন “সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ এইভাবে একশ বছর পর এই দেশে হুমায়ুন আজাদের মূল্যায়ন হবে। তুমি কি তার লিখা “নারী” পড়েছ ? তুমি একজন নারী কিন্তু থামত করে নারী কে বুঝতে পারনি এখনও ।তোমাকে একটা বই দিব “ফালি ফালি ক’রে কাটা চাঁদ “। রোদেলা বলে আমি তার দুই টা বই পড়েছি “ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল’ অন্যটি “পাক সার জমিন সাদ বাদ” রোদেলা বলে আমি তো তোমার সাথে থেকে থেকে তোমার নায়কের ভক্ত হয়ে গেলাম । আবির চিন্তায় ,চেতনায় ,মননে হুমায়ুন আজাদকে ধারণ করে । রোদেলার ভালোলাগে একজন লেখকের প্রতি তার ভক্তের সত্যিকারের ভালবাসা দেখে ।

দেখতে দেখতে রোদেলার জার্মানি যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো । আবিরের মন খারাপ । কিছুতেই মন সায় দিচ্ছে না রোদেলাকে ছেড়ে দিতে। আবির কেমন জানি ভিতর থেকে মরে যাচ্ছে । আবিরের মনে গভীর ভাবে দাগ কাটে রোদেলা কোন কিছু খেতে গেলেই আবিরকে প্রথম খাওয়াবে। হেসে হেসে বলবে সব জায়গায় লেডিস ফাস্ট কিন্তু খাওয়াতে জেনটস ফাস্ট। হা করো হা করো তুমি আগে আমি পড়ে । মাঝে মাঝে আবিরের চোখ দীঘির জলের মত টলটল করতে থাকে এই ভেবে রোদেলা এতো ভালো কেনো?কিন্তু ভালবাসার সুখ মনে হয় বেশীদিন মানুষের সয়না । অলক্ষ্যে নিয়তি হয়ত কিছু না ভেবে লিখে রেখে দেয় খেয়াল খুশিমতো কিছু ঘটনা । যা মানুষ সহ্য করতে পারে না । বুকের পাঁজর ভেঙে গুড়িয়ে যায়। বেঁচে থাকার আশাটুকু মানুষ একসময় হারিয়ে ফেলে। আবিরের কপালেও রোদেলার ভালবাসা সইলনা ।

পাখিটার মত করে নির্জন দ্বীপে প্লেইন ক্রাসে রোদেলা চিরকালের মত হারিয়ে গেল জার্মানি যাওয়ার পথে। হারিয়ে গেল আবিরের কাছ থেকে, জীবন থেকে, মধুর স্বপ্ন থেকে । আবির বেঁচে থেকেও মৃতপ্রায় । স্মৃতি থেকে পালিয়ে বেড়ায় সারাক্ষণ কিন্তু স্মৃতিরা শূন্যে মেলায় না হারায় না পচেঁ না ,গলে না এমন কি মরেও যায় না, স্মৃতির মৃত্যু নেই।স্মৃতিরা ন-হন্যেতে আটকে থাকে চিরকাল । আবির সেল ফোন টা হাজার বার চেক করে আর রোদেলার “মরে যাব” কথাটা ডিলিট করতে চায় প্রাণপণে। আবির শুধু চারিদিকে মৃদু একটা কান্নার ধ্বনি শুনতে পায় রোদেলার কণ্ঠস্বর, আবির আমাকে বাঁচাও “মরে যাব” ।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment