ব্যর্থতা কি আওয়ামী সরকারের নয়?

ব্যর্থতা কি আওয়ামী সরকারের নয়?

ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা ও নৃশংস আক্রমনের খবর প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। এদেশের ইতিহাসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা নতুন কিছু নয়। কোথাও কোনো অস্থিরতা হলেই অবধারিতভাবেই যেন নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর।

স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত উদার ও অসাম্প্রদায়িক নীতি অনুযায়ী পরিচালিত আওয়ামী সরকার ও প্রশাসনের কারণে ভিন্ন মতাবলম্বীরা নিরাপত্তাজনিত আশংকায় না থাকলেও পরবর্তি যে সরকারই এসেছে ভিন্ন মতাবলম্বীরা দফায় দফায় ভয়াবহ অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

বিএনপির সাথে উগ্র ইসলামী সংগঠন জামায়াতের সুগভীর কানেকশন থাকায়, অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা হয়তো তাদের উপর নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বিএনপির উপর তেমন একটা ভরসা করতে পারে না। এছাড়া আওয়ামীলীগের সাথে ভারতের সুসম্পর্কের কারনেও হোক, আর তথাকথিত ধর্মনেরপেক্ষ নীতির কারণেই হোক বরাবরই আওয়ামীলীগের প্রতি তারা নিরাপত্তার জন্য নির্ভর করে থাকে।

কিন্তু আওয়ামী আমলেও কি তারা তাদের কাঙ্খিত নিরাপত্তা পেয়েছে? পেয়েছি কি তাদের জান-মাল-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা? নির্যাতনের যে ধারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী ও রাজাকার দ্বারা শুরু হয়েছিল, সেই ধারা ২০১৪ তে এসেও যেন শেষ হয় নি! অথচ নিরাশার কথা হলো এই যে, ৭২-৭৫ এর সেই “উদার ও অসাম্প্রদায়িক নীতির” দাবিদার আওয়ামীলিগ এখন ক্ষমতায় আসীন।

ভিন্ন ধর্মালম্বীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত এই আওয়ামী আমলেও যে তারা নিরাপদ নয়, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাই তার প্রমাণ। মুসলিম নামধারীও যখন মহানবীর নামে কটুক্তি করে, তখনও গুজব ছড়িয়ে হিন্দু-বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার চালানো হয়! এই তো কিছুদিন আগেই পুড়ে ছাই হয়েছিল রামুর মন্দির। ঘটনার গভীরে গিয়ে জানা যায় যে জামায়াত-বিএনপি-আওয়ামী সবাই এই হামলায় ইন্ধন জুগিয়েছিল!

হতে পারে আওয়ামী নেতার সংশ্লিষ্টতার কারণেই রামু কেলেঙ্কারির সুষ্ঠু তদন্ত হয় নাই। আর সাম্প্রদায়িক এসব হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয় না জন্যই বারবার তারা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়।

সাথিয়ায় ভিন্ন মতাবলম্বীরা হামলার শিকার হয়েছিল। ২৫টির উপরে বাড়ি এবং সেই সাথে ২টি মন্দির পুড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।

২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষিত হওয়ার পর দেশব্যাপী একযোগে ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপর হামলা হলো। যেন সাইদীর ফাঁসির রায়ের দায় তাদের উপর বর্তায়! অথচ সেসময় আওয়ামীলিগ সরকার মোটেও এই হামলার বিরুদ্ধে কোনো একশনে যায় নি। এই বিষয়টি নিয়ে যে তারা বিচলিত ছিল না, তার প্রমান আমরা পুনরায় পাই ১২ ডিসেম্বরের পর। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হলে আবারও তাদের উপর নৃশংস হামলা চালানো হয়।

৫ জানুয়ারী নির্বাচনের পর দেশব্যাপী যে নারকীয় হামলা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর চালানো হলো, তা আসলে বিভিন্ন সময়ে তাদের উপর করা হামলার সুষ্ঠু বিচার না হবারই ফল। এ যেন তাদের অনিবার্য নিয়তি। ভয়ের কথা হলো এই যে, যেখানে নির্বাচনের নিরাপত্তার জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে, সেখানেও সেনাবাহিনীর নাকের ডগার উপর নারকীয় হামলা চালানো হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো গুটিকয়েক জামায়াত কি এতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে? এই যে শুনি বিএনপির কোনো কর্মী একশনে নামছে না জন্য তাদের কোনো আন্দোলন সফল হচ্ছে না, তবে এইসব জ্বালাও পোড়াও করতে বিএনপি কর্মী এলো কোথা থেকে?

ঘটনার মূল উত্পাদন না করে বিএনপিকে-জামায়াতকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে এতে কি যাদের উপর নির্যাতন হয়েছে তাদের কোনো লাভ হচ্ছে?

পত্রিকায় প্রকাশ যে ৫ জানুয়ারী নির্বাচনোত্তর হামলায় নিপীড়িতরা হামলা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে প্রশাসন এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বারবার ফোন করেও কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি।

প্রশাসন যে তাদের উপর হামলায় ত্বরিত একশনে সাড়া দেয় নি, এর দায়ভার কার? আওয়ামী সরকারের নয় কি? কেন প্রশাসনিক দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সেদিন সাড়া দেয় নি এ নিয়ে কি কোনো তদন্ত হয়েছে? কোনো কর্মকর্তা কি দায়িত্ব অবহেলার কারণে বরখাস্থ হয়েছে? হয়নি। তাহলে আমরা কি ধরে নেব প্রশাসনের উপর সাড়া না দেবার জন্য উপর থেকে নির্দেশ ছিল?

এমনি সময় তো সুরঞ্জিত, আমু, নাসিম সাহেবেরা বিএনপি জামায়াতের লং-মার্চ ঠেকাতে ছাত্রলীগদের লগি-বৈঠাসহ সর্বোচ্চ হাতিয়ার ব্যবহারের জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকেন, তবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার জন্য কেন এখন সোনার ছেলেদের কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেন না? কেন পুলিশ বাহিনী চুপ করে আছে? কোথায় গেল আপনাদের পিপার স্প্রে? হাড় জিরজিরে প্রাইমারি শিক্ষকদের উপর তো পুলিশের শক্তিমত্তার প্রদর্শনী আমরা দেখেছিলাম, তবে এখন সেই শক্তি দেখিনা কেন?

যদি বিশেষ একটি পত্রিকার ফটো শপ কারসাজির কারণে কিংবা ফটো প্রকাশের কারণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা হবার খবর সত্য হয়ে থাকে, তবে ইনু সাহেব কেন এখন মুখে কলুপ এঁটে বসে আছেন? কেন সরকার ত্বরিত সেই অভিযোগের তদন্ত করেছে না? যদি অভিযোগ সত্য হয়ে থাকে তবে সেই ক্ষতিকর সম্পাদক কেন গ্রেফতার হবে না?

ধর্মনিরেপক্ষ বুলি আওড়ানো আওয়ামী সরকারের চাটুকার গলাবাজ নেতারাই বা এখন কোথায়? কাউকে তো দেখিনা নির্যাতনকারীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে?

হামলা মোকাবেলায় আওয়ামী প্রশাসনের ব্যর্থতায় আমরা কি ধরে পারি না যে, প্রশাসনের ইন্ধনে এই বীভৎস আক্রমণ ইচ্ছাকৃত ভাবেই চলতে দেওয়া হচ্ছে? সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করাই কি সরকারের উদ্দেশ্য?

বাংলাদেশের ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপর হামলায় ইন্ধন যোগানো, হামলা-নির্যাতন চালানো ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর জন্য বিএনপি-জামায়াত যেমন দায়ী, ক্ষমতায় থেকেও ভিন্ন ধর্মালম্বীদের নিরাপত্তা দিতে না পারা, হামলার বিচারে তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না করা, সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে নোংরা রাজনীতির খেলার অভিযোগে তথাকথিত ধর্মনেরপেক্ষ দল বর্তমান আওয়ামিলীগও সরকারও কিন্তু সমান দায়ী।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment