বাংলাদেশে প্রাথমিক শ্রেণীকক্ষে শান্তি-সংস্কৃতি পাঠ্যক্রম!

বাংলাদেশে প্রাথমিক শ্রেণীকক্ষে শান্তি-সংস্কৃতি পাঠ্যক্রম!

শিশুদের ওরেসি বা বক্তৃতায়, কথায়, অনর্গল এবং ব্যাকরণগতভাবে নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা যা পড়া, লেখা, বাকপটুতা ও সংখ্যাগণনায় (নিউমারেসি) তাদের মনোযোগী করে. কথা বলা ও শোনা, শিক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বাংলাদেশের শিক্ষায় বিশেষতঃ প্রাথমিক শ্রেণীকক্ষে একটি শান্তি-সংস্কৃতি নির্মাণে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে তা অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে, দাবি রাখে মিডিয়াগুলোর প্রচার নীতিমালা কতটা শিশুবান্ধব তা নিয়েও…

এন্ড্রো ওয়িলকিনশন (১৯৬৫) সালে ‘বলা ও শোনা’কে শিক্ষায় একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলেছেন। ১৯৭০ সালে ভাষা ও শিক্ষাবিদ যেমনঃ হ্যালিডে এট অল এবং রোজেন রোজেন (১৯৭৩) অনুরূপ গুরুত্ব দিয়েছেন।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শান্তি-সংস্কৃতি পাঠের বিষয়টি সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু যারা বর্তমানে প্রবাসী তারা তা হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করেন। বাংলাদেশে দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা দিবস হিসেবে ৪ঠা জুলাইকে পালনের আহবান জানানো হয়েছে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা ও কানাডার মাহিনূর জাহিদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। তবে খুবই নিস্প্রভ ভাবে পালিত হয়েছে এ দিনটি। কারণ বাংলাদেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন ও রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুরি, সংঘাত ও সংঘর্ষের খবরের পার্শ্বে ‘দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা’ বিষয়টি কতটাই বা পরিচিত বা গুরুত্ববহন করে। কতটাই বা আমাদের উপলব্দিতে আছে যে বাংলাদেশে আমরা যা চাই তা একমাত্র শান্তি-শিক্ষা ও সংস্কৃতি মাধ্যমেই গড়ে তোলা সম্ভব।

যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ, চাপ, বিভেদ, পার্থক্য, বিবাদ, সংঘাত, সংঘর্ষ ও তার প্রভাবকে বুঝতে ‘দ্বন্দ্ব বা সংঘাতের’ উৎস্যকে প্রথমেই জানতে হবে, জানতে হবে মোকাবেলার কৌশল। শিক্ষাব্যবস্থায় ও জীবন চর্চায় এর অনুপুস্থিতির কারণেই আমাদের বিরোধপূর্ণ ও অশান্ত সমাজব্যবস্থা । দ্বন্দ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষ কোন কর্ম বা গৃহীত পদক্ষেপ ও কার্য্যকরণ দ্বারা কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। দ্বন্দের কারনে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে আচরণগত অবস্থান নেয় এবং তা ক্ষেত্র বিশেষে নেতিবাচক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। তবে কিছু কিছু পরিবেশে দ্বন্দ্ব ইতিবাচক ফলাফলও বয়ে আনে।

বিবাদ মীমাংসা যেহেতু পরস্পরের উপর নির্ভরশীল একটি প্রক্রিয়া তাই কোন প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতির মাধ্যমে দ্বন্দ নিরসনে আমাদের সমাজে ব্যক্তি, পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রতিটি পর্যায়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার। এ জন্য ধারণাটিকে শিশু, কিশোর, যুবক/যুবতি ও সমাজে ব্যাপকভাবে পরিচিত করে তোলা উচিত। সমাজে দ্বন্দপূর্ণ পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলে যে ভারসাম্যহীনতা চলছে এর প্রতিকারে এ পদ্ধতির বিকল্প কোন পন্থা নেই।

সহানুভূতি, সামাজিক ন্যায়বিচার, সেবা, এবং সক্রিয় শান্তিস্থাপনের মত বিষয়গুলো শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা অতি জরুরী। স্কুল, মসজিদ, গির্জা, মন্দির এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এ অমূল্য বোধকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বুদ্ধিভিত্তিক, শারীরিক, মানসিক, ও আধ্যাত্মিক চাহিদার মূল বিষয় হলো শান্তি-সংস্কৃতির পরিবেশ নির্মাণ।

বাংলাদেশে দ্বন্ধ ব্যবস্থাপনা নেট ওয়ার্ক ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে পরিবেশগত ধারণক্ষমতা, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, মানবাধিকার, দ্বন্দ্ব রেজল্যুশন, লিঙ্গ সংবেদনশীলতা এবং সমতা, বহুবিচিত্র শিক্ষা, এবং নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে শিক্ষা হিসাবে এ সমস্যাগুলো মোকাবেলার জন্য কটি ইউনিটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে এবং শিশুদের মেধা, মানসিক, এবং সামাজিক প্রবৃদ্ধিকে উন্নত ও মান ভিত্তিক কার্যক্রমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের কৌশলগত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

আধুনিক শিশুদের ইন্টারনেট শান্তি শিক্ষার উপর দীর্ঘকালস্থায়ী কথোপকথনের জন্য প্রচেষ্টা চলছে।.

একটি “শান্তিপূর্ণ শ্রেণীকক্ষ” তৈরির পদক্ষেপ নিতে ছাত্র মিথস্ক্রিয়া সহায়ক কাঠামো গড়ে তোলা সহ শিক্ষক ও অভিবাবকদের সহযোগিতা কামনা এবং সরকারের বলিষ্ট পদক্ষেপ কামনা করছে বাংলাদেশে দ্বন্ধ ব্যবস্থাপনা নেট ওয়ার্ক যা মিডিয়ার সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া কখনোই অর্জন করা সম্ভব নয়। ছাত্র আলোচনা ও দ্বন্দ্ব সমাধান এবং শান্তি আলোচনায়, আমাদের দেশের শ্রেণীকক্ষ থেকে এ আন্দোলনের শুভ সূচনা হোক, গড়ে উঠোক একটি প্রবাসী সমর্থক গ্লোবাল কমিউনিটি…

লেখকঃ দেলোয়ার জাহিদ, সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা ও একজন গবেষক।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment