ফিলিস্তীন: এক অন্তহীন কান্নার প্রস্রবণ

ফিলিস্তীন: এক অন্তহীন কান্নার প্রস্রবণ

শুরুকথা :

ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী ভূখন্ড ফিলিস্তীন বা প্যালেস্টাইন মুসলিম, খৃষ্টান ও ইহুদী তথা সকল ধর্মাবলম্বীর নিকট একটি পবিত্র ভূমি। সুদীর্ঘ ইতিহাস বিজড়িত ফিলিস্তীন মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্ব মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অঞ্চল। অথচ জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়া বেষ্টিত এ ভূখন্ডের প্রতিটি বালুকণার সাথে মিশে আছে ছোপ ছোপ রক্ত। ক্রসেড যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই ছোট্ট অঞ্চলটি আজ ইসরাঈল নামক এক আস্ত হায়েনার করতলগত।

গত ৬০ বছর থেকে ফিলিস্তীনীদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে আমেরিকার অনৈতিক সমর্থনপুষ্ট ইসরাঈল। অন্যদিকে সারা বিশ্বের মোড়লরা কেউবা এ অন্যায়ের সহযোগিতা করছে, কেউবা কাপুরুষের ন্যায় চোখ বুজে সহ্য করছে এই হোলি খেলা। এ বছরের ৩১ মে সারা বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এ ইহুদী রাষ্ট্রটি তার আসল চেহারা আরেকবার উন্মোচন করল। গাজার ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত, ভুখা-নাঙ্গা মানুষের মুখে এক মুঠো আহার তুলে দেওয়ার জন্য রওয়ানা হয় তুর্কী ত্রাণবাহী জাহাজ ফ্রিডম ফ্লোটিলা মাভি মারমারা। গাজার উপকণ্ঠে পৌঁছার পূর্বেই ইসরাঈলী সন্ত্রাসীরা এই জাহাজে বর্বর হামলা চালিয়ে ৯ জন তুর্কী মানবাধিকার কর্মীকে হত্যা করে। এই গণহত্যা সারা বিশ্বের মানুষকে আরো একবার ইসরাঈল সম্পর্কে ভাবাতে শুরু করে।

ইহুদী জাতির পরিচয় :

ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রসঙ্গে আলোচনার শুরুতেই ইহুদীদের সম্পর্কে বলা প্রয়োজন। কেননা ইহুদী রাষ্ট্র হিসাবেই ইসরাঈলের জন্ম। ইহুদীদের প্রধান নবী হলেন মূসা (আঃ), যার কিতাব হল তাওরাত। ইহুদীরা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, যার নাম তাদের কাছে জেহোভা। এখান থেকেই ইহুদী নামের উৎপত্তি। কারো মতে, ইহুদীদের অপর নাম বনী ইসরাঈল। ইসরাঈল মূলত ইয়াকুব (আঃ)-এর অপর নাম। তাঁর মোট ১২ জন সন্তান ছিল। ১২ ভাইয়ের বড় ইয়াহুদার নামানুসারেই বনী ইসরাঈলকে ‘ইহুদী’ বলা হয়। বনু ইসরাঈলরা পথভ্রষ্ট হয়ে গেলে আল্লাহ তাদের হেদায়াতের জন্য মূসা (আঃ)-কে তাওরাত সহ প্রেরণ করেন। বনী ইসরাঈলের উপর আল্লাহ্র ছিল অগণিত নিয়ামত, অফুরন্ত অনুগ্রহ। পবিত্র কুরআনে প্রায় ৪৩টি স্থানে বনী ইসরাঈলের আলোচনা রয়েছে।

তন্মধ্যে প্রায় ১৬টি স্থানে বনু ইসরাঈলের উপর আল্লাহ প্রদত্ত নে‘আমতরাজির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যখন আমি সমুদ্রকে পৃথক করে দিলাম অতঃপর তাদেরকে রক্ষা করলাম এবং ফেরাঊনকে ডুবিয়ে দিলাম’ (বাক্বারাহ ৫০)। তাদেরকে প্রদত্ত আরো নে‘আমতসমূহ যেমন- রাজাধিপতির মর্যাদা প্রদান (মায়েদাহ ৬০), রিযিক প্রদান (জাছিয়া ১৬), তীহ প্রান্তরে ছায়া ও খাবারের ব্যবস্থা (বাক্বারাহ ৫৭), পানির ব্যবস্থা (বাক্বারাহ ৬০)।

এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর আরো অনেক অনুগ্রহ করেছেন। যেমন- গো-বৎসের পূজা করার পরও আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন’ (বাক্বারাহ ৫১-৫২)। বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটানোর পর তাদেরকে আবার পুনর্জীবন দান করেন’ (বাক্বারাহ ৫৫)। এ রকম আরো অভাবনীয়, আশাতীত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নে‘আমতরাজি দিয়ে আল্লাহ ইহুদীদের মান-মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, শান-শওকত বৃদ্ধি করেছেন।

এরপরও কুটিল ইহুদীরা আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় না করে একের পর এক নাফরমানী করে চলেছিল। গোবৎসের পূজা, যুদ্ধ করতে অস্বীকার, আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখতে চাওয়ার মত ধৃষ্টতা, মান্না ও সালওয়ার উপর আপত্তি, নবীদেরকে হত্যা, শনিবারের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা লংঘন (বাকারা ৫১-৫২; মায়েদা ২৪; ঐ ৬১; নিসা ১৫৭; বাকারা ৬৫-৬৬) ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে তারা আল্লাহ্র নাফরমানী করে। ফলে আল্লাহ তাদের উপর নানাবিধ গযব নাযিল করেন। যেমন- লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা (বাক্বারাহ ৬১, আলে ইমরান ১১২)।

এছাড়াও ক্ষণিক গযবসমূহ ছিল- (ক) তীহ প্রান্তরে ৪০ দিন উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ানো (মায়েদা ২৪)। (খ) বজ্রপাতে ধ্বংস হওয়া (বাক্বারাহ ৫৫)। (গ) গো-বৎস পূজার জন্য পরস্পরকে হত্যার মাধ্যমে নিষ্ঠুর শাস্তি প্রাপ্ত হওয়া (বাক্বারাহ ৫৪)। (ঘ) মাথার উপর তূর পাহাড়কে ঝুলিয়ে দেয়া (আ‘রাফ ১৭১)। (ঙ) বৈধ ও পূত-পবিত্র বস্ত্ত হারাম হয়ে যাওয়া (নিসা ১৬০-১৬১)। (চ) নিকৃষ্ট বানর ও শুকরে পরিণত হওয়া (বাক্বারাহ ৬৫-৬৬) প্রভৃতি।

মূলত ইহুদীরা হচ্ছে একটি প্রতারক, ধুরন্ধর, বিশ্বাসঘাতক নিষ্ঠুর জাতি। তাই লাঞ্ছনা ও অপমান এদের চিরসঙ্গী। এদের উপর আল্লাহ্র সবচেয়ে বড় গযব হচ্ছে মুসলমান বা অন্য কোন জাতির ন্যায় তারা কোন স্থানে একত্রিত জীবন যাপন করতে পারবে না। এজন্য ইতিহাসের পাতায় তাদেরকে সবসময় দুরাচারী, অপমানিত, বহিষ্কৃত অবস্থাতেই দেখা যায়। এইতো গত শতাব্দীতেই তারা মুসলিম খিলাফত আমলে আরব থেকে বহিষ্কৃত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আশ্রয় নেয়। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার কর্তৃক নিষ্ঠুরভাবে আক্রান্ত ও বিতাড়িত হয়।

ফিলিস্তীনের ভৌগলিক পরিচয় :

Palestine এর আরবী নাম فلسطين যার অর্থ সুন্দর কিছু। এর আরেকটি অর্থ আল্লাহ্র ভূমির রক্ষক (ইসলামী বিশ্বকোষ ১৫তম খন্ড, পৃঃ ১৫৩)। মূলত শব্দটি গ্রীক। যার অর্থ- ফিলিসিয়াবাসীদের ভূখন্ড। অর্থাৎ যারা আনুমানিক খৃষ্টপূর্ব ১২০০ শতকের দিকে কেনান তথা জর্ডান নদীর বেলাভূমির দক্ষিণ তীরাঞ্চল দখল করেছিল। এরা ছিল প্রাচীন জুডা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ফিলিসিয়ার অধিবাসী। এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তসীমা ও ভূমধ্যসাগরের পূর্ব সীমানা বরাবর ফিলিস্তীন রাষ্ট্রটি অবস্থিত। এর উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে ইসরাঈলের অস্তিত্ব থাকলেও মূলত উত্তরে লেবানন এবং সিরিয়া, দক্ষিণে সুয়েজ উপসাগর ও মিশরীয় সিনাই উপদ্বীপ, পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর ও পূর্বে জর্ডান অবস্থিত। এর মোট আয়তন ৬৩৩৫ বর্গকিলোমিটার।

১৯৪৮ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৬,৩২৩ বর্গকিলোমিটার। মোট জনসংখ্যা ৪০ লাখ। ১৯৪৮ সালে ছিল ১ কোটি। তন্মধ্যে পশ্চিমতীরে বাস করে ২৫ লাখ, গাজায় ১৫ লাখ, ইসরাঈলে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ১১ লাখ, জর্ডানে ২৮ লাখ, অন্যান্য আরব দেশে ১৭ লাখ এবং সারা পৃথিবীতে ১ লাখ। প্রায় ১ কোটি মানুষের একটি জাতিগোষ্ঠী এমনইভাবে আজ স্বদেশ থেকে বিতাড়িত, ভাগ্যবিড়ম্বিত। তাদেরকে পাশবিক শক্তি প্রতারণার মাধ্যমে এ অবস্থায় নিক্ষেপ করেছে।

গাজা :

আয়তন ৩৬০ বর্গ কিঃমিঃ। দৈর্ঘ্য ৪১ কিঃমিঃ। প্রস্থ ১২ কিঃমিঃ। প্রাচীর বেষ্টিত একটি কারাগারের মত। ইসরাঈলের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় ভূমধ্যসাগর ঘেঁসে এক চিলতে জায়গা গাজা।

পশ্চিম তীর :

২ হাযার ৩৯০ বর্গ মাইল। এখানকার অনেকেই উচ্চ মধ্যবিত্ত ও বিদেশে কর্মরত।

ইসরাঈলের ইতিহাস :

৬৩৬ খৃষ্টাব্দে ইসলামের দ্বিতীয় খলীয় ওমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ফিলিস্তীন সর্বপ্রথম ইসলামী খিলাফতের অধিকারভুক্ত হয়। অতঃপর দীর্ঘ চারশত বছর পর ১০৯৬ সালে ক্রসেডাররা মুসলামানদের হাত থেকে ফিলিস্তীন দখল করে নেয়। পুনরায় ১১৮৭ সালে গাজী ছালাহুদ্দীন আইউবীর নেতৃত্বে মুসলামানরা জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করে। ১৫১৭ সালে সুলতান প্রথম সেলিম ফিলিস্তীন রাষ্ট্রটি মামলুক সুলতান কানজুল ঘোরীর নিকট থেকে ওছমানীয় খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। ১৯১৮ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তীন কার্যত বৃটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। ইতিমধ্যে তুর্কী খিলাফতের বিরুদ্ধে আরব ভূখন্ডে আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ধীরে ধীরে শুরু হতে থাকে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মক্কার ইমাম বা শাসক ছিলেন শরীফ হুসাইন। তিনি এ আন্দোলনের গতিবৃদ্ধিতে বিস্তর ভূমিকা রাখেন। ঠিক এই সময়ের কিছু পূর্বেই ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জায়নিজম (Zionism) নামে একটি আন্দোলন শুরু হয়। এই জায়নিজম আন্দোলনের উদ্ভব হয় ভিয়েনা শহরে। থিওডর হারজল নামক একজন হাঙ্গেরীয় ইহুদী সাংবাদিক ভিয়েনার ইহুদীদের নিয়ে শুরু করেন জায়োনিস্ট আন্দোলন।

১৮৯৭ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডে প্রথম ‘আন্তর্জাতিক জায়োনিস্ট কংগ্রেস’ আহবান করেন (অধ্যাপক কে আলী, মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস, পৃঃ ৩৩৮)।

এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল ইহুদীদের জন্য একটি আলাদা আবাসভূমি তৈরী করা। এই উদ্দেশ্যকে সামান রেখে থিওডর দাবী করলেন, প্যালেস্টাইন ছিল ইহুদীদের আদি নিবাস। অতএব সব ইহুদীকে সেখানে ফিরে যেতে হবে, গড়তে হবে পৃথক আবাসভূমি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম নেতা শরীফ হুসাইন প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি তুরস্কের বিরুদ্ধে বৃটেনকে সহযোগিতা করবেন। আর ব্রিটিশ সরকার তাঁকে আরব সাম্রাজ্য গড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অন্যদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বিলাতে এসিটনের দারুণ অভাব দেখা দেয়। ঐ সময় জায়োনিস্ট আন্দোলনের বিখ্যাত নেতা ও রসায়নবিদ হাইম ওয়াইজম্যান। যিনি বিলেতের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারকে বলেন, তিনি এসিটন উৎপাদন করতে পারবেন। ব্রিটিশ সরকারকে তিনি এ বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করতে রাজি তবে শর্ত হচ্ছে যে, যুদ্ধে জিতলে প্যালেস্টাইনে গড়তে দিতে হবে ইহুদীদের বিশেষ আবাসভূমি। (এবনে গোলাম সামাদ, ইহুদীদের জাতীয় পরিচয়, নয়া দিগন্ত, ১৯ জানুয়ারী ২০০৯, পৃঃ ৬)।

ইহুদীদের দাবী অনুযায়ী ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার নানা স্বার্থকে সামনে রেখে ইহুদীদের জাতীয় আবাসভূমি সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এটাকে ‘বেলফোর ঘোষণা’ (Belfour Declaration) বলা হয় (মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস, পৃঃ ৩৩৮)। এখান থেকেই শুরু ফিলিস্তীন সমস্যার। যাহোক প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হারার পর ফিলিস্তীন আসে ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে। ফলে বহু ইহুদী ইউরোপ থেকে গিয়ে প্যালেস্টাইনে বসবাস করতে শুরু করে। তারা কিনতে শুরু করে জলাভূমি। ইহুদীরা এসব জলাভূমি সেচে বের করে আবাদি ভূমি। এরকম একটি জলাভূমি সেচে তারা তৈরী করে তেল আবিব শহর এবং প্রতিষ্ঠা করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ক্রমে ক্রমে আরবগণ নিজ দেশে পরবাসীতে পরিণত হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকারের নীতির ফলে আরবদের অসন্তোষ বেড়ে চলল। এ অসন্তোষ আত্মপ্রকাশ পেল আরব-ইহুদী দাঙ্গার মধ্য দিয়ে। ১৯২১, ১৯২৯ ও ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে আরব ও ইহুদীদের মধ্যে যে দাঙ্গা হয়েছিল, তাতে অসংখ্য লোক হতাহত হয়। ব্রিটিশ সরকার সামরিক শক্তির সাহায্যে এসব দাঙ্গা বন্ধ করে। ১৯৩৬ সালে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ব্রিটিশ সরকার একটি ‘রয়েল কমিশন’ (Royal Commission) নিয়োগ করে। কিন্তু এই কমিশনের প্রস্তাব আরব-ইহুদী উভয়ই প্রত্যাখ্যান করে। ফলে কোন সমাধান ছাড়াই আরব-ইহুদী সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফিলিস্তীনের অবস্থার পরিবর্তন হল। আরব ও ইহুদীরা কিছু সময়ের জন্য সংগ্রাম হতে নিরত হয়ে মিত্রশক্তির খেদমতে আত্মনিয়োগ করল। এ সময় ইহুদীরা আমেরিকার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের সাহায্য লাভ করে। আমেরিকারও মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী ঘাটির প্রয়োজন ছিল। সে মনে করল ইহুদী-ফিলিস্তীনী দ্বন্দ্ব তার সে প্রয়োজন মেটাতে পারে। সুতরাং সে ফিলিস্তীনে ইহুদীদের জাতীয় আবাসভূমি সৃষ্টির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাল। ১৯৪২ সালে ডা. হাইম ওয়াইজম্যান ও আরও কয়েকজন ইহুদী নেতা আমেরিকার সাথে এক বৈঠকে মিলিত হয় এবং সেখানে বিটমোর প্রোগ্রাম (Bitmore Programme) নামে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়।এ প্রস্তাব অনুসারে ইহুদী সাধারণতন্ত্র হিসাবে ফিলিস্তীন প্রতিষ্ঠার দাবী করা হয়। এ সংবাদে সমগ্র আরব জাহান ক্ষেপে ওঠে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৫ সালে আরবলীগ গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে আরবলীগের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাশ হয় ফিলিস্তীনকে বিভক্ত করে ইসরাইল নামে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব। ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এর প্রেসিডেন্ট হন হাইম ওয়াইজম্যান (ঐ)।

জাতিসংঘের অবিচারে হতাশ হয়ে আরব বিশ্ব সশস্ত্র পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। আরবলীগের সমস্ত সদস্য অস্ত্রশক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালে ইহুদী ও আরবদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ বাধে। আরবগণ যখন নিশ্চিত বিজয়ের পথে তখন জাতিসংঘ ৪ সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি করতে বলে। এই সুযোগে ইসরাঈল আমেরিকা থেকে অস্ত্রশস্ত্র আমদানি করে। অন্যদিকে উদ্বাস্ত্তবেশে আমেরিকাও সৈন্য পাঠায়। ফলে ইহুদীরা প্রভূত শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়। অতঃপর পুনরায় যুদ্ধ শুরু হলে আরবরা আর পেরে উঠেনি। ইহুদীরা ফিলিস্তীনের একটি অংশ অধিকার করে ইসরাঈল নামে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এভাবে দীর্ঘ ষড়যন্ত্র-সংগ্রামের পর ইহুদীরা একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হয় (ঐ)।

সুত্রঃ http://shirshobindu.com/?p=33690


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment