প্রবাসে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতির ‘পোস্টমর্টেম’

প্রবাসে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতির ‘পোস্টমর্টেম’

বিদেশ বিভুঁইয়ে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চার প্রয়োজন আছে কি ? কোন ‘মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন নয় এটি। সহজ প্রশ্ন, সরল সমীকরণ, উপলব্ধিই এখানে মূখ্য বিষয়। আলোর পেছনেই যেহেতু অন্ধকার, তাই দূর প্রবাসে বাংলা স্টাইলে দেশি রাজনীতি চর্চার ভালোমন্দ বেশকিছু বিবেচ্য বিষয় বিবেকের দুয়ারে কড়া নাড়ে প্রতিনিয়ত।

পাঠক, অপকারিতা বয়ানের আগে প্রবাসে বাংলা রাজনীতির ভালো(!) দিকগুলোর প্রতি আগে নজর দেয়া যাক। দায়বদ্ধতা যথারীতি বিবেকের। বিদেশে দেশী রাজনীতি চালু থাকলে তার ‘ডিরেক্ট বেনিফিটবাংলাদেশের বিশেষ এক শ্রেনীর মন্ত্রী বাহাদুর ও রাজনীতিবিদদের। ভিনদেশের বিমানবন্দরে ফুলের মালা, বিলাসবহুল হোটেলে তোষামোদি ও চাটুকারিতা উপভোগ, রকমারী ফ্রি শপিং, বৈচিত্রে ভরপুর সব উপঢৌকন, কারো কারো ক্ষেত্রে মধ্যরাতের লাল-নীল সর্বোচ্চ বিনোদন, দিনের আলোতে সস্তা গণসংবর্ধনা সহ আরো কত কি। এতো গেলো সেবাগ্রহীতার কথা, যারা এসবের যোগান দেন সেইসব সেবাদাতাদের প্রাপ্তির হিসেব-নিকেশ না তুলে ধরলে তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে বৈকি!

প্রবাসীর খাতায় নাম লেখাবার আগে তথা বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ে রাজনীতি করার (সৌভাগ্য/দুর্ভাগ্য) সুযোগ না পেলেও বিদেশে এসে আজ অনেকেই বড় বড় নেতা হয়ে ভিজিটিং কার্ডটি বানাচ্ছেন সবার আগে। নির্বাচনের আগে ও পরে এমনকি অনেকে বছরের বিভিন্ন সময় দেশে গিয়ে, কেউ কেউ আবার দীর্ঘসময় ঢাকায় অবস্থান করে বহুমুখী দৌড়ঝাপ করে কমবেশ আখের গোছাতে সাফল্যের পরিচয় ‍দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। টমাটো-বেগুণের জমি লীজ নেয়া থেকে শুরু করে পেট্রোল পাম্প, রাজউকের প্লট, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এমনকি ব্যাংকের মালিকানা সহ আরো কতো কিছুর কথাই আজ দেশে দেশে ওপেন-সিক্রেট। মজার বিষয় হচ্ছে, ধান্ধা যাদের সফল হয়নি তারাই পরশ্রীকাতর হয়ে আলোতে নিয়ে আসছেন অন্ধকার জগতের অসাধ্য সাধনের যাবতীয় তথ্যাদি।

উপকারি গাছের ছাল থাকুক বা নাই থাকুক তাতে কারো কিছু যায় আসে না ঠিকই, তবে প্রবাসে দেশী রাজনীতির বিষবৃক্ষ থেকে উপকার(!) পেতে গিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন আজ অনেকেই। কংগ্রেস-বিজেপি বা তৃণমূলের রাজনীতি ভারতীয়দের প্রবাস জীবনকে বিশ্বের কোথাও কলংকিত না করলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ভয়াবহ ব্যতিক্রম। বাংলাদেশ ভিত্তিক নোংরা রাজনীতির করাল গ্রাসে দেশে দেশে দিশেহারা আজ কমিউনিটি। বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশিদের অগ্রযাত্রার প্রধাণতম অন্তরায় এটি। বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সমাজের সাথে বাংলাদেশের নাগরিকদের ইন্টিগ্রেশনের প্রধান অন্তরায় বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চা, যা একাধারে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ এসোসিয়েশনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি ছড়িয়ে দিচ্ছে আঞ্চলিকতার বিষবাষ্প। গভীর হতাশার সাথে লক্ষ্য করা যায়, দেশে দেশে মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে আমাদের লোকজনের অংশগ্রহনের পথে মূল প্রতিবন্ধকতার কারনও সেই দেশী নোংরা রাজনীতি।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় আইনে পুরোপুরি অবৈধ ও অপরাধ হলেও বাংলাদেশের রাজনীতির আনুষ্ঠানিক চর্চা (তাও আবার একই দলের একাধিক গ্রুপে) করতে গিয়ে মারামারি-কাটাকাটি দেশে দেশে থেমে নেই, দিনকে দিন বরং বেড়েই চলেছে। নিউইয়র্ক, লন্ডন, জেদ্দা, টোকিওর মতো স্থানে হাতাহাতি ধস্তাধস্তি রক্তারক্তি এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটেছে। রোম-লন্ডনে অপবিত্র করা হয়েছে স্থায়ী শহীদ মিনার। অধিকাংশ দেশে বাংলাদেশ কমিউনিটিকে সুনিশ্চিতভাবে বিভক্ত করে রেখেছে তথাকথিত এই রাজনীতি চর্চা।

সবচাইতে হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধাণমন্ত্রীর লন্ডন-নিউইয়র্ক সফরের সময় হিথ্রো ও জেএফকে বিমানবন্দরে লাল ফুল বনাম কালো পতাকার যে তুলকালাম কান্ড ঘটে প্রতিনিয়ত, তাতে বাংলাদেশের তোষামোদপ্রিয় রাজনীতিবিদদের লজ্জ্বা না হলেও বিনষ্ট হয় লাল-সবুজ পতাকার ভাবমূর্তি, স্থানীয় সমাজে চরম অপমানিত হন খেটে খাওয়া প্রবাসীরা। একসাগর রক্তের বিনিময়ে যাঁরা আমাদেরকে একাত্তরে এনে দিয়েছিল স্বাধীনতা, সেইসব বীর শহীদদের আত্মার শান্তির জন্যে হলেও আজ সময় এসেছে দূর প্রবাসে বাংলাদেশ ভিত্তিক নোংরা রাজনীতিকে ‘নাবলার।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment