দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রবাসে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো

দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রবাসে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো

দণ্ডিত গওসুল! লজ্জিত বাংলাদেশ ! লেবানন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসুল আযম। বাংলামেইল২৪ডটকমে উৎপল দাসের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ বিষয়ে সবিস্তার পড়ে ঘটনার এপিঠ ওপিঠ জানা গেলো। এ ছাড়া বোঝার উপায় ছিলোনা যে কি ঘটছে লেবাননে, কেনইবা ঘটছে! কারাইবা ঘটাচ্ছেন এসব। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সম্প্রতি খুবই আক্রমনাত্মক ভাষায় দূতাবাসগুলোকে নিয়ে নানা ধরনের মুখরোচক সংবাদ ও মন্তব্য প্রায়ই পরিবেশিত হচ্ছে। আমার মতো হয়তো অনেককেই হোচট খাবেন যখন সংবাদ পরিবেশনের অতি সাধারন ও চিরন্তন ধরনে-কে, কি, কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে এ প্রশ্নগুলোর কোন জবাব না পাবেন।

প্রবাসে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো কিভাবে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ব্যক্তিগত রেশারেশি, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি থেকে শুরু করে দেশের ইমেজ ক্ষুন্নকারী কাজে পর্যন্ত লিপ্ত হচ্ছে এর কিছু নজীর আমরা অতি সম্প্রতি সংবাদপত্রে পড়েছি। বৈদেশিক মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং প্রশাসন এসব দ্বন্ধ ক্রমে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই এ দ্বন্ধগুলোর উৎস্যমূল কোথায় এ নিয়ে কিছু অনুসন্ধান করা দরকার।

লেবানন থেকে বহিষ্কৃত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসুল আযম সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে- দূতাবাসের কর্মচারী শেখ আব্দুর রহমানকে আটকে রেখে নিপীড়ণ ও নির্যাতন। বৈরুতের চিহ্নিত দালাল সিন্ডিকেটের সাথে যোগ সাজসে ‘হিউম্যান ট্রাফিকিং ও পাসপোর্ট’ বাণিজ্য ইত্যাদি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও বিভাগের প্রতিক্রিয়ায় সম্প্রতি পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আবুল হাসান মাহুমদ আলী জানিয়েছেন, গাউসুল আজমকে ফিরিয়ে এনে তার জায়গায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া) এম নজরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরো বলেন, “উনাকে ফিরিয়ে আনা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। তাকে আগেও সতর্ক করা হয়েছিল কিন্তু তিনি এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি।…প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা ও ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছিল। তাই শেষ পর্যন্ত তাকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।”

জানা গেছে বিতর্কিত রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকারকে ইতিমধ্যে দায়িত্বমুক্ত করা হয়েছে কিন্তু তারপর ও উত্তেজনা যেন কিছুতেই থামছে না। বহিষ্কৃত বাংলাদেশি এ রাষ্ট্রদূত নাানাভাবে সময়ক্ষেপন করে বৈরুতে অবস্থান করছেন এবং প্রতিবাদী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে হয়রানী করছেন মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো যাকে আটকে রাখা ও নির্যাতনের বিষয় নিয়ে এ হুলুস্থুল সেই দূতাবাসের কর্মচারী শেখ আব্দুর রহমান এর দাবি কাউন্সিলর এটিএম মনিনুল হক পরিকল্পিতভাবে গওসুল আযম সরকারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগটি উত্থাপন করিয়েছেন। দূতাবাসের কাউন্সিলরের সঙ্গে গওসোল আযমের কথিত বিরোধের কথা ও প্রকাশিত হয়েছে যা শেখ আব্দুর রহমানের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। গওসুল আজমকে এভাবে ফাঁসানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আব্দুর রহমান দাবি, ‘রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কাউন্সিলরের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তাদের দু’জনের মধ্যে ছিলো চরম বৈরিতা এবং সম্ভবতঃ টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়েও তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।“ এ পরিস্থতি থেকে স্পষ্টতঃই দূতাবাসে কর্মরতদের মধ্য আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও দূর্নীতির লক্ষণ পরিস্কার ভাবেই ফুটে উঠেছে। দূতাবাসগুলোতে বিবাদ এর মূলে হলো কর্মীদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই ও আর্থিক উৎস্য ও খাতগুলোর উপর নিয়ন্ত্রন লাভের অব্যাহত প্রচেষ্টা. এর মধ্যে সন্তোষজনক সমাধান না এলে, দ্বন্দ্ব, দলবদ্ধতায় ব্যাহত হয় উন্নয়নমূলক সকল কার্যক্রম এবং মিশনগুলো তাদের মূল ফোকাস থেকে ক্রমেই দূরে সরে যায়। কর্মক্ষেত্রে সংঘাত এড়াতে দূতাবাসের আর্থিক খাতের উপর কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করা উচিত। তা না হলে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি অব্যাহতভাবে ক্ষুন্ন হতে থাকবে।

বাংলাদেশের পেশাদার কুটনৈতিকদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক সুনাম সুখ্যাতি রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দূর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনা এবং দ্বন্ধ সংঘাতে এ পেশার উচ্চতা কে দিনদিন নীচে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে তড়িত ও কিছু কার্য্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

এ ব্যাপারে কিছু বিক্ষিপ্ত ধারনা এখানে আলোচনার জন্য তুলে ধরা হলোঃ

• অভ্যন্তরীণ সংঘাত ব্যবস্থাপনার একটি নকসা তৈরী ও পরীক্ষামূলকভাবে এর বাস্তবায়ন

• কার্য্যক্রমে জবাবদিহীতা আনার প্রশিক্ষণ ও মধ্যস্থতা

◦ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত ও এর সমাধান বের করা
◦ ফেসিলিটেসন
◦ সংঘাত ব্যবস্থাপনার দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা;
এছাড়াও

  • • অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা

• সংঘাত ব্যবস্থাপনা সেবাদান

• মধ্যস্থতা সেবা

• সংঘাত মধ্যস্থতার কার্য্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

অভ্যন্তরীণ সংঘাত ব্যবস্থাপনার উপকারিতা হলোঃ

• দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ

• বিরোধ বিষয়টি চিহ্নিত করা

• পার্থক্য নিরুপণ

• দায় হ্রাস এবং আইনী জটিলতা ও মোকদ্দমা এড়ানো

• খরচ হ্রাস

• দ্রুত সমস্যার সমাধান করা

• ভাবাবেগের পরিবর্তে রুলস অব প্রসিজিয়ারস মেনে চলা।

• পরস্পর যোগাযোগ উন্নত করা

• ভুল বুঝা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া

• পরস্পরিক আস্থার উপর ভিত্তি করে সম্পর্ক তৈরী

• কর্মক্ষেত্রে সমআচরন লাভ ও দান

• কর্মকান্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধি…

বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গতি সঞ্চারে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ বা সংঘাত ব্যবস্থাপনায় আশু কার্য্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সরকার যেন সব ক্ষেত্রের মতো শেষ সময়ের অপেক্ষায় না থাকেন এটাই প্রবাসীদের প্রত্যাশা। যুগের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের দূতাবাসগুলোর কার্য্যক্রম ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার আনা জরুরী।

লেখকঃ দেলোয়ার জাহিদ, সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব আলবার্টা, সম্পাদক- সমাজকন্ঠ, দ্বন্ধ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক লেখক ও বিশ্লেষক।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment