খুবই সামান্য বিষয়

খুবই সামান্য বিষয়

পকেটমারদের স্কীল কিন্তু অসাধারণ। এরা আপনার-আমার পকেটকে নিজের পকেট মনে করে এমনভাবে টাকাটা হাতিয়ে নেয়, আমরা বুঝতে বুঝতেই তারা পগার পার। ছিনতাইকারীরা আবার একটু আলাদা। তারা আমাদের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় ভয় দেখিয়ে। কষ্ট করে রোজগার করবো আমরা আর উনারা সেটার মালিক হয়ে যাবেন নিমেষেই! আসলে যার ওপর দিয়ে যায়, সে-ই বোঝে। তবে একবার যদি কোনোমতে এদের ধরে ফেলা যায় – উফফ, গণধোলাই কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি তা উদাহরণ…সহ জনগণ বুঝিয়ে দিতে বাকি রাখে না।

ইদানিং অনলাইনে এ ধরনের চোর-ছ্যাচ্চড়ের সংখ্যা বড্ড বেড়ে গেছে।

আমার এক ছোট ভাই শফিউল, খুব ভালো ফটোগ্রাফি করে – তার নিজের তোলা ছবি সেদিন আবিষ্কার করলো আরেক ছেলের কাভার ফটোতে।

আমাদের আরেক ছোটো ভাই বিপ্লব, বিজনেসে নতুনত্ব আনার জন্যে যে সারাদিন ছুটে বেড়ায় – আবিষ্কার করলো তার ‘ই-কুরিয়ার’-এর প্রায় সব ডিজাইন, টার্মস, কন্ডিশনস অন্য এক কুরিয়ার সার্ভিস হুবহু কপি করে ব্যবসা করছে। এখন, বেচারা বিপ্লব ব্যবসা সামলাবে নাকি এসবের পেছনে সময় দিবে!

আরেক ছোটো ভাই তানভীর শুভ, তাদের SMS service এর ক্যাটাগরি গুলোও হুবহু কপি করে ব্যবসা করছে আরেক নতুন কোম্পানী।

আমার OptiMA-র বেশ কয়েকটি পোস্ট ২টি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কপি করে দিব্যি হাজার হাজার লাইক আর শেয়ার কামিয়ে নিলো – চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলাম না।

আমার আরেক ছোটো ভাই ‘দেশ বিদেশের বিজ্ঞাপন’ নামে একটা চমত্কার পেজ চালায়, অনেক খাটাখাটনি করে কন্টেন্ট তৈরী করে,অথচ কতো সহজেই অন্য আরেকজন সেগুলো কপি করে নিজের পেজে নিজের নামে চালাচ্ছে!

কয়টা বলবো?

আমার নিজের কমপক্ষে তিনটি আর্টিকেল আমি পেয়েছি অন্যের ওয়ালে, দিব্যি নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন কোনো acknowledgement ছাড়াই। হাবিজাবি যা-ই লিখি, সেটা তো আমার নিজেরই লিখা, তাই না? তাহলে, তুই কপি করার কে!

এগুলো মাঝে মাঝে খুবই ডিমোটিভেটিং। একজন নিজের শ্রম দিয়ে, সময় দিয়ে, মেধা দিয়ে একটা কিছু দাঁড় করালো, আর আরেকজন কত সহজেই সেটা নিজের নামে চালিয়ে দিলো! আসলে আমাদের স্বভাবটাই এখন হয়ে গেছে এমন। ডিজাইন কপি করে, আইডিয়া চুরি করে আমরা, অন্যের লিখা ছিনতাই করে আমরা সস্তা বাহবা কুড়াতে চাই!

বাড়ি, গাড়ি, টাকা-পয়সা এগুলো ‘physical property’ আর যেকোনো ধরনের আবিষ্কার, সৃজনশীল লেখা, নকশা, লোগো, ইমেজ, কন্টেন্ট এগুলো ‘intellectual property’। কারোর বিন্দুমাত্র অধিকার নেই অন্যের প্রপার্টি নিজের নামে চালিয়ে দেয়া কিংবা স্রেফ ছিনতাই করা।

কোকাকোলার ফর্মুলা সেই যে কোন আমলে patent করে ভল্টে রেখে দেয়া আছে, at a time সর্বোচ্চ মাত্র দুজন জীবিত ব্যক্তির সেই ফর্মুলা জানা থাকে। এই দু’জনকে আবার একই প্লেনে কখনো উঠতে দেয়া হয় না, যাতে প্লেন ক্রাশ করলে একজন জীবিত থাকেন। ভাবুনতো, কোকাকোলা যদি বাংলাদেশী কোম্পানি হতো আর ফর্মুলা এভাবে কোনো ভল্টে থাকতো এবং এই দুই লোকও যদি বাঙালি হতো! ফর্মুলা কতদিন গোপন থাকতো কে জানে! আমাদের মা- বোনেরা বোধহয় ঘরে ঘরে কোক বানিয়ে আমাদের খাওয়াতেন!

আর কি!

যে দেশে লেখকরা এবং মিউজিশিয়ানরাই তাদের কপিরাইটের প্রাপ্য টাকা বুঝে পান না, সেখানে এগুলোতো তো খুবই সামান্য বিষয়।

যে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা চোখের সামনে লোপাট হয়ে গেলেও আমাদের কিছুই করার থাকে না, সেখানে এগুলোতো তো খুবই সামান্য বিষয়।

যে দেশে অন্যায়কারী বহাল তবিয়তে চোখের সামনে ঘোরাফেরা করে, আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি, সেখানে এগুলোতো তো খুবই সামান্য বিষয়।

কবি নজরুল একবার লিখেছিলেন, ”এদেশের নাড়ি নাড়িতে, অস্থিমজ্জায় যে পচন ধরেছে, তাতে এর একেবারে ধ্বংস না হলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না।”

আর কতোটা পচন দরকার এ দেশটার?


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment