কোথায় যাচ্ছে স্বদেশ

কোথায় যাচ্ছে স্বদেশ

সুদর্শনা মেয়েটি শাড়ির উপরে ব্লাউজ পরেছে। পরে ৪৫ ডিগ্রি কোনে কোমর বাঁকিয়েছে। কি অসাধারণ সুন্দরী, সুদর্শনা কন্যা! ফর্সা গায়ের রং, মসৃণ, লাবণ্যময়ী! হরিণাক্ষী দু’টিও গাঢ় নীল! তিখা-লো নাক! টোলপড়া গোলাপ গালের বাঁ-পাশে বড় একটা কালো তিল!

যদিও এই মেয়েকে নিয়েই দেশের ‘সংগ্রামী-সচেতন জনতা’ মেতে উঠেছে সমালোচনায়!

যদিও চামে সবাই মেয়েটির আগাগোড়া বিশ্লেষণ করেছে ‘শকুনের চোখ’ দিয়ে। না দেখলে সমালোচনা করে কিভাবে! সবার অনেক অন্তর্দৃষ্টি। না দেখেই বলতে পারে সব।

মেয়েটি কি দোষ করেছে? সে কি বিকিনি পরে মডেলিং করেছে? নাকি অন্য কিছু? সে যে পোশাক পরেছে তাতে সে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির কতধারা ভঙ্গ করেছে? নাকি বাঙ্গালী ড্রেসকোডের অবমূল্যায়ন করেছে? নাকি হালের মডেলদের ভাত মেরেছে?

গত বছরে বাংলাদেশি এক মডেল বিদেশে এক প্রতিযোগিতায় বিকিনি পরেছিল। সেটা নিয়েও হাউকাউ করলাম। জাত গেল জাত গেল বলে! সে দিব্য এখন অভিনয় করে বেড়ায়। কেউ আর হাউকাউ করে না।

আবার এই দেশেই নায়লা নাঈমরা সদর্পে মানুষের ড্রয়িংরুমে আলোচনায় জায়গা পাচ্ছে। টিভি নাটক রেডিও, মডেলিংয়ে স্থান পাচ্ছে। যাদের কাছে দেহটাই পণ্য। নিরেট পণ্য। আর যারা তাকে এই স্থান দিচ্ছেন তারা সমাজে ভদ্র বলেই বিবেচিত।

বাংলাদেশি টিভি-পত্রিকাগুলো সানি লিওন নামক এক ‘বারবনিতাকে’ নিয়ে বিনোদন পাতায় লিড নিউজ করে। শুরুতে তার পরিচয়ও দিচ্ছে ইন্দো-কানাডিয়ান পর্নস্টার……… বড়ই সৌন্দর্যতা!

আসি শুরুর কথায়। শাড়ির উপরে ব্লাউজ পরা মেয়েটি কোন অন্যায় করেনি। সে কোন ‘সেক্সি চোখও’ মারেনি। সে তার ‘দেহে যৌনতাভরা ঢেউ’ও তোলেনি। সে বিকিনিও পরেনি। তবে কি সমস্যা তার?

অনেকেই বলছেন- সেই আপকামিং এই ‘মডেল’ শাড়ির ‘অপমান’ করেছেন! যারা বলছেন, তাদেরকে বলি- বাঙ্গালিদের কোন ড্রেসকোড আছে? শাড়ি কি আমাদের আমাদের সংস্কৃতি? যে জামদানি কে আমাদের আমাদের বলি সেটি কিন্তু ইন্ডিয়ানদের প্যাটেন্ট করা। সো আমাদের যা পোশাক তা আমাদের নয়। শাড়ি,লুঙ্গি পাঞ্জাবি সবই বিদেশিদের। আমাদের আছে গামছা।

যে দেশে যৌনতাভরা লেগিংস চলে, যে দেশে বডি শো অফের জন্য কথিত হিজাব মাথায় বেঁধে ‘উন্নত বুকে’ এগিয়ে দেয় ‘দর্শকের উন্মুক্ত চোখে পড়া’র জন্য সেদেশে লাক্সের এই মেয়ে নিশ্চয় সে তুলনায় খারাপ কিছু করেনি। তার উরু, বুক, পেট কাউকে দেখায়নি। অন্তত প্রকাশিত ছবিটি তাই বলে।

যে দেশের চলচ্চিত্রে ধর্ষণ দৃশ্যের রগরগা ‘উপস্থাপন’ চলে, টিভি নাটকে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের ‘অবাধ যৌনতা’ দেখানো হয়, যে দেশে লিটনের ফ্লাটের বিজ্ঞাপন চলে ড্রয়িংরুমের টিভি পর্দায় সেই দেশে আর কীইবা আশা করা যায়!

যে দেশে জাতীয় খেলা কাবাডিকে মেরে ফেলে ‘ভিনদেশি’ ক্রিকেট বা ফুটবল নিয়ে মেতে আছি সেখানে স্বকীয়তার প্রশ্ন আসে কেন! আসে হুদাই। এর কোন কারণ নেই।

আমি লিখে দিতে পারি, এই মেয়েই যদি এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় তবে আমরাই আবার তাকে নিয়ে মাতবো। তার অভিনীত নাটক দেখবো। আজকের অনেক সমালোচনা-কারীই আবার তাকে ভেবে কবিতা লিখবে, রাতের ঘুম ‘নষ্ট’ করবে।

আমার এই দেশ সেই দেশ, যে দেশে মেয়ের শরীর নিয়ে যদি আমি লিখি তবে সেটা হয় ‘চটি-গল্প’, আর নির্মলেন্দ গুন লিখলে সেটা হয়ে যায় ‘কবিতা’।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment