একজন শহিদুল্লাহ্‌র কথা

একজন  শহিদুল্লাহ্‌র কথা

যখন বৈভবে বিতৃষ্ণা, আনন্দে অনীহা তখনই অন্য কিছু করার জন্য তাগিদ আসে। চৈতন্যের দরজায় কড়া নাড়ে কেউ একজন। তখন রবীন্দ্রনাথ, নজরম্নল, জীবনানন্দ বা অন্যকিছুর জন্য মনের আকুতি প্রকাশের ইচ্ছারা ডানা ঝাপটায়। শহিদুল্লাহ বা এমনি সামান্য চেনাজানা কারও সম্পর্কে ভাবার অবকাশ হয়নি কখনো। সাধারন কেউ একজন ভাবনায় আসেনি এটা দাম্ভিকতা নয় এটা বোধহয় আমার সীমাবদ্ধতা; ‘বোধহয়’ শব্দটা বলা ঠিক হয়নি এটা নিশ্চিত আমার লিমিটেশন বা সীমাবদ্ধতা।

শহিদুল্লাহ ভাইর কথা মনেই পড়তো না যদি তাহেরম্নন্নেসা আবদুল্লাহ্‌র ইমেইল না পেতাম। একজন মানুষের সংকটে-বিপদে অন্য মানুষের সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রগাঢ় হওয়াই স্বাভাবিক। তাহেরম্নন্নেসা আপার একজন শহিদুল্লাহ্‌র প্রতি সাহায্য সহর্মর্মিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান ্বা আ্বেদনটি তাকে নিয়ে ভাবার সুযোগ করে দিল।

আমরা আমাদের স্বেচ্ছাশ্রমে আইন ও সালিস কেন্দ্র সংগঠনটি গড়ে তোলার সময়েই নাকি ঠিক তার পর পরই শহিদুল্লাহ্‌ ভাই এতে যোগ দিয়েছিলেন ঠিক মনে করতে পারছি না। হিসাবনিকাশ রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব তার। তার সাথে কথা তেমন হয়নি কখন। যদিও মিটিংটিটিং ছাড়াও প্রতি শনিবার ছুটির দিনে মনের আনন্দে আধবেলা সময় ঐ সংগঠনে ব্যয় করতাম। তখন দেখেছি রোগাপাতলা, শানত্মশিষ্ট মানুষটির মুখে প্রায় রা নেই।

সংগঠন ধীরে ধীরে এগুচ্ছে, মানুষের আস’া বাড়ছে। এরমাঝে সংগঠনটি একটি রিজিওনাল/ ইণ্ট্যারন্যাশনাল স্ট্যাডীতে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পেল। কাজটা সম্মানজনক। সংগঠনের পক্ষ থেকে যারা ঐ রিসার্চ স্ট্যাডীতে কাজ করেছিল তাদের মাঝে আমি ছিলাম একজন। আইনজীবী সারা হোসেন ছাড়া আর কে ছিলেন জানতামনা। ‘উইমেন এন্ড এক্সেস টু জাষ্টিস’ ষ্টাডী থেকে অর্থপ্রাপ্তি তেমন হয়নি তবে অনুসন্ধানে তথ্যপ্রাপ্তি ছিল অমূল্য। জানা হল তৃনমূলের জনপ্রতিনিধির দফতর থেকে শুরম্ন করে উচ্চআদালত সবখানেই নায্য বিচারের আশায় মেয়েদের প্রবেশ অনায়াস সাধ্য নয় বরং কষ্টলব্ধ। সংগৃহিত তথ্য এই সত্যের উপাত্ত উপস’াপন করেছিল শক্তভাবে।

শহিদুল্লাহভাই আমাদের সম্মানীর খামগুলো দিতেন। এরমাঝে ষ্টাডীর শেষে আমি কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরে আসার পর উনি একদিন জানালেন যে আমার কিছু টাকা তার কাছে রয়ে গেছে। আমিও বললাম যে নিব পরে।

কিছুদিন পর শহিদুল্লাহভাই আবার টাকার কথা মনে করালেন, আমিও নিচ্ছি, নিব করে নিতে ভুলে গেলাম। পরে একদিন উনি বললেন

-আপা টাকাটার কি আপনার এখন দরকার নাই?

টাকার দরকার নাই এমন অদ্ভুত কথা বলি কি করে। মনে মনে দরকারটা খুঁজতে শুরম্ন করলাম। মুখে বললাম

-আপনার দরকার হলে এখন রাখতে পারেন। আমি দরকারে পরে চেয়ে নেব।

তখন উনি আমাকে দিয়ে দু’টো কাগজে সই করিয়ে নিলেন। তারপর এক শনিবারে আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন

-এতে আপনার টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে দিয়েছি ম্যাচিউর হলে টাকাটা দ্বিগুণ হবে।

ঐ সঞ্চয়পত্র আমার এক দরকারের সময়ে খুব কাজে লেগেছিল। তখন মনে মনে নিঃস্বার্থভাবে সঞ্চয়পত্র কেনার বুদ্ধিখরচের জন্য শহিদুল্লাহভাইর উপর খুব খুশী হয়েছিলাম। তবে তাকে ধন্যবাদটা দেওয়া হয় নি।

একসময়ে ব্যারিস্টার সালমা সোবহানের প্রসত্মাবনায় ও সবার সমর্থনে আমি সংগঠনের ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করি। টাকা পয়সার বিষয়ে আমি খুব পাকা মানুষতো নয়ই বরং বোকা বলা চলে।

তবে শহিদুল্লাহর মতো কর্তব্যনিষ্ঠ, স্বচ্ছস্বভাবের মানুুষের হিসাবনিকাশ নিখুঁত সংরক্ষনের জন্য ট্রেজারারের দায়িত্ব সম্মানের সাথে শেষ করি।

আজ শহিদুল্লাহভাই কঠিন অসুখে আক্রানত্ম। সালমাআপা(সালমা সোবহান) আজ বেঁচে নেই। সংগঠনের দীর্ঘদিনের পুরানো কর্মির প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়ানোর জন্য তাহেরম্নন্নেসা আপার আবেদন আনত্মরিক ও সময়েপযোগী।

কত বীর, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী ও আপনজনের (হুমায়ূন আহমেদ, ডেল্টা গডরেম, প্রদীপ আনোয়ার ও সহোদর ভাই) জন্য নীরবে দুঃখ ও আবেগ প্রকাশ করেছি, প্রার্থনা করেছি। আজ একজন কর্মি শহিদুল্লাহর জন্য একই সততায় ও নিষ্ঠায় মঙ্গল প্রার্থনা করছি।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment