এই সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার দেশ
![এই সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার দেশ](https://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/files/2014/Social_Media2_162113320-890x395_c.jpg)
ওয়ারিশ আজাদ নাফি
আচ্ছা যদি বলি এই গতকাল শুক্রবারে ২০১৪ সালে কেউ একজন দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে বিশ্বাস করবেন ? না বোধহয়। প্রাণ দেয়ার মত ছেলে তো একাত্তরে ছিল
যদি বলি একাত্তরে শহীদ বাপের ছেলেও ৪২ বছর পড়ে দেশের জন্য প্রাণ দিল। জানেন সত্যি কিন্তু। জানেন না। আহা! বাঙালী নিজ ঘরের বীরের খবর রাখেনা
বাবা ল্যান্স নায়েক শহীদ আবদুল হাফিজ একাত্তরে নিখোজ হন। আর ফিরে আসেননি। একাত্তরে বাবা যখন মারা যায় ছেলের বয়স তখন তিনবছর। বাবার দেখাদেখি ছেলে মিজানুর রহমানও বড় হলে বিডিআরে (বর্তমান বিজিবি) যোগ দেন। বাবা দেশের জন্য লড়ে মরেছে আমিও দেশকে রক্ষা করব বাইরের শত্রুর হাত থেকে এই সংকল্প ছিল মনে।
গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা বান্দরবানের ৫২ নম্বর পিলারের কাছে বিজিবির একটি টহল দলের সাথে মায়ানমারের বিজিপির টহলদলের গোলাগুলির সময় মিজানও লড়াই করেছিল। এক ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধ চলে। এরপরই নিখোঁজ হন বিজিবি সদস্য নায়েক মিজানুর রহমান। এ দুইদিন তিনি নিখোজ ছিলেন। শুক্রবার তাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে বিজিবি নিশ্চিত হয় মিজান কে হত্যা করেছে মায়ানামারের বর্ডার গার্ড। মিজানের লাশ এখনো মায়ানমারের কাছে। কি অতভুত বাবাও প্রাণ দিলেন দেশের জন্য ছেলেও প্রাণ দিল দেশের জন্য
এ মুহুর্তে বান্দরবনে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে আমাদের বিজিবি আর ওদের বিজিপির মধ্যে তুমুল গোলাগুলি হচ্ছে। উভয়পক্ষই রণসজ্জায় সজ্জিত…
যুদ্ধ শেষ হয়েছে বিয়াল্লিশ বছর। আমাদের জন্য আরকি। আরামে আয়েশে অনলাইনে অফলাইনে মাথা কাটাকাটি করি সাচ্ছন্দে। নানা দল নানা মতে রেশারেশি আভিজাত্য।
সীমান্ত রক্ষীদের জন্য যুদ্ধ কখনও শেষ হয়না। মিজানুর রহমানের মত কিছু বীর আজও দেশের জন্য প্রাণ দেয়। মনে করিয়ে দেয় এ মাটির জন্য প্রাণ দেয়ার মত ছেলে আজও আছে। জানি মিজানের মৃত্যুর খবর তেমন সারা ফেলবে না। এর চাইতে বাইরের কোন সেলেব্রিটি মরলেও আমাদের দরদ উথলায় উঠত। আর মিজানরা এভাবে নিভৃতে প্রাণ দেয় দেশের জন্য… শহীদ মিজানুর রহমানরা। কেউ মনে করুক না করুক, আমার পক্ষ থেকে স্যালুট ভাই স্যালুট।
অয়ন
আমার ভাই মিজানুর রহমান দেশের জন্য প্রাণ দিলেন। আমাদের সরকার যতক্ষণে মায়ানমারের হাতে পায়ে ধরে মৃতদেহটা ফিরিয়ে আনলেন ততক্ষণে তা প্রায় পঁচে গেছে, ফুলে গেছে শহীদ মৃতদেহটি। গন্ধ ঠেকাতে কেরোসিন ঢালা হয় তাতে।
পঁচে ভারি হওয়ায় বিজিবি সদস্যরা সে মৃতদেহ তুলতে পারছিলেন না। উপস্থিত বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় বাঙ্গালীদের অনুরোধ করেন লাশ বহনে সহযোগিতা করার জন্য! তারাও অপরাগতা জানান! কি সম্মান!
নাফ নদীর সীমান্ত থেকে নৌকায় করে আনা হয় এই বীরের মৃতদেহটি।
আমাদের দেশের অনেক রাঘব বোয়ালরা তাদের প্রয়োজনে হেলিকাপ্টার ব্যবহার করে কিন্তু যে বিজিবি সদস্য দেশের জন্য প্রাণ দিল তার জন্য একটি হেলিকাপ্টার এর ব্যবস্থা হলো না।
ধীক্কার দেশ তোমায়, ধীক্কার। হে শহীদ মিজানুর রহমান, আমি লজ্জিত। লজ্জিত, তোমার নূন্যতম সম্মান দিতে পারলাম না। ক্ষমা করো।
খুনের বদলে খুন চাই। লাশের বদলে লাশ চাই।
আনোয়ারুল ইসলাম খান আনাস
পাইনছড়ি সীমান্ত ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান।
আপনার কপাল খারাপ রে ভাই। এই দেশে টেন্ডারবাজি আর ছিনতাই করতে গিয়ে দুই পক্ষের মারামারিতে বা পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও সেই ছাত্রনেতা শহীদ হয়ে যায়। এই দেশে এমন কি যদি কেও মরার ভাব করে শুয়ে থেকে, আর পুলিশ এসে ডাক দেয় ” হুজুর উঠেন” সেই লাশ উঠে দৌড় দেয়, সেও শহীদ হয়ে যায়। কিন্তু আপনি শহীদ হইতে পারলেন না। এই দেশের সীমান্ত রক্ষার সময় অন ডিউটি প্রান দিয়েও আপনি শহীদ না, আপনি নিহত বিজিবি সদস্য।
আমার কাছে আপনি শহীদ। আপনার বাবা একজন শহীদ মুক্তি্যোদ্ধা ছিলেন। আপনি আর আপনার বাবা আমার সশ্রদ্ধ সালাম নিন। আপনার পরিবার তাদের দুই বীর পুত্র পাঠিয়েছে এই মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে। এর চে গর্বিত পরিবার আর কে হতে পারে! আপনার পরিবার এর জন্য আমার সালাম এবং শ্রদ্ধা।
জয় বাংলা!