অন্যরকম ভালবাসা

অন্যরকম ভালবাসা

প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সেই তো কৃষাণু ঘড়ে ফিরল কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেল। বাবাকে হারিয়ে পাগলামির মাশুল দিতে হলো। কৃষাণু ঘটনার আকস্মিকতায় বিমুঢ় হয়ে গেল। থমকে গেলো তার পৃথিবী। শোকে পাথর হয়ে গেল। চোখের জল উড়ে গেল মেঘের দেশে। চোখ জল শুন্য হয়ে পড়ল কয়েক ঘণ্টার জন্য। বাবাকে অন্তিম শয্যায় শায়িত করে যখন বাড়িতে ফিরে এলো তখন হটাৎ করে চোখের জলে বাঁধ ভেঙে কৃষাণু কে ভাসিয়ে নিয়ে গেল শোকের উন্মাতাল সাগরে। কৃষাণু পাগলের মত আবার ছুটে গেল বাবার কবরের কাছে। কৃষাণু বাসায় ফিরে না সারাক্ষণ বসে থাকে বাবার পাশে। কেঁদে কেঁদে বলে বাবা আমি বুঝতে পারিনি তুমি এভাবে আমাকে একা রেখে চলে যাব । আমি আর কখনো তোমার কথার অবাধ্য হবো না। আসলে খ্যাপাটে কৃষাণু এতো কিছু ভাবে নি । কিন্তু পৃথিবী কারো নিয়মে বা কারো অধিনে চলে না অথবা থমকেও থাকে না। পৃথিবী তার আপন নিয়মেই চরাই উৎরাই পার হয়ে চলে যায়।

সেই অবুঝ কৃষাণু মায়ের কাছে ঘড়ে ফিরে এলো । মায়ের বাধ্য সন্তান হয়ে। মনে মনে ভেবে নিল না, বেঁচে থাকতে মাকে আর কষ্ট দিবনা। মায়ের চোখে আনন্দের অস্রু।মনের উঠোনে এক ফালি রোদের খেলা।দুচোখ জুড়ে স্বপ্ন কৃষাণুকে বিয়ে দিয়ে ঘড়ে একটি লক্ষ্মী বৌ নিয়ে আসবেন। মায়ের মনে মেঘ,বৃষ্টি, রোদের খেলা চলে অবিরাম।

দিনগুলি ভালই কাটছিল । কিন্তু কৃষাণুর মাথায় দেশ উদ্ধারের ভুত টা নেমেও নামে না। রক্তে যার অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মিশে আছে, সে তো আর মুখ বুজে থাকতে পারে না। অন্যায় অনিয়মের চাড়া গজালেই অচিরেই তা নির্মূল করে দেওয়ার ইচ্ছে জাগে । কৃষাণুদের পাড়ায় গড়ে উঠেছে একটি দুষ্ট চক্রের ফেনসিডেল ব্যবসা। কৃষাণু প্রতিদিনই দেখে ,ভিতরে ভিতরে তার বিদ্রোহী রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। তার শরীরের দুইশ ছয় টি হার কেঁপে উঠে প্রতিরোধের জন্য।মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে থাকে। বসে বসে একাই চিন্তা করে কি করা যায় ? কি ভাবে এইসব বন্ধ করা যায় ? ভাবতে ভাবতে হটাৎ একদিন সাত পাঁচ না ভেবেই তার প্রিয় হকিস্টিক নিয়ে একাই রাতের আঁধারে দোকানটা গুঁড়িয়ে দিয়ে আসল। কৃষাণু যত সহজ ভেবেছিল কাজটা তত সহজ নয়। এর পিছনে কেঁচো খুঁড়তে শাপ বের হয়ে আসার অবস্থা। কৃষাণু কে আবার দ্বিতীয় বার ঘড় ছাড়া হতে হলো ইচ্ছের বিরুদ্ধে। কৃষাণু এবার জীবনের জন্য চলে এলো প্রিয় জন্মস্থান ছেড়ে।বছর খানিক পর ভালো একটা চাকরী যোগাড় করে মা আর ছোট ভাইকে নিয়ে এলো নিজের কাছে ঢাকায়।

কৃষাণু এখন অনেক শান্ত। জীবন তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। মানুষ চাইলেই সব পায়না। মানুষ জীবন গড়তে চায় একরকম ভাবে । কিন্তু শেষ হয় গৎ বাঁধা জিবনের হাত ধরেই। অন্য রকম বলে কোন কথা নেই , জিবনের সবই একরকম। জন্ম ও মৃত্যুর মত একটি মানুষের জিবনের প্রতিটি ধাপ পার করাটাই শুধু সত্য। বাকিসব মিথ্যা।

কৃষাণুর মা আবার অস্থির হয়ে পড়লেন ছেলেকে বিয়ে দিয়ে লাল টুকটুকে না হোক এমন মেয়ে ঘড়ে আনবেন সে যেন তার পাগলাটে , খ্যাপাটে , গোঁয়ার ও অসম্ভব একটা সৎ ও ভালোমানুষ ছেলেটাকে বুঝতে পারে। উনি খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেলেন সেই সোনার হরিণ মেয়েটি । কিন্তু কৃষাণু আবার বেঁকে বসল বিয়ে সে করবে না ।মা ও জিদ ধরে বসে থাকলেন বিয়ে তোমাকে করতেই হবে। কৃষাণু কে বললেন তোমার নিজের পছন্দ অথবা অন্য কোন সমস্যা ? আমাকে বলতেই হবে কেন তুমি বিয়ে করবে না। আমি তার সুসট জবাব চাই। তুমি যদি একি রকম আবার পাগলামি কর আমার এ মুখ আর দেখাব না । কৃষাণু প্রমাদ গুনল। (চলবে )

তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment