অঙ্গীকার

অঙ্গীকার

দিয়া আর অমিত দুজন দুজনকে ভালবাসে গভীরভাবে নিবিড়ভাবে , অন্যভাবে,কিছুটা অন্যরকম আলাদাভাবে।ভালবাসার পরীক্ষায় অনেক চড়াই উৎরাই পার হওয়ার পর যখন দুজনে বুঝতে পারল সত্যিকারের ভালবাসার সন্ধান তারা পেয়ে গেছে তখন তারা প্রকৃতির কাছে বর চাইল যেন দুজন দুজনার কাছে প্রতিজ্ঞাভঙ্গ না করে।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দুজন দুজনার থাকবে । সাক্ষী থাকল মায়াময় নীল আকাশ , অপরূপা জোছনা, সুদর্শন চাঁদ ,মিষ্টি নদী , খ্যাপাটে সাগর ,সৌম্য পাহাড় ,শান্ত বনানী ।

প্রকৃতি ওদের ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে বর দিলেন ।দিয়া আর অমিত চির কাল বেঁচে থাকব শুধু প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলে তখনি মৃত্যু হবে।

কিন্তু কেউ যদি মনের অজান্তেও কাউকে ভালবাসে পরস্পরকে ছাড়া তখন তাদের মৃত্যু হবে । এবং তাদের বয়স টা একটা জায়গায় এসে আটকে যাবে । কখনো তারা বয়সের ভারে নুয়ে পরবে না । দিয়া আর অমিত বর পেয়ে খুব খুশী ।

এ ভাবেই কেটে যাচ্ছিল অনেক টা কাল । কিন্তু বিধি বাম। সুখ সইল না তাদের কপালে। হার্ট বুক নামে একটা সোশ্যাল নেট ওয়ার্কে দিয়া যখন থেকে জয়েন করল তখন থেকেই দিয়ার ভালবাসা খেই হারিয়ে ফেলল । সপ্ত-ঋষির সাথে জড়িয়ে পড়ল । যে নাকি দেখতে প্রেমের গ্রীক-দেবতা Eros মত । দিয়া মনের অজান্তে সপ্ত-ঋষির ভালবাসায় জড়িয়ে গেল। অমিত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দিয়া কে বার বার অনুরোধ করল বলল দিয়া তুমি এ ভুল করোনা । তুমি পৃথিবী থেকে চলে যাবে একটু ভুলের জন্য । আমি সারা জীবনের জন্য একা হয়ে যাব । প্লিজ দিয়া তুমি এই মরণ খেলা থেকে ফিরে এসো। আমাকে তুমি এখন আর ভালো না বাসো তুমি অন্য কাউকে ভালো বাসতে যেও না । আমরা প্রকৃতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।

এক এক সময়ের মানুষের যেন কি হয় ?একজনকে প্রচণ্ড ভালোবেসেও অন্য আরেকজনের সাথে মনের অজান্তে ভালবাসায় জরিয়ে যায় ভুল করে হোক বা ভালবেসেই হোক । মানুষ আসলে নিজেকেও নিজে ভালো বুঝতে পারেনা । আবেগের কাছে নতজানু হয় , বিবেকের কাছে পরাজিত হয়। ভুল করে ভুল পথেই পা বাড়ায় । এইটাই হয়ত নিয়তি। তখনি হয়ত মানুষ বলে নিয়তির লিখন না যায় খণ্ডন। সত্যি কি তাই ? মানুষের কোন হাত নেই ? কোন ঘটনা কি মানুষ ইচ্ছে করে রুখে দিতে পারেনা ? পারে তবে সময় চলে গেলে মনে কোন এক সময় , হয়ত পারতাম। দিয়াও পারল না এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে। হৃদয়টা যখন পুরুটাই সপ্ত-ঋষির দখলে দিয়া নিজের অজান্তেই ঘুমের ভিতর মরে গেল । সপ্ত-ঋষিকে কাছ থেকে দেখা হোল না । কোন কালে একসাথে বসে কথা হোল না। হোল না চোখে চোখ রাখা। তবু তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হোল । অমিতের কাছ থেকে চিরকালের জন্য চলে যেতে হোল প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের জন্য। কারণ প্রকৃতি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ কারীকে পছন্দ করেন না ,উনি তাকে শাস্তিস্বরূপ প্রিয়জনের কাছ থেকে উঠিয়ে নেন ।

অমিত এই দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেনা। প্রথমত দিয়া কি করে পারল অমিতকে ভুলে অন্যকে হৃদয়ে স্থান দিতে ? দ্বিতীয়ত দিয়ার অবর্তমানে ঝাঁকে ঝাঁকে নিঃসঙ্গতা তাকে নিঃশব্দে ঘিরে ধরেছে । শূন্যতা তার পাশে প্রতি নিয়ত ডানা ঝাঁপটায় । এই নিঃসঙ্গ অবস্থায় কতকাল থাকতে হবে জানে না অমিত । প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেছে অমিত কাউকে এখনো ভালোবাসতে পারেনি। অমিত দিয়াকে ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারবে না দ্বিতীয় বার এইটা অমিত জেনে গেছে নিজের মট করে ।কাউকে ভালনাবাসার একাকীত্ব , নিঃসঙ্গতা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত । এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় অমিতের জানা নেই। অমিত লোকালয় ছেড়ে সবকিছু ভুলে থাকার জন্য পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট একটি কুঁড়ে ঘর বানিয়ে থাকতে শুরু করল ।পাহাড়ের ফলমূল খেয়ে জীবন ধারণ করে । অমিত জানেনা তাকে কত বছর বেঁচে থাকতে হবে । অমিত কেন দিয়ার মত অন্য কাউকে ভালবাসতে পারছেনা না ? অমিতের কি মৃত্যু নেই। অমিত কি অনাদিকাল ধরে দিয়ার নামে ভালবাসার প্রদীপ জ্বালাবে ? অমিত এই নিদারুণ নিঃসঙ্গতা ভালবাসা বিহীন একাকীত্ব থেকে মুক্তি চায় । পারবে কি কোন পাহাড়ি কন্যা অমিতকে ভালবেসে এই দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তি দিতে ? কিন্তু কিভাবে ? অমিত তো দিয়াকেই হৃদয়ে লালন করে দিয়ার স্মৃতি বুকে জড়িয়েই দীর্ঘ দীর্ঘ কাল কাটিয়ে দিতে চায় ।

সব কিছুরই শেষ আছে । মানুষ জানে পৃথিবীর ও ধ্বংস আছে । এই মায়াময় পৃথিবী ও একদিন হারিয়ে যাবে।অমিত কি অপেক্ষা করবে মহাপ্রলয়ের জন্য নাকি দ্বিতীয় বার ভালবেসে স্বাভাবিক ভাবেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবে ? অমিত চায় না দ্বিতীয় বার কাউকে ভালবাসতে দিয়ার সাথে মনে মনে অমিতের চ্যালেঞ্জ । কিন্তু একটি জায়গায় মনে হয় চ্যালেঞ্জ রাখা দায় হয়ে পরে নিজের সাথে নিজের । নিয়তি ও অমিতকে সহজে ছেড়ে দিবে না ।অমিত কি পারবে প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ থাকতে ? না পারবে না । মানুষ যা চায় তা পায় না । যা পায় তা চায় না। এইটাই হোল বাস্তবতা। অমিতের জীবনেও ঘটে গেল দিয়ার পুনরাবৃত্তি। কোন এক পাহাড়ি কন্যার অবয়ব অমিতের মস্তিষ্কের অনুরণনে ঢেউ খেলে গেল। অমিতের জীবনেও কি মৃত্যু ঘনিয়ে এলো । অমিত কি নিজেও প্রকৃতির কাছে দেওয়া প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ থাকতে পারল না ? দীর্ঘ, দীর্ঘ, দীর্ঘ দিন একা থাকা নিঃসঙ্গতা ,বিরহকাতরতা ,কৃচ্ছতা সবই কি ভেস্তে গেল ?

একদিন ঝর্নার কাছে গোধূলি বেলায় পাখিরা নীড়ে ফিরছে এমন সময় পাহাড়ি-কন্যার সাথে দেখা হয়ে গেল অমিতের। সেই থেকে শুরু……। পাহাড়ি কন্যার ভালবাসার হাতছানি অমিত এই একঘেয়ে জীবনে আর উপেক্ষা করতে পারল না । বিন্দু বিন্দু করে দিয়ার প্রতি সঞ্চিত ভালবাসায় তিল তিল করে জায়গা করে নীল পাহাড়ি কন্যা। অমিত ২য় বারের মত অমৃতের সন্ধান পেয়ে গেল । দুঃসহ জীবন যখন মধুময় হয়ে উঠল পাহাড়ি কন্যার উচ্ছল ভালবাসায়। অমিতের ভিতরেও ঝিমিয়ে পরা ইচ্ছেগুলো আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল নূতন করে । যে জীবন ছিল দুর্বিসহ আর পীড়নের । সেই জীবন হঠাৎ করে আলোকিত হয়ে গেল । পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সুখ গড়িয়ে গড়িয়ে পরতে লাগলো। অমিত আবার নূতন করে বেঁচে থাকার তাগিদ অনুভব করল । মনে হোল বেঁচে থাকুক সে লক্ষ আলোকবর্ষ ধরে । ঠিক সেই মুহূর্তে অমিতের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোন এক সূর্যাস্তের সময় পাহাড়ি কন্যার কোলে মাথা রেখে অমিত চলে গেল অনন্ত কালের ঘুমের দেশে। প্রকৃতি তার কথার কোন বরখেলাপ করে না । কথার কোন নড়চড় হয় না ।

মানুষ আসলে বার বারই ভালবাসে । বার বারই বদলায় কিন্তু মানতে চায় না । সত্যি কথার মুখোমুখি হতে চায় না । ভালোমানুষি মুখোসের ভিতর নিজেকে সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখতে চায় । পাছে কেউ দেখে ফেলে। তাই হয়ত ভালবাসার জন্যই মানুষ মরে যায় । ভালবাসার জন্যই দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে চায়।

১৫।৯।১৪।

শুভ্রা নীলাঞ্জনা


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment