সংলাপ আর টেলিফোন শুধুই খেলা আর তামাসা উদ্দেশ্য একটাই ক্ষমতাটা আমার চাই

সংলাপ আর টেলিফোন শুধুই খেলা আর তামাসা উদ্দেশ্য একটাই ক্ষমতাটা আমার চাই

আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন্ পদ্ধতি বা ব্যবস্থায় হবে এ নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ও বি,এন,পি’র নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় বিরোধী জোটের মধ্যে স্ব স্ব অবস্থান ও দাবীকে কেন্দ্র করে বর্তমানে দেশে যে ভয়াবহ সহিংস পরিস্থিতি ও অনিশ্চয়তার জন্ম নিয়েছে তা থেকে রেহাই পাওয়া তথা সকল দলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা বা ঐক্যমতে পৌছার লক্ষ্যে সবার আগে দুই নেত্রীর সরাসরি কথা বলার উপর দেশের সকল মহল থেকেই বিগত বেশ কিছুদিন থেকে দাবী বা আহ্বান জানানো হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত জাতির বহুল প্রত্যাশিত ও প্রতিক্ষিত আকাংখার প্রতিফলন হিসেবে তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বা কথাবার্তা হলো, গত শনিবার ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াকে সরাসরি ফোন করে কথা বল্লেন। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য তারা দুজনের মধ্যে সরাসরি কথাবার্তা হলো ঠিকই কিন্তু জাতির যে আকাংখা ছিল এর ফলে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতার একটা পথ উম্মুক্ত হবে তা না হয়ে বরং বৈরিতা ও তিক্ততা আরো বেড়ে গেল। ইতমধ্যে উভয় নেত্রীর ফোনালাপকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার প্রচন্ড ঝড় বয়ে যাচ্ছে। প্রথমে আংশিক ও পরে উভয়ের ফোনালাপের পুরো বিষয় বা কথাবার্তার রেকর্ড জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আরো বেড়ে গেছে। সরকারী মহল বলছে বিরোধী নেত্রী টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর বাসায় ২৮ অক্টোবর আসার আমন্ত্রন গ্রহন না করে বা আন্দোলনের কর্মসূচী প্রত্যাহার না করে তার সাথে অসৌজন্য ও উগ্র আচরন করেছে। অপরদিকে বিরোধী পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে সংলাপ বা সমঝোতার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে বিরোধী নেত্রীকে উত্যক্ত বা খেপিয়ে তুলে জাতির সামনে তাকে হেয় করার জন্য ঠান্ডা মাথায় এ টেলিফোন আলাপের নাটক করেছেন।

যেহেতু উভয় নেত্রীর ফোনালাপের পুরো বিষয় বা কথাবার্তার রেকর্ড জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে গেছে তা এখন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করলে বুঝা যাবে এ নিয়ে কার অবস্থান কতটুটু স্পষ্ট ও স্বচ্ছ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নির্বাচন বিষয়ে সংলাপের জন্য সরকারের আগে উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে বিরোধী পক্ষের তরফ থেকেই প্রথমে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বি,এন,পি’র চীফ হুইপসহ ৩-জনের প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের কাছে প্রায় ১৫ দিন আগে সংলাপের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে এসেছিল, চিঠি গ্রহন করে আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ নিয়ে আলোচনা করে তিনি সংলাপে বসার ব্যাপারে চিঠির জবাব দিবেন। কিন্তু এরপর অনেক দিন পার হয়ে গেল আওয়ামী লীগ তথা সরকারের তরফ থেকে চিঠির কোন জবাব দেওয়া হলোনা। এরমধ্যে বিরোধী জোট তাদের পূর্ব নিদ্ধারিত ২৫ অক্টোবরের জনসভা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড় অবস্থান নেয়ায় সরকারের তরফ থেকে ( তথ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে ) হঠাৎ জানানো হল যে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ফোন করবেন। সংলাপের জন্য বিরােধী জোটের তরফ থেকে দেয়া আনুষ্ঠানিক চিঠির কোন জবাব না দিয়ে হঠাৎ বিরোধী নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন করার খবরটা অস্বাভাবিক মনে হলেও সাধারন মানুষ খুশি হয়েছিল বহুদিন পর হলেও দুই নেত্রীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হলে সংকট সমাধানের পথ অনেকটাই খুলে যাবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ফোনটার জন্যও অপেক্ষার পালা শুরু হল, তথ্যমন্ত্রীর তথ্যের উপর বিশ্বাস করে তখন থেকেই খালেদা জিয়া প্রায় প্রতিদিনই তার ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর ফোনের জন্য ২/৩ ঘন্টা বসে অপেক্ষা করতে থাকেন, কিন্তু ফোন আর আসেনা। উল্লেখ্য, কথায় আছে অপেক্ষা অনেক বড় শাস্তি ( ডধরঃরহম রং ঃযব ড়িৎংঃ ঢ়ঁহরংযসবহঃ )। যখন খালেদা জিয়া তার ২৫ অক্টোবরের জনসভায় আন্দোলনের কর্মসূচী ( ২৭ – ২৯ অক্টোবর ) ঘোষণা করলেন তারপর ২৬ অক্টোবর ( আন্দোলনের কর্মসূচী শুরু হওয়ার ঠিক পূর্ব মূহুর্তে ) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ফোনটা করলেন। ফোন করেই শেখ হাসিনা বল্লেন তিনি ঐদিন দুপুর ১টা থেকেই খালেদা জিয়াকে লাল টেলিফোনে বহুবার ফোন করেছেন, কিন্তু ফোন কেউ ধরেনি। জবাবে খালেদা জিয়া বল্লেন “না ফোন করেননি, কথাটা আপনি সত্য বলেননি।” শেখ হাসিনা আবারও বল্লেন তিনি কয়েকবারই ফোন করেছেন এবং রিং হয়েছে, খালেদা জিয়া তখন কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বল্লেন “লাল টেলিফোনটাতো অনেক দিন থেকেই খারাপ, এটাতে রিং হবে কি করে, ডেডতো ডেডই, আপনি কি এতই শক্তিশালী যে আপনি ফোন করলে মরা টেলিফোনও জীবিত ( রিং বেজে উঠে ) হয়ে যায় ?” এভাবে কথা বলার শুরুতেই খালেদা জিয়া স্বাভাবিক বা নম্র কন্ঠে কথা বলার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। খালেদা জিয়া হয়ত মনে করেছিলেন শেখ হাসিনা দুপুর ১টা থেকে তাকে ফোন করার কথাটা সত্য বলছিলেননা। এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সন্দেহ করার অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, দেশের এমন দুইজন ব্যক্তির টেলিফোনে কথা বলার দিন ও সময় তাদের ব্যক্তিগত স্টাফরা আগেই নির্দ্ধারন করে থাকেন, কোন্ টেলিফোনে ( লাল না নীল ) ফোন করবেন তাও নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। তখন আর টেলিফোন খারাপ ছিল বা একজন অপরজনকে ফোন করে না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। তাছাড়া খালেদা জিয়ার সাথে যদি শেখ হাসিনার সত্যিই ফোনে কথা বলার উদ্দেশ্য থাকত তবে ২৬ অক্টোবর দুপুরে লাল টেলিফোনে না পেয়ে তখন কেন মোবাইলে ফোন করা হলোনা ? তাহলে কি খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের কর্মসূচী প্রত্যাহারের সুযোগ দেওয়ার মত সময় না রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে বেকায়দায় ফেলার জন্য ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় ফোনটা করা হয়েছিল ? এখানে সন্দেহ করার মত আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ২৬ তারিখ সন্ধ্যায় যখন শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ফোন করেন তখন সেখানে সাংবাদিক ও ক্যামেরা ম্যানদের হাজির রাখা হয়েছিল

, তাহলে ঐদিন দুপুর ১টায় যখন শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন বলে ফোনে বার বার খালেদা জিয়াকে বলছিলেন তখন কেন সেখানে সাংবাদিক ও ক্যামেরামেনদের হাজির রাখা হয় নাই ? তাহলেত শেখ হাসিনার কথাটার সত্যতার প্রমান থাকত। এসব পারিপার্শিক বিষয় ও সন্দেহের কারণেই খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার সাথে কথা বলার সময় স্বাভাবিক মেজাজে কথা বলতে পারনেনি বলে মনে হয়।

এর পরের বিষয় হলো শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে তার গনভবনের বাসায় এক বেলা খাবারের দাওয়াত দিলেন ( যদিও দেশের সাধারন জনগনের কাছে খাবারের বিষয়ের চেয়ে দুনেত্রীর সমস্যা সমাধানে সরাসরি যোগাযোগ বা আলোচনার বিষয়টাই বেশী গুরুত্বপূর্ন )। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে আন্তরিকভাবেই যদি খালেদা জিয়াকে এক বেলা খাবারের জন্য শেখ হাসিনার বাসায় দাওয়াত দেওয়ার ইচ্ছা থাকত বা সংকট নিরসনে আলোচনার জন্য খালেদা জিয়ার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার সত্যিকার সদিচ্ছা থাকত তবে সে দাওয়াতটা বা ফোনটা আরো আগে ( ১৮ – ২৪ অক্টোবর ) বা খালেদা জিয়ার হরতালের কর্মসূচির পরে কেন করা হলোনা ? শেখ হাসিনা ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় হরতালের কর্মসূচী শুরু হওয়ার আগে ফোনটা করলেন এবং খালেদা জিয়াকে তখন অনুরোধ করলেন হরতাল প্রত্যাহার করে ২৮ অক্টোবর তার বাসায় খাবারের জন্য যেতে। অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনার ফোন করার উদ্দেশ্যটা তখন খাবারের দাওয়াতের আন্তরিকতা বা সংকট নিরসনে আলোচনার সদিচ্ছার পরিবর্তে হরতালটা প্রত্যাহার করা অথবা ফোনে অনুরোধ করার পরেও খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহার করেন নাই বা তার দাওয়াত কবুল করে আলোচনা করতে চাননি বলে দেশবাসির কাছে খালেদা জিয়াকে হেয় করা বা ভীলেন বানানোর প্রচেষ্টা হিসেবে পরিনত হল এবং এখন তাই করা হচ্ছে। এসব বিষয়ও খালেদা জিয়াকে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে প্রভাবিত করেছে বলে মনে হয়।

শেখ হাসিনা যখন খালেদা জিয়াকে হরতাল প্রত্যাহার করতে বল্লেন তখন খালেদা জিয়া জবাবে বলেছিলেন এখন হরতাল প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়, কারণ তার শরীকদের সাথে আলোচনা ছাড়া সে একা কিভাবে হরতাল প্রত্যাহার করবে। তিনি শেখ হাসিনাকে আরো বলেছিলেন আপনি যদি একদিন আগে বা তার জোটের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করার সময়টা রেখে ফোনটা করতেন তবুও তা করা যেত, এখনতো তার লোকজন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ধর পাকড় এড়াতে কে কোথায় আছে তাও তিনি জানেননা। তারপরেও শেখ হাসিনা যখন চাপ দিচ্ছিলেন আপনি একাইতো হরতাল প্রত্যাহার করতে পারেন, তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন তাহলে আপনি নীতিগতভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে আলোচনায় বসতে রাজী আছেন বলেন তাহলে আমি হরতাল এখনই প্রত্যাহার করব। অর্থাৎ ১৮-দলীয় জোটের এ দাবী মানলে খালেদা জিয়া একাই তার নিজ দায়িত্বে হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে পারেন, তখন শরীকরা আর কোন প্রশ্ন তোলবেনা। কিন্তু তাদের ( জোটের ) দাবী মানা না হলে তাদের সাথে আলোচনা ছাড়া খালেদা জিয়া এককভাবে হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলে তার শরীকদের কাছে তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। এটাই তিনি শেখ হাসিনাকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেখ হাসিনা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাকে শুধু হরতাল প্রত্যাহারের কথাই বলছিলেন, এটাও খালেদা জিয়াকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে প্রভাবিত করেছিল।

তাছাড়া শেখ হাসিনার সবচেয়ে বেশী আপত্তিকর বক্তব্য ছিল খালেদা জিয়াকে তার বাসায় দাওয়াত দিতে গিয়ে অতীতের পুরাতন ক্ষতে আঘাত দেওয়া, এত দীর্ঘ সময় দুজনের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বা কথাবার্তা যেখানে হয়না এবং বিগত প্রায় ৫ বছরের তিক্ততার পর যখন একে অপরজনকে তার বাসায় খাবারের জন্য দাওয়াত দেয় তখন কি কেউ অতীতের প্রসঙ্গ তুলে ? কিন্তু শেখ হাসিনা মনে হয় পরিকল্পিতভাবেই বেশ ঠান্ডা মাথায় ও নরম সুরে খালিদা জিয়াকে ১৫ আগষ্টের কথা, জন্মদিনে কেক কাটার কথা, ২১ আগষ্টের কথা একবার নয় কয়েকবার উচ্চধারন করে খালেদা জিয়াকে বিব্রত করার চেষ্টা করেছিলেন। এতে খালেদা জিয়া অসন্তুষ্ট হলেও শেখ হাসিনাকে খোচা দেওয়ার উদ্দেশ্যে একবারও শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৫ দিনের মাথায় জিয়ার নিহত হওয়া, ৭ নভেম্বরের বিপ্লব দিবসের ছুটি বাতিল করে দেওয়া, জিয়া বিমান বন্দরের নাম মুছে ফেলা, ৪০ বছরের আবাসস্থল থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করা, ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার করা হলেও খালেদা জিয়া বা তার ছেলেদের কোন মামলা প্রত্যাহার না করা এসব কোন বিষয়ই মূখ খুলেননি। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা এবার ক্ষমতায় আসার পর বিগত প্রায় ৫ বছর যাবতই তিনি নিজে ও তার দলের লোকেরা দেশে বিদেশে সব জায়গায় সব জনসভায় সব অনুষ্ঠানে এমনকি জাতীয় সংসদেও জেনারেল জিয়া, খালেদা জিয়া ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে কুৎসিত, অশালীন ও অশ্রাব্য কটুক্তি ও মন্তব্য অব্যাহত রেখেছেন। অতএব, খালেদা জিয়াকে তার বাসায় দাওয়াত দেওয়ার সময় এসব প্রসঙ্গ তুলে খোচা মারাটা কি দাওয়াত দেওয়ার আন্তরিকতা বা সংকট নিরসনে আলোচনার সদিচ্ছার বহি:প্রকাশ ? আর এজন্য যদি টেলিফোনে কথাবার্তায় খালেদা জিয়া উষ্মা প্রকাশ করেন তবে এটা কি অপ্রত্যাশিত বা অস্বাভাবিক ? টেলিফোনে দাওয়াত দেওয়ার সময়েই যদি এমনভাবে খোচা মারা বা পুরাতন ক্ষতে আঘাত দেওয়া হয় তবে শেখ হাসিনার বাসায় গেলে কি তার চেয়ে আরো বেশী করা হতোনা ? এসব কারণে সংগতভাবেই সাধারন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনার টেলিফোন করাটা কি সত্যিই খাবারের ও সংকট নিরসনে আলোচনার জন্য দাওয়াত দেওয়া নাকি লোক দেখানো তামাসা ও খালেদাকে পরিকল্পিতভাবে উত্যক্ত করার অপকৌশল।

সবশেষে পুরো ফোনালাপ জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়ার বিষয়টাও আলোচনার দাবী রাখে। ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় যখন শেখ হাসিনা মোবাইলে খালেদা জিয়ার সাথে কথা শুরু করেন তখন সেখানে সাংবাদিক ও ক্যামেরামেন ছিল, কিন্তু আলাপ শুরু হওয়ার কিছু সময় পরেই তাদেরকে বিদায় করে দেওয়া হয়, পুরো ৩৭ মিনিট সাংবাদিক ও ক্যামেরামেন সেখানে ছিলনা। তাহলেত ঐদিনই তাদের কথোপকথনের পুরো বিষয় গনমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যেত। ফোন করার পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্টরা হয়ত মনে করেছিল তাদের উদ্দেশ্য অনুযায়ী যদি কথোপকথন না হয়, তাই পুরো সময় সেখানে সাংবাদিক ও ক্যামেরামেনদের রাখা হয়নি। পরবর্তিতে কথোপকথন শেষ হওয়ার পর বা রেকর্ড করার পর যখন সরকারী মহল মনে করল তাদের উদ্দেশ্য সাধন হয়েছে তখন তথ্যমন্ত্রী বল্লেন দুনেত্রীর পুরো কথোপকথন জাতির জানা উচিত এবং তা প্রকাশিত করা হবে। কিন্তু তার আগেই তা কিছু কিছু গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে যায়, তথ্যমন্ত্রী তখন বল্লেন এটা খতিয়ে দেখা হবে কিভাবে বা কারা এটা লিক-আউট করেছে। এসব কিছু পর্যালোচনা করলে এর পেছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে তা সন্দেহ করার যথেষ্ঠ কারণ আছে বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফোনালাপ রেকর্ড করার আগে বা তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার আগে বিরোধী দলীয় নেত্রীর অনুমতি নেওয়া হয় নাই। তাছাড়া এটা প্রকাশিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তার লোকজন খালেদা জিয়াকে যেভাবে ও যা যা বলে সমালোচনা করা দরকার তাই শুরু করে দিয়েছে। এতেই প্রমানিত হয় এটা প্রকৃত অর্থে খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনার বাসায় খাবারের দাওয়াত দিতে বা সংকট নিরসনে আলোচনার জন্য টেলিফোন ছিলনা। খালেদা জিয়াকে দেশবাসীর কাছে হেয় প্রতিপন্ন করাই ছিল আসল উদ্দেশ্য।

শেখ হাসিনার সরকার যদি বিরোধী দলের সাথে সংলাপ বা আলোচনায় সত্যিই আগ্রহী হত তবে এ আলোচনা আরো অনেক আগেই শুরু করার উদ্যোগ নিত। সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদলকে বহুদিন থেকেই বলে আসছিল সংসদে এসে যাতে তাদের প্রস্তাব উত্থাপন করে, বিরোধীদল তাই সংসদের শেষ অধিবেশনে যোগ দিয়ে তাদের দাবী / প্রস্তাব উত্থাপন করে, কিন্তু সরকারী দল এটাকে বিধিসম্মত হয় নাই বলে এ নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে সংসদে বিরোধী পক্ষকে আরো তীর্যকভাবে আক্রমন করে। পরবর্তিতে বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদককে আলোচনা বা সংলাপের জন্য আনুষ্ঠানিভাবে চিঠি দেওয়া হয়, এ ব্যাপারেও সরকারী মহল থেকে কোন সাড়া মেলেনি। এরপর মঞ্চস্থ করা হয় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার টেলিফোন নাটক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার শুধু তার অবস্থান পরিবর্তন করছেন। বহুদিন যাবত বলে আসছিলেন সংবিধান অনুযায়ী তার সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, এখন বলছেন সর্বদলীয় নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, এটা কোন্ সংবিধান বলে ? একবার বলছিলেন সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন করবেন, এখন বলছেন সংসদ মন্ত্রীসভা এবং প্রধানমন্ত্রী স্বপদে বহাল থেকেই নির্বাচন করবেন। কিছুদিন আগে শেখ হাসিনা বিদেশের মাটিতে বসে বলেছিলেন তিনি দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ্ ছাড় দিতে প্রস্তুত আছেন, কিন্তু তার এই সর্বোচ্চ ছাড়ের কোন আলামত এখনও দেশবাসী দেখতে পাচ্ছেনা। অর্থাৎ মোদ্দা কথা বা অবস্থাদৃষ্টে যা মনে হয় তা হলো শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসা বা থাকার নিশ্চয়তা যেভাবে পাবেন সেভাবেই নির্বাচন করবেন। বিরোধী দল, দেশের বিদেশের শুভকাংখী মহল যাই বলুক, নির্বাচন একতরফা বা অগ্রহনযোগ্য হউক শেখ হাসিনার সরকার তার ইচ্ছানুযায়ীই নির্বাচন করবে। এটাই শেখ হাসিনার শেষ ইচ্ছা বা খায়েশ। বিরোধী দলের সাথে সরকারের আলোচনা বা সংলাপ নিয়ে যে কালক্ষেপন বা কারসাজি করা হচ্ছে তাতে তাই মনে হয়।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment