রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একক এবং একা

রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একক এবং একা

আওয়ামীলীগের বর্তমান অবস্থা দেখে একটা গানই ঘুরে ফিরে মনে আসছে, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে। একলা চল, একলা চল, একলা চল রে।গানটিকে ঘুরিয়ে গাওয়া যায়, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা নির্বাচন কর রে।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে আসায় অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মুখে আওয়ামীলীগের বন্ধুহীন হবার আশংকা প্রকাশ করতে দেখেছি। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং সেই সাথে এখন জাতীয় পার্টির সম্পৃক্তহীনতায় আসন্ন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও নানা প্রশ্ন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।

সর্বদলীয় সরকারের নামে মূলত আওয়ামী ঘরানার বাহিরে জাতীয় পার্টিকে টেনে এনে আওয়ামী শিবিরে দুদিন আগেও উল্লাস প্রকাশ দেখেছি। মহা উত্সবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান বিরোধীদল আসলে আসুক, না আসলে নাই এমন একটা অহমিকাভাব আওয়ামী নেতাদের মাঝে প্রকটভাবেই দেখা দিয়েছে।

এরশাদের হঠাত পল্টি খেয়ে উল্টাপাশে দৌড় দেয়ায় দুদিন পূর্বের উল্লসিত আওয়ামীলীগ শিবিরে বর্তমানে হতাশা আর অন্যদিকে দুদিন পূর্বের হতাশ বিরোধী শিবিরে বর্তমানে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগের সর্বদলীয় গালগপ্পের ব্যানারে একক নির্বাচনের বাড়া ভাতে জাতীয় পার্টি কি তবে ছাই দিয়ে ডিগবাজি দিল? আওয়ামীলীগের হিসেবে কিছুটা হলেও গড়মিল তো হলই। এখন দেখা যাক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাকুল কি উপদেশ দিয়ে এই পরিস্থিতি সামলে নেবার ব্যবস্থা করেন?

কথায় কথায় আওয়ামী নেতারা বলছে, বিরোধীদলকে দেয়া সংলাপের দাওয়াত তো বহালই আছে। ওরা আসলেই সংলাপ হবে। কিন্তু সংলাপ, সমঝোতা যাই বলি না কেন সেসব করার কোনো সদিচ্ছা তো দুই দলের কারো মাঝেই দেখা যাচ্ছে না।

বিরোধীদল যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে সাথে নিয়ে পুরান ফর্মুলাঅবরোধেরসাথে নিউ এডিশন হিসেবে পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে সরকার হটানোর আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে সরকারীদল ইচ্ছেমত বিরোধী শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে আলোচনার পথ প্রায় রুদ্ধ করে দিয়েছে। আর জানুয়ারী তো সন্নিকটে, আলোচনার সময়ই বা কই?

বস্ত্রমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে, বিরোধীদলের সাথে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়, নির্বাচন হবেই হবে। ব্যাস ল্যাটা চুকে গেল। তাহলে বিদেশী কূটনীতিকেরাই বা কেন চিঠিপত্র হাতে নিয়ে আসছে, আর কেনই বা ভারতে গিয়ে এদেশের নেতাগণ দাদাদের পায়ে পড়ছে? এইসব নাটকের অর্থ কি?

বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ছোটখাটো দলগুলো ছাড়া জানুয়ারির নির্বাচন কতখানি গ্রহনযোগ্য হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। খেলার মাঠে যদি প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে তবে কি সেই খেলাকে খেলা বলা যায়? আওয়ামীলীগ নির্বাচনে কার সাথে আসলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে? নিজেদের দলের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র্য প্রাথীদের সাথে? সে তো যেই লাউ, সেই কদু। একই গাছ থেকেই উত্পাদিত সবজি।

কথা অনিস্বীকার্য যে, রাজনৈতিক ময়দানে বরাবরই আওয়ামিলীগ বন্ধুহীন। আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক কৌশলের কারণে ছোটখাটো দলগুলোর সাথে জোট বাঁধলেও, সেই জোটগুলো কখনই আওয়ামীলীগের কোনো সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা তো দুরের কথা, আওয়ামীলীগের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষকেই বাধাগ্রস্থ করতে পারেনি। আওয়ামীলীগ এদের দ্বারা লাভবান হবার থেকে বরং এইসব চুনাপুটি দল উল্টা আওয়ামীলীগের ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভুক্ত হয়ে হার জিরজিরে শরীরে কিছুটা মাংস লাগিয়ে নিতে পেরেছে।

বলতে দ্বিধা নেই, মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী অসাম্প্রদায়িক আওয়ামীলীগ আর বর্তমানের ক্ষমতালিপ্সু আওয়ামীলীগের মধ্যে আদর্শগত চেতনার যোজন যোজন ফারাক। লুটেরা দল বলে খ্যাত বিএনপির সাথে পাল্লা দিয়ে এই আওয়ামীলীগও কি গণতন্ত্র লুট করার পায়তারা করছে না?

এভাবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং সেই সাথে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না এলে ৫ জানিয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন নির্বাচনকে অবশ্যই নিরপেক্ষতার তকমা দেয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে পরিচিত দলটির কাছে কি তবে এভাবেই অনেক কষ্টে অর্জিত গণতন্ত্র লুন্ঠিত হবে? আওয়ামিলীগ কি একক নির্বাচন করে একাই থেকে যাবে?


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment