মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে…

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে…

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ও বেলারুশে একটি অগুরুত্বপূর্ণ সরকারী সফর শেষ করে সপ্তাহকাল অতিবাহিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবার মানোন্নয়ন না হওয়া নিয়ে বেসরকারি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের কাছে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিমানমন্ত্রী “আসলে করেন কি”, এ নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন বলে জানা যায়। সেই সাথে আমরা এও জানতে পারি যে, কেবল আমতা আমতা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাব দিয়ে সেদিনের মত ফারুক খান উতরে গেছেন।

কিন্তু বিমানমন্ত্রীকে কেন এতদিন পর এই প্রশ্ন করা হলো আমরা সাধারণ জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছ থেকে জানতে চাই। আমরা জানতে চাই আপনার দীর্ঘ দিনের ক্ষমতার আরোহনে কি আপনি একবারও বিদেশ ভ্রমন করেন নাই? যদি করে থাকেন তাহলে একবারও কি শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশ গমন করেন নাই? আপনি কি কখনই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবা গ্রহণ করেন নাই? যদি করে থাকেন তখন কেন এই অনিয়ম বা সেবার ঘাটতি আপনার চোখে পড়ে নাই?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার আশেপাশে কি চাটুকারদের এতই ভিড় ছিল যে আপনি সেসময় অনিয়ম দেখার সময় পান নাই? নাকি প্রত্যেকবার আপনি ভ্রমণ করবেন জন্য বিমান তাদের অসঙ্গতি ও ত্রুটিবিচ্যুতি আড়াল করার জন্য বাড়তি কেয়ার নিয়েছিল? এইবারের সফরে কি আপনি ভিভিআইপি সেবা না নিয়ে আমাদের মত সাধারনদের মত ভ্রমন করেছিলেন? জানতে ইচ্ছে করে কেন এতদিন পর আপনি আপনার অতি গুণধর মন্ত্রীদের একজনকে এই প্রশ্ন করে বসলেন? বেচারাকে কেন খামাখা সবার সামনে অপদস্থ করলেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একবার ভালোভাবে যদি আম-জনতার চোখে নিজের সরকারের দিকে তাকিয়ে দেখতেন, তবে দেখতে পেতেন আপনার হাতে গোনা দুই-একজন মন্ত্রী ছাড়া কেউই কিছুই করেন নাই। শুধু হাস্যকর কথা ও জোকারের মত অঙ্গীভঙ্গি করে “রাবিশ” জনগনের কাছে আপনার মন্ত্রীগণ নির্মল বিনোদনের খোরাক হয়েছেন আর টিভি চ্যানেলগুলোর টিআরপি বাড়িয়েছেন।

তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যেহেতু ক্ষমতাধর আওয়ামীলীগের সভাপতি, সেক্ষেত্রে আপনার মন্ত্রীগণ ক্ষমতার এই সাড়ে চার বছরে দেশের জন্য কেউ কিছু না করলেও, সে অভাব পূরণ করছে আপনার গুণধর “মাসুম ছাত্রলীগ”। এরাই আপনার পার্টির ঝান্ডা পিটিয়ে স্বগর্বে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে আওয়ামীলীগ এখনো জীবিত আছে।

কোথায় নেই আপনার ছাত্রলীগ? যেখানেই টাকার গন্ধ, সেখানেই ছাত্রলীগ। ভাবখানা এমন যে, বাংলাদেশ ব্যান্ক যত টাকা ছাপাবে, দেশের যেখানেই যত টাকার লেনদেন হবে সব টাকার একচ্ছত্র মালিক ছাত্রলীগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যেহেতু তাদের অভিভাবক, তারাই তো আপনার উত্তরসুরী। দেশের সকল সম্পদে তো “মাসুম” ছাত্রলীগের অধিকার রয়েছেই, এ কথা আমরা মেনেই নিয়েছি।

যেখানেই সরকারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদের জন্য মুখ খুলেছে, যেখানেই ন্যায্য দাবির জন্য কেউ প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা করছে, সেখানেই আপনার ছাত্রলীগ লগি-বৈঠা, চাপাতি ও লেটেস্ট ডিজাইনের পিস্তল নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছে। খুন করার লাইভ টেলিকাস্টের রেকর্ড গড়ে আপনার ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে।

একা আপনার ছাত্রলীগ যা করছে, যেভাবে আপনার আওয়ামীলীগের জন্য জান-প্রাণ কবুল করে দিচ্ছে তা আপনার আবুল, ফারুক, দিপু, ইনু, মাল-মুহিত কিংবা সুরঞ্জিতেরও করার ক্ষমতা নেই!

অতি তৎপর গুণধর বেপরোয়া ছাত্রলীগ কিংবা অতি অলস মন্ত্রিকুলের কর্মকান্ডের কথা নাহয় আপাতত কিছুটা দুরেই রাখলাম, একজন সাধারণ জনগণ হয়ে জানতে ইচ্ছে করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি করেন কি?

এইসব অনিয়ম-দুর্নীতি কি দেখার দায়িত্ব আপনার নয়? কারো বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব নয় জানি, কিন্তু প্রকাশ্যে টিভি ক্যামেরার সামনে খুন হওয়া থেকে তো কাউকে রক্ষা করা যেত! অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তো অন্যায় রোধ করা যেত।

জিএসপি বাতিল হবার আগে, বানিজ্যমন্ত্রী কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোথায় কি করছিলেন সে তো অভিভাবক হিসেবে আপনি খোজ নিতেই পারতেন। বিরোধীনেত্রীর লেখা আর্টিকেলের পিছনে যে সময় ও ধৈর্য আপনি ব্যয় করেছেন তার অর্ধেকেরও কম সময়ে আপনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতেন, এর সমাধান কি হতে পারে তা নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে পারতেন।

হেফাজতের পিছনে যে সময় ও শক্তি আপনার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যয় করছে, তার থেকে অনেক কম লোকবল দিয়ে চাদাবাজি, সন্ত্রাস, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, ও খাদ্য বাজারে ভেজাল নির্মূল করা যেত।

ড. ইউনুসের পিছনে আপনার যেই পরিমান গবেষণা করতে হয়েছে তার থেকে অনেক কম গবেষণা করে দেশের বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, হলমার্ক জালিয়াতি, শেয়ার বাজার ধ্বস সমস্যার সমাধান করা যেত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা জনগণ আপনাকে ভোট দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি বানিয়েছি। কাজেই আমাদের জনগনের কাছে আপনার সরকারের কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দেবার দায়- দায়িত্ব কিন্তু শুধু আপনারই। তাই আবার বিনীতভাবে জিগ্গেস করছি, ক্ষমতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের জন্য আপনি করেছেন কি?


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment