ব্রেইন কতটা ডিফেকটেড হলে ভন্ডামী মানায় ?

ব্রেইন কতটা ডিফেকটেড  হলে ভন্ডামী মানায় ?

……. মে মাসের মাঝামাঝি এক দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে হাঁটতে বেরিয়েছি। সাথে আমার সহকর্মী ও বন্ধু লরা । গণজাগরণের পর থেকে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শুনে এবং ইন্টারনেট ঘেঁটে সে মোটামুটি আমার চেয়ে বড় কাবিল । প্রায়ই অগুনিত প্রশ্ন করে অস্থির করে । তার চোখে রাজ্যের বিস্ময় ঝরে পড়ে যখন সে শোনে স্বাধীন বাংলদেশে এইসব খুনী অমানুষদের স্বপক্ষে তাদের রক্ত সম্পর্কের মানুষ ছাড়াও অন্যরা কথা বলে ! আমরা হাঁটছিলাম সিডনীর ব্যস্ত অফিসপাড়ায় পিট্ স্ট্রিট ধরে, যার এক মাথা মিশে গেছে সিডনী হার্বার এর কিনারে, জায়গাটা অপেরাহ হাউসের কাছাকাছি ।

শীত আসি আসি করছে, স্নিগ্ধ আবহাওয়া । হটাত লরা বলে উঠলো – লুক ফারিনা, বাংলাদেশী ফ্ল্যাগ ! তাকিয়ে দেখি একজন তরুণ এগিয়ে আসছেন উল্টোদিক থেকে, মাথায় একটা সাদা ব্যান্ড, তাতে বাংলাদেশের পতাকা । দেখে মনটা নেচে উঠতেই একটা ধাক্কা খেলাম । পাশ দিয়ে ওই তরুণ ও তার বিদেশী সাথী হেঁটে যাওয়ার সময় দেখি ওই ব্যান্ডে লেখা – স্টপ জেনোসাইড ! এক ঝলকে খেয়াল করলাম ছেলেটির থুতনির আগায় কিছু দাড়ি এবং প্যান্ট গোড়ালীর উপরে (পোশাক কে কটাক্ষ করছিনা, এমন পোশাক অনেক দেশপ্রেমিকও পরেন জানি, তবে ঐক্ষেত্রে হিসাব মেলানো সহজ হয়ে গিয়েছিল) । আমার বুঝতে বাকী রইলো না, সে ৫ই মে শাপলা চত্বরের তথাকথিত গণহত্যা (!) কে ইঙ্গিত করছে । কেন যেন লরাকে এই নোংরা বিষয় নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছা করছিল না । কাটিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শুধু বললাম, স্টপ জেনোসাইড ইস আ ফেমাস ডকুমেন্টারী ফিল্ম অন ১৯৭১ ওয়ার !

এই বিদেশ বিভূঁইয়ে এরপরও বিভিন্ন সময়ে পরিচিত অপরিচিত কিছু আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভোগা হতভাগ্যকে স্ট্যাটাসে, কমেন্টে, ঘরে, বাইরে, আড্ডায় হেফাজতি প্যাচাল পাড়তে শুনেছি । আইডেনটিটি ক্রাইসিস কথাটা এজন্য আনলাম যে, আমার মনে হয় এদের একটা বড় অংশ ঠিক বুঝতে পারে না তাদের অবস্থান কোথায় । এরা হয় বিদেশী পাসপোর্ট ধারী নয়তো পাসপোর্টের জন্য মুখিয়ে আছে । অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্টের দেশে থেকে, ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে, গায়ে গুচি বা হুগো বস মেখে, পোলো বা টমি হিল্ফিগারের শার্ট পরে, চোখে রেব্যান বা কেলভিন ক্লেইনের সানগ্লাস লাগিয়ে, বি এম ডাব্লিউ বা এস ইউ ভি হাঁকিয়ে, আইফোন ফাইভে ব্রাউজ করতে করতে হেফাজতি গণহত্যার ভিডিও শেয়ার দেয় । কারণে অকারণে ধর্ম টানলেও চড়া সুদে ব্যাংক লোন নিয়ে গাড়ী বাড়ী সবই কেনে । যে দেশে থাকে, না পারে সেদেশী বনতে, না পারে বাংলাদেশী পরিচয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে সগর্বে আত্মপ্রকাশ করতে । মাঝখান থেকে বিজাতীয় একটা ভড়ং ধরে বাঁদর নাচ নাচতে থাকে ।

হেফাজতের ওয়েবসাইটে দেখলাম লেখা :

“একুশে টিভির ক্যামরোম্যান জানিয়েছেন, লাশের সংখ্যা হবে প্রায় ২৫০০, এমনকি ৫ ট্রাক লাশ যেতে তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। এসময় ভিডিও করার কারনে তাকে ও তার সহকর্মীকে মারধর করে একুশে টেলিভিমনের ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে র‌্যাব। সময় টিভির কাছে লাশবোঝাই ট্রাকগুলোর ছবি আছে। বেসরকারী হিসাব মতে ২৫ ট্রাক লাশ নিয়ে যাওয়া হয় মাতুয়াইলের দিকে, ১৬ ট্রাক লাশ যায় পিলখানায়।”

একুশে টিভির ক্যামেরাম্যান কি চিত্রগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন নাকি পরিসংখ্যান তৈরী করতে ঠিক বুঝলাম না ! তবে এই হিসাব অবশ্য আমার কাছে সঠিক মনে হয়েছে । সহস্র লাশ গুমের হিসাব আমি যেভাবে মিলিয়েছি :

রিয়েল লাইফ সিনারিও – মা খালাদের বলতে শুনেছি, বাসায় পার্ট টাইম গৃহকর্মী রাখলে একটু সতর্ক থাকতে হয়। খুচরা টাকা, ছোট খাটো স্বর্ণের জিনিস অথবা মোবাইল ফোনটা একটু সামলে রাখতে হয় । এর পরেও কখনো কখনো আদা, রসুন, পেয়াঁজ, ইত্যাদি ঘন ঘন শেষ হয়ে গেলে গৃহকর্মীর দিকেই সন্দেহের তীর উঠে কেননা আশে পাশে কেউ না থাকলে টুক করে শাড়ির আঁচলের কোনায় গিট্ বেঁধে একটুকরো ছোট জিনিস নিয়ে যাওয়া বেশ সহজ।

ম্যাচিং সিনারিও : টিভি ক্যামেরা, সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার এদেরকে এতো করে বলার পরেও এরা চোখ কান বন্ধ রাখে । এদের সামনে দিয়ে এতো লাশ গুম হলো অথচ এরা একটু সতর্ক হলেই এই গুম এড়ানো যেত !

কনক্লুশন : পূর্ণবয়স্ক মানবসন্তানের লাশের সাইজ আদা রসুনের টুকরার সমান আর সরকার ঠিকা কাজের বেটি … !

ফেইরি টেইল সিনারিও – “স্লিপিং বিউটি” নামে ভিনদেশী রূপকথার একটা গল্প আছে । রাজকন্যা, অভিশাপে পড়ে শত বছরের জন্য ঘুমিয়ে থাকে। রাজপুত্র এসে চুমু খেয়ে তার ঘুম ভাঙ্গায় । গল্পের শুরুতে যে অভিশাপটা দেয়া হয়, তা হলো ১৬ তম জন্মদিনে রাজকন্যার মৃত্যু হবে একটি চরকায় হাত দিয়ে। কিন্তু সেই অভিশাপকে এক পরী টেনেটুনে ঘুম পর্যন্ত নামিয়ে আনে। এর পরেই এডভেঞ্চার শুরু ।

ম্যাচিং সিনারিও : চ্যানেল আই সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে যে রাস্তায় পড়ে থাকা হেফাজত সমর্থকদের “হুজুর উঠেন উঠেন … বাড়ি যান ……. ওই দৌড়া দৌড়া ” টাইপ ঝাঁকানি দিয়ে যৌথ বাহিনী রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিচ্ছে। পড়ে থাকা মানুষ গুলো প্রথমে জাগে, তারপর উঠে বসে, তারপর দাড়ায় এবং সবশেষে মনে মনে “আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেলো গো মরার পুলিশে” বলতে বলতে দৌড়ায়।

কনক্লুশন : ইয়েস, পুলিশের দাবড়ানিতে উঠে হেঁটে যাওয়া লাশের সংখ্যা হাজারের উপরে, কোনো সন্দেহ নাই ।

পুনশ্চ : কতটা পথ পেরুলে তবে পথিক হওয়া যায় ? ব্রেইন কতটা ডিফেকটেড হলে ভন্ডামী মানায়?


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment