প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ স্যার, জন্মদিনের শুভেচ্ছা
প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ স্যার,
জন্মদিনের শুভেচ্ছা ।
আপনি লজিক এন্টি-লজিক নিয়ে খেলেছেন সবসময়। আবেগ আর বাস্তব… কে জিতবে কে হারবে অথবা আদৌ কোনোদিন এই দ্বিধার সমাধান হবে কি না … এই দন্দ্বে পাঠক কে অপেক্ষায় রেখেছেন শেষ লাইনটি পর্যন্ত । শুভ্র জানে তার চোখ দুটো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে তবুও তাকে আপনি জীবনের কোনো আনন্দ থেকেই দুরে রাখেন নি। হিমুর মাজেদা খালার মত নার্ভাস একটা মহিলা কি অবলীলায় ই না কিছু সময় কেমন সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল শুধু আপনার জন্য। নীলু, রুপা ওদের জীবনের শেষ টা তো এখনো আমাদের জানা হলো না! মধ্যান্হ, জননী ও জোছনার গল্পের মত করে আর কয়জন ই বা একেছেন ইতিহাস কে। আপনিই পেরেছেন বাকের ভাই এর মত একজন মাস্তান কে সবার অন্তরে গেঁথে দিতে। মনে পড়ে, “কোথাও কেউ নেই” নাটকের শেষ পর্বের দিন আসলেই কোথাও কেউ ছিল, না এমন কি রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ও না। সবাই ছিল টি ভি সেট এর সামনে। ছোট মির্জার জমিদারী যেই দিন নিলামে উঠলো, মনে হচ্ছিল যেন আমি ওই জমিদারের ই প্রজা ছিলাম! আপনার হাত ধরেই মধ্যবিত্ত রা ফিরে গেছে সিনেমা হলে … বইমেলায় ভীড় জমেছে বছর বছর ।আজ মিসির আলী আর হিমু কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছি আমি … দুই জনের মধ্যে আজ প্রথম বারের মত কোনো তর্ক হয় নি….কারণ দুই জন ই বলেছে আপনি বেঁচে আছেন …… আপনার কর্মে, জাদুকরী চিন্তায় … লক্ষ পাঠকের ভালবাসায় ।
তবুও মনে হয়, আমাদের কথা নাহয় বাদই দিলাম .. আপনার প্রয়ানে আপনার সৃষ্ট সবকটি চরিত্রও যে অনাথ হয়ে গেল ! ওদের শেষটা কে এঁকে দেবে ? কে ওদের নিত্যদিনের হাসি কান্নার অলিগলি ঘুরিয়ে হাত ধরে নিয়ে যাবে গন্তব্যে ? কে আমাদের আনন্দ বেদনায় কথায় কাব্যে জানাবে আটপৌরে জীবনটাও আসলে অনেক বর্নীল … !
খুব জানতে ইচ্ছে করে আপনি বেঁচে থাকলে দেয়াল উপন্যাসের সমাপ্তি কেমন হতো? প্রজন্ম চত্বরে যখন আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে স্লোগান উঠতো ” তুই রাজাকার ” তখন আপনি কি করতেন ? কি ভাবতেন ? কি লিখতেন ? সাইদী’র ফাঁসির রায়ের পর কিংবা তাকে চাঁদে দেখা যাওয়ার মত ঘটনা নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি হতো ? সেই প্রতিক্রিয়া শুনে বা পড়ে আমরা কি কেঁদে হেসে একাকার হতাম হাজার বারের মতো ? আপনার সম্পর্কে পড়ে জেনেছি আপনি চমক ভালবাসতেন । দেশ বিদেশের ম্যাজিকের বই আপনার সংগ্রহে ছিলো এবং কাছের মানুষদের ঘরোয়া আড্ডায় আপনি ম্যাজিক দেখাতেন । কেনো জানি এখনো মনে হয়, ম্যাজিক দেখানোর ছলে আপনি কোনো একদিন হঠাৎ হাজির হয়ে বিরক্ত মুখে বলবেন, দেশ তো গোল্লায় যাচ্ছে, দি কান্ট্রি ইস হেডিং টুয়ার্ডস জিরো ! আমি সামান্য লেখক হয়ে ১৯ বছর আগে বাকেরের মতো নিরপরাধ একজনকে ফাঁসিতে ঝুলাতে পারলাম আর দি বিগেস্ট ক্রিমিন্যাল রাজাকার গুলি এখনো বেঁচে আছে ??
কর্কট ব্যাধির সাথে যুদ্ধ করতে করতেও আপনি স্বপ্ন দেখে গেছেন এদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্যান্সার হসপিটাল হবে … আপনি লিখে গেছেন নিউয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ । সিডনীর আকাশে রোদ থাকুক আর নাই থাকুক, আমি বুভুক্ষের মতো অপেক্ষা করতাম সেই কলামের, আরো লক্ষ পাঠকের মতো ।
আপনার দেখে যাওয়া স্বপ্নগুলো কি কেউ আপনার মতো করে এগিয়ে নিতে পারবে ?
এতো অসীম জীবনীশক্তির মাঝে থেকেও, জানি না ঠিক কবে থেকে আপনি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার অপেক্ষায় ছিলেন ভেতরে ভেতরে … জানি না ঠিক কেনইবা সেই অপেক্ষা শুরু হয় আপনার … আমার জানার কথাও না । তবে আপনার অকাল প্রয়ান, একটা নিঃসীম শুন্যতার মাঝেও খুব কঠিনশিক্ষা দেয় আমাকে .. জীবনের যে কোনো পর্বেই নিজের উপরে খুব বেশী স্বেচ্ছাচারিতা হয়তো খাটাতে নেই … এট ওয়ান স্টেইজ, ইট ব্যাক ফায়ারস … !
আপনি যেখানেই থাকুন, আপনার গৃহত্যাগী জোছনা কিংবা বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল যেনো আপনারই থাকে ….. আজীবন … আমরণ !
হুমায়ুন ভক্তদের জন্য তাঁর কিছু উক্তি –
১) পাখি উড়ে গেলে পালক ফেলে যায়, আর মানুষ চলে গেলে ফেলে রেখে যায় স্মৃতি ।
২) ঈশ্বর যদি কাউকে মারতে চান তাহলে কি তার কোন আয়োজন করার প্রয়োজন আছে ? তাহলে মরতে কিসের ভয় , একবারই তো মরতে হবে ।
৩) চাঁদের বিশালতা মানুষের মাঝেও আছে, চাঁদ এক জীবনে বারবার ফিরে আসে…ঠিক তেমন মানুষ প্রিয় বা অপ্রিয় যেই হোক,একবার চলে গেলে আবার ফিরে আসে..
৪) ভালবাসাবাসির ব্যাপারটা হাততালির মতো। দুটা হাত লাগে। এক হাতে তালি বাজে না। অর্থাৎ একজনের ভালবাসায় হয় না ।
৫) হারিয়ে যাওয়া মানুষ ফিরে আসলে সে আর আগের মত থাকে না….. কেমন জানি অচেনা অজানা হয়ে যায় । সবই হয়তো ঠিক থাকে কিন্তু কি যেন নাই…… কি যেন নাই……!
৬) আমার হারিয়ে ফেলার কেউ নেই । কাজেই খুঁজে পাওয়ারও কেউ নেই । আমি মাঝে মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি , আবার খুঁজে পাই ।
৭) “যে স্বপ্ন দেখতে জানে ,সে তা পূর্ণও করতে পারে” – আমরা মনে হয় স্বপ্ন দেখাই ভুলে গেছি…আর যেটুকুই বা দেখি তা নিজেরাই বিশ্বাস করতে চাই না…তাই