পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংককে সরকারের না, নাকি সরকারকে বিশ্বব্যাংকের না?

পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংককে সরকারের না, নাকি সরকারকে বিশ্বব্যাংকের না?

একি শুনি আজ মন্থরার মুখে, পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংককে সরকারের না, নাকি সরকারকে বিশ্বব্যাঙ্কের না? আমরা কি ভুল দেখছি? আমি সত্যিই হতবাক জনাব আরশাদ হোসেন ভূইয়ার এই পোষ্ট দেখে, আমরা কি বাস্তবে আছি না কোনো অলিক মনগড়া জগতের বসিন্দা, যেখানে ইচ্ছেমতো দিনে দুপুরে সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে দেওয়া যায়। কি উদ্দেশ্য ঐ পোষ্টের?

বিশ্বব্যাঙ্ক যে ধোয়া তুলসিপাতা নয় এবং তাদের উদ্দেশ্য যে উন্নত পুজিবাদি দেশগুলোর স্বার্থসংরক্ষন করা তা যারা দুনিয়ার খবারা খবর রাখেন তারা মোটামুটি সবাই জানেন। আমরা বিশ্ব ব্যাংকে বাদ দিয়ে নিজেরা নিজেরা পদ্মাসেতু করতে চেতেই পারি দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে। কিন্তু এভাবে ভিখারি চোর হিসাবে সারা বিশ্বের সামনে বার বার বিশ্ব ব্যংকের কাছে লাথি খেয়ে, নেড়ি কুত্তার মত বার বার তাদের কাছে ফিরে যেয়ে, তারপর আমরা কেন এই দেশপ্রেমের ধুয়া তুলছি, দেশ প্রেমের ব্যাবসায় নামছি?

কারন আমরা জানি যে সরকার আর আমলারা নিজেদের স্বার্থে আর অক্ষমতায় ঘুষ দুর্নিতির এমন অক্ষম প্রশাসন বানিয়ে রেখেছে যে আভ্যন্তরিন ভাবে এত বড় পুজির সংস্থান করা এবং এত বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কারিগরি সক্ষমতা আমরা এখনো অর্জন করে উঠতে পারি নি। আমাদের আমলাদের দক্ষতা ফাইল চালাচালি আর ফাইল আটকিয়ে ঘুষ খাওয়া পর্যন্তই আর ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা টেন্ডারবাজি করে ঘুষ খাওয়া পর্যন্তই। আমাদের ডেভলাপমেন্ট বাজেটের বিরাট অংশই দাতাদের ভিক্ষা নির্ভর, তাই আমলা আর সব সরকারের কাছেই এ এক বিশাল মধুভান্ড। সব সরকার আর আমলারা বার বার বিশ্বব্যাঙ্ক আর দাতাদের কাছে ভিক্ষার জন্য ছুটে যায় ঘুষ, কমিশনের আর বিশ্বব্যাংকের লোভনিয় পদের তিব্র কামনায়। সব সরকারই ইলেকশন করে সেই ঘুষ ফান্ড থেকে, আর ক্ষমতায় যাওয়ারও মূল উদ্দেশ্যও ঐ মধুভান্ড থেকে মধুসংগ্রহ।

বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিতই হয়েছিল পশ্চিমা পুজিবাদের স্বার্থ সংরক্ষন করতে। যে কোনো ইনফর্মড মানুষই তা জানে, আর সব সরকার আর আমলারাও তো অবশ্যই তা জানেন। সব জেনেই, এই জ্ঞানপাপিরা নিজেদের দুর্নিতির স্বার্থেই গত বিয়াল্লিশ বছর ধরে বিশ্বব্যাঙ্ক আর দাতাদের সহযোগিতা করে গেছেন, আর বাংলাদেশকে বানিয়ে রেখেছেন অক্ষম ভিক্ষুকের দেশ।

আজ হঠাৎ বিশ্বব্যাঙ্ক আর সরকার/আমলাদের মধুর সম্পর্কে ছেদ পড়লো কেন?

ব্যাপারটা খুব সহজ। বিশ্বব্যঙ্কের পুজিবাদি নিতি স্বার্থ একটুও বদলায়নি। কিন্তু ২০০৮ এর গ্লোবাল ফাইনানশিয়াল ক্রাইসিসের পর তাদের অর্থের যোগানদাতা উন্নত দেশগুলোর নিজেদের অর্থনিতিক আর বাজেটের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। এরই প্রতিক্রিয়ায় যখন তাদের দেশের বাজেটে বিভিন্ন সাধারনের বিভিন্ন ওয়েলফেয়ার সুবিধাদি কাট ছাট হচ্ছে, তখন তাদের দেশের সাধারন মানুষ আর পার্লামেন্টের নজর স্বাভাবিকভাবেই পড়েছে বিদেশিদেরকে দেওয়া এইড বাজেটের উপর। তারা এইডের কাট ছাট সহ সম্পুর্ন জবাবদিহিতা চাচ্ছেন। তাই বিশ্বব্যাঙ্ককে দুর্নিতির বিরুদ্ধে একরকম জিহাদ ঘোষনা করতে হয়েছে।

কিন্তু হায়, আমাদের সরকার আর আমলারা, তাদের দুর্নিতির অদম্য কামনায় আর বহুযুগের অভ্যেসে বিশ্বব্যাঙ্কের এই দুর্নিতিবিরোধি জিহাদকে ধতর্ব্যের মধ্য না নিয়েই পদ্মা সেতুতে ধরা খেলেন। ধরা খেয়ে, চোরের মার বড় গলার মত এখন তাদের মুখে হঠাৎ ফুটছে বিশ্বব্যাঙ্ক বিরোধি বুলি আর দেশ প্রেমের বুলি।

অবদমিত ঘুষ কামনায় জর্জরিত হয়ে তার পাগল হয়ে গিয়েছেন। একদিকে তারা দেশপ্রেমের বুলি আওড়িয়ে পদ্মা সেতুর নামে দেশের মানুষের আর প্রবাসিদের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন; যদিও তারা ভালভাবেই জানেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া অদুর ভবিষ্যতে পদ্মা সেতু করার অর্থনোইতিক ও কারিগরি ক্ষমতা অর্জন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব না। অন্যদিকে একদিন বিশ্বব্যাঙ্কের উপর বিষোদ্গার করে পরদিনই নির্লজ্জ লাথি খাওয়া কুকুরের মত কেউ কেঊ করতে করতে তাদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন সেই বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে, ফান্ডটা অন্য কনভাবে পাওয়ার তদবির করতে। এইতো সেদিনও অর্থমন্ত্রি ওয়াশিংটন ঘুরে এলেন সেই নির্লজ্জ নিস্ফল তদবির করতে। অর্থমন্ত্রি হিসাবে সে অন্তত বাস্তবতাটা জানে; জানে যে দাতাদের ফান্ড ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনিতি কি ভিষন সংকটে পড়তে যাচ্ছে।

আর কটা দিন অপেক্ষা করুন, দুদককে যা করতে দেওয়া হয়নি বা যা দুদক করেনি, তা সবই এই এপ্রিলে থেকে কানাডার কোর্টে প্রকাশ হতে থাকবে।

প্রিয় আরশাদ হোসেন ভূইয়া, আপনি কি বাংলাদেশের মানুষকে এতই ভোদাই মনে করে? তারা কি এসব কিছুই জানেনা বা বোঝে না মনে করেন? আর আপনি নিজেও কি এসব জানেন বা বোঝেন না?
তাই ভাবছি আপনি কার হয়ে কি বুঝে, কাদেরকে বোকা ভেবে এবং কেন, সরকার আর আমলাদের সাথে সুর মিলিয়ে, বাংলাদেশ সরকারের সিল সহ কোন অধিকারে আপনার এই তথাকথিত দেশপ্রেমি পোষ্ট দিলেন। বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম ব্যাবসায়ি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাবসায়ি, জাতিয়তাবিদিতার আর দেশপ্রেমের ব্যাবসায়ি সহ সব রকমের ব্যাবসায়িদেরই চেনে, তারা অত ভোদাই না।

বাস্তবতার নিরিক্ষে আন্তর্জাতিক অর্থ ও কারিগরি সহায়তায়ই বাংলাদেশ পদ্মাসেতু করবে। যখন বাংলাদেশ দক্ষতা অর্জনের ব্যাবস্থা সহ এবং দুর্নিতি ছাড়া জবাবদিহিতা ও দ্বায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে তা করতে পারবো তখনই তা করা ভাল। এগুলো নিশ্চিত করে কবছর পর পদ্মা সেতু করলে এমন কোনো ক্ষতি হবে না। এখন করতে গেলে পদ্মা সেতুতো হবেই না, বরং শেয়ার মার্কেট, হলমার্ক আর ডেস্টিনির কায়দায় জনসাধারনের আর প্রবাসিদের কষ্টার্জিত টাকা রাজনিতিক আর আমলারা মিলে পদ্মা সেতুর ধাপ্পায় মেরে দেবে।

তাই বলছি, নিজের স্বার্থে নেওয়া বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশের মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে রাজনিতিক আর আমলাদের সব কমিশন খাওয়ার কারসাজি দেখিয়ে দিয়েছে। শাপে বর হয়ে তা বাংলাদেশের মানুষের উপকারই করেছে।

নির্বোধ/মরেনো
৫ই মার্চ ২০১৩

2013/BISHAW_BANK_168104652.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment