নতুনের জয়গান গাই
প্রতি বছরই ঘুরে ঘুরে এসেছে ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২৬শে মার্চ আর ১৬ই ডিসেম্বর I প্রতিটি দিবসই পালিত হয়েছে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে I কিন্তূ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে অনেককেই হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখেছি I দিনের পর দিন স্বাধীনতা বিরোধীদের আগ্রাসন, মুষ্ঠি আস্ফালন দেখে কুঁকড়ে যেতে হয়েছে, বার বার প্রশ্ন জেগেছে- “এ কোন বাংলাদেশ ? এ দেশ আসলে কার ?”
অনেকের মত আমিও বোবা আর বধির থাকার পথটাই বেছে নিয়েছিলাম I অনেক না বলা কথা বলবার জন্য কতই না ছটফট করেছি কিন্তূ বলতে পারিনি, অনেক গান গাইতে চেয়েছি কিন্তূ গাইতে পারিনি, সে যে কি কষ্টের !! অদৃশ্য কোনো কালো হাত যেন বার বার টুটি চেপে ধরেছে !! নিজেকে বার বার প্রশ্ন করেছি “যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশ, তাদের প্রতি আমাদের কি কোনই দায়বদ্ধতা নেই?” নিজেকে প্রশ্ন করে নিজেই চুপ থেকে গেছি I নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে কিন্তূ খুব বেশি সাহসী হয়ে উঠতে পারিনি I নিজের অবস্থানে থেকে শুধু চেষ্টা করেছি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কথা বলবার (?? যতটুকু বলা যায়), আর পাকিস্তানী দ্রব্য ব্যবহার করা থেকে নিজেকে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরত রাখার I
কয়েক দিন ধরে শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে লেখাগুলি (দৈনিক পত্রিকা ও ফেইসবুক ) পড়তে পড়তে অবাক হয়ে ভাবছিলাম – এ কোন সকাল!! যে সকালের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছি সেই সকাল আমাদের এনে দিল আজকের নতুন প্রজন্ম । যে সকাল এত আলোকিত, যার আলোর বন্যায় আমরা প্রত্যেকেই আলোকিত হয়ে উঠছি, চিনে নিতে পারছি নিজেকে, নতুন করে খুঁজে পাচ্ছি নিজেকে I স্পষ্ট উচ্চারণে দাবি করছি “যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি- ফাঁসি”। দেশ স্বাধীন হবার পর এত বছরে আমরা যা করতে পারিনি তাই করে দেখিয়ে দিচ্ছে আমাদের-ই সাহসী সন্তানেরা – নতুন প্রজন্ম ।অথচ এই প্রজন্ম সম্পর্কে আমার ধারণা জন্মেছিল যে তারা “ইতিহাস বিকৃতির চক্রে পরে বিভ্রান্ত “। আমার, হয়তো বা আমার মত অনেকের সেই ভুল ধারণাকে ভেঙ্গে দিয়ে তারা প্রমান করে দিল সত্য কোনদিন চাপা থাকেনা, তাকে যতই ধামা চাপা দেয়া চেস্টা করা হোকনা কেন।তারা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, দল নয়-সবার আগে দেশ । অভিবাদন জানাই নতুন প্রজন্মকে, সাহসী প্রজন্মকে। তারা যেন পরশ পাথর। যাদের ছোঁয়ায় প্রতিটি সাধারণ মানুষ হয়ে উঠছে অসাধারণ । বার বার মনে হচ্ছে একদৌড়ে ছুটে যাই শাহবাগ চত্বরে আর সবার সাথে গলা মিলিয়ে গাই:
“ছোটদের বড়দের সকলের
গরিবের নিঃস্বের ফকিরের
আমারই দেশ সব মানুষের সব মানুষের “
আজকের শাহবাগ আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অর্জন- গণজাগরণ। নতুন প্রজন্মের ডাকে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ প্রানের দাবি পূরণের প্রত্যাশায় ঘর ছেড়ে পথে নেমেছেন, স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করছেন বাংলার আকাশ বাতাস ।তারা স্পষ্ট কন্ঠে উচ্চারণ করছেন তাদের স্বপ্নের কথা, উত্থাপন করছেন তাদের প্রাণের দাবী-যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি। শাহবাগ আন্দোলনের এই অর্জন যেন ছিনতাই হয়ে না যায় তার দায়ভার আমাদের সবার । সেই সাথে জনগনের যুক্তিসঙ্গত দাবী -“যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি” বাস্তবায়নের জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করবার সময় আমাদের দ্বার গোড়ায় উপস্থিত |বাংলাদেশের এই উত্তাল জনসমুদ্রের শক্তি অসামান্য, অপ্রতিরুদ্ধ। জয় আমাদের নিশ্চিত|
আসুন সবাই আজ রাজনৈতিক স্বার্থকে দূরে রেখে জাতি-ধর্ম-দল নির্বিশেষে আমাদের কাজে এবং মননে শাহবাগ আন্দোলনে শামিল হই, একাত্মতা প্রকাশ করি। আরেকবার জেগে উঠুক বাংলাদেশ| এখনই সময়, আসুন সবাই দেশকে গ্লানিমুক্ত করবার দৃপ্ত শপথে এগিয়ে যাই ।
নব জাগরণের জোয়ার কে স্বাগত জানিয়ে রবি ঠাকুরের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই
“নাই নাই ভয় হবে হবেই জয়”।
শম্পা বড়ুয়া