দুখিনী বাংলাদেশ ও গোলাম আযম

দুখিনী বাংলাদেশ ও গোলাম আযম

আজ ১৫ জুলাই ২০১৩। দীর্ঘ ৪২ বছরের হিসাব নিকাশ শেষ। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আপরাধ আদালত দীর্ঘ দিন শুনানি শেষ করে ঘাতক দালাল শিরোমণি গোলাম আজম কে ৯০ বসর কারাদণ্ড দিলেন।

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মোট ৬৩ অভিযোগ। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী আপরাধ সংগঠনে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে পরিকল্পনা, সহযোগিতা, উসকানি, সম্পৃক্ততা ও বাধা না দেওয়া এবং নির্যাতন উল্লেখযোগ্য।

প্রতীক্ষিত এই রায়ের পর খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাল সরকারি দল আওয়ামী লিগ। আইন বিশেষজ্ঞ দুই মন্ত্রী ( একজন প্রতি আরেকজন পূর্ণ মন্ত্রী) খুব সন্তোষ প্রকাশ করলেন। বলতে বাকি রাখলেন না উনার বয়সের কথা বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে ৯০ বসর করা হল। বাহ কি সুন্দর যুক্তি। শহিদ বুদ্ধিজীবী পত্নী শ্যামলী নাসরিন স্মরণ করিয়ে দিলেন পরবর্তীতে ঘাতক দালাল রা ক্ষমতায় এসে গোলাম আযম কে সসম্মানে ছেড়ে দেবেন তা নিশ্চিত। তিনি দুঃখ করে বললেন ৪২ বসরের সংগ্রামের ফসল আর ঘরে উঠলো না। তিনি সহ দেশের কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষ যেন সেই সংগ্রামে হাল ছেড়ে দিলেন। শাহবাগের মোড়ে গণজাগরণ মঞ্চের লোকসমাগমও খুব একটা বেশি নয়। আওয়ামী লিগ যদি এই বিচার না করে তবে কি আর প্রকৃত বিচার হবে?

আসলে সমস্যা কোথায়। সমস্যাকি ভোট বাণিজ্য। সরকারি দলের ধারনা গোলাম আযম সহ কয়েক জন যুদ্ধ অপরাধী কে এভাবে ছেড়ে দিলে তারা আবার মসনদে বসতে পারবেন। হায়রে বাংলাদেশ তোমার কলঙ্ক ঘুছলনা। আমরা ভেবেছিলাম অত কিছু না হক গোলাম আযম ও প্রধান কয়েক রাজাকারের ফাঁশি হলে বাংলাদেশ কলঙ্ক মুক্ত হতে পারত। সেই জন্য বোধ হয় প্রয়াত আহমেদ ছফা বলেছিলেন, যখন আওয়ামী লিগ জেতে একলাই জেতে আর যখন আওয়ামী লিগ হারে সবাইকে নিয়েই হারে। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সেই হার হল বুঝি। তবে কি শহিদ জননী জাহানারা ইমাম হেরে গেলেন। তার স্বপ্ন বাস্তবয়ন কি হবে না।

শেষ করছি বন্ধু সাংবাদিক বিপ্লব রাহমানের কিছু উক্তি দিয়ে।

৬ মাস পরের সম্ভাব্য কাল্পনিক দৃশ্যঃ জামাতের মুকুট হীন সম্রাট গোলাম আযম ভি দেখিয়ে জেল গেট থেকে বের হলেন। তাওহীদী জনতা ব্যানারে আপেক্ষমান কর্মীরা আকাশ বিদীর্ণ করে স্লোগান দিচ্ছেন নারায়ে তাকবীর, জেলের তালা ভেঙ্গেছি, গোলাম আযম কে এনেছি। বিএনপি, জামাত এবং হেফাজতি নেতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। অন্যদিকে এই ঘটনা টিভি তে দেখে ভাটারা চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা মযাম্মেল হক, বীর প্রতীক সহযোদ্ধারা মৃদু গলায় বললেন ৭১ এ আমরা ভুল করেছি, গোলাম আযম ভুল করেন নাই। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে পাকিস্তান গভর্নর মনাএম খান কে অপারেশন করাটাও ছিল জীবনের বড় ভুল। তোরা আমাকে ক্ষমা করিস।

নিতান্ত কাল্পনিক এই দৃশ্য কল্প। কিন্তু খুব কি অসম্ভব? বাংলাদেশ যে এখন অসম্ভবের দেশ।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment