তারা কি ইসলামকে রক্ষা করছে নাকি বিপন্ন?
টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর বিশ্বে যেখানেই কোনো ধংসাত্মক কিছু ঘটুক না কেন, প্রায় সব ঘটনার সাথেই মুসলিমদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়!! ধৃত আসামীদের কাছে কারণ অনুসন্ধানে একটি মাত্র উত্তর আমরা জানতে পারি আর তা হল, বিপন্ন ইসলামকে রক্ষা করার জন্য তারা জিহাদ করছে।
গত সপ্তাহের প্রাণঘাতী বোস্টন হামলার আটককৃত আসামী জোখার ইতোমধ্যে মার্কিন তদন্ত দলকে জানিয়েছে যে, এই হামলায় কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন জড়িত ছিল না বরং তারা দুই ভাই নিজ থেকেই জিহাদি কার্যক্রম চালিয়েছে। এই হামলার মাধ্যমে তারা ‘ইসলামকে রক্ষা’ করতে চেয়েছিলে।
এর আগেও বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক নাফিস এমেরিকায় নাশকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করতে ধরা পড়েছিল। তার মুখেও আমরা শুনেছি সেও জিহাদ করতে চেয়েছিল।
প্রশ্ন হলো, ইসলাম কি এতই বিপন্ন? কতখানি বিপন্ন যে, বোমা মেরে নিরীহ জনগনকে মেরে ফেলতে হবে? কতখানি বিপন্ন হলে একজন মুসলিম হয়ে আত্মঘাতী হতে হবে?
সন্দেহ জাগে মনে যে, তারা এই জিহাদী জোশে আসলেই কি ইসলামকে রক্ষা করছে? নাকি শান্তির ধর্ম বলে সুপরিচিত ইসলামকে বিশ্বজুড়ে ভয়ংকর, নিষ্ঠুর, প্রতিক্রিয়াশীল একটি ধর্ম হিসেবে পরিচিত করছে?
আজ মুসলিম জাতিকে পশ্চিমা দেশগুলো উগ্রজাতি হিসেবে জানছে। শুধু পশ্চিমাদের কথাই বা বলি কেন? পার্শ্ববর্তী ভারতে, আমাদের নিজেদের দেশে যেকোনো ধরনের বোমা হামলা হলেই মুসলিম কোনো সংগঠনের দায় স্বীকার করার ঘটনা জানতে পারি।
মুসলিমেরা বোমা মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে বিল্ডিং, ট্রেন, সিনেমা হল, এয়ারপোর্ট, স্কুল, কলেজ, মার্কেট সব স-ব কিছু। এমনকি মসজিদও রেহাই পাচ্ছে না। যেখানেই নিরীহ জনগনের সমাবেশ থাকে সেখানেই মুসলিমেরা বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে মানুষ মেরে ফেলছে। এভাবে গুটিকয়েক জেহাদী মুসলিমের জন্য আজ সমগ্র মুসলিমজাতি উগ্রপন্থী হিসেবে বিশ্বে নিজেদের পরিচিত করছে।
শুধুমাত্র গুটিকয়েক মুসলিমের উগ্র ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের জন্য বিশ্বজুড়ে আজ মুসলিমদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়। মুসলিম কোনো নাগরিক ভিসার জন্য আবেদন করলে খামাখাই বিভিন্ন ধরনের তথ্য-তালাশের সম্মুখীন হয়। কখনো শুধু পিতৃপ্রদত্ত মুসলিম নামের কারণে ভিসা রিজেক্ট হবার ভুরিভুরি ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। এয়ারপোর্টে নামের পিছে “খান” থাকায় শাহরুখ খানের মত বিশ্বজোড়া খ্যাত নায়ককেও হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়।
বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মুসলিমরাই। মুসলিমরা নিজেরাই তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচার ও তার মর্যাদা রক্ষা করার বদলে রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে মুসলিমরাই।
অনেকেই যুক্তি দিতে পারেন্ যে, পশ্চিমা দেশের ভিন্নধর্মীরা আসলে কিছু মুসলিমদের প্রচুর টাকার বিনিময়ে এইসব ধংসাত্মক কাজে লিপ্ত করে ধর্মের নাম খারাপ করছে। কেউ বলতে পারেন বিন লাদেন পশ্চিমাদের সৃষ্টি।
কিন্তু কথা হল, মুসলিমদের ঈমানের জোর কি এতই আলগা যে, পয়সার কারণে বিক্রি হয়ে নিজের ধর্মকে কলুষিত করবে? ঠিক আছে যদি যুক্তি মেনেও নেই যে, মুসলিমদের কলুষিত করার জন্যই উগ্রপন্থী মুসলিমদের ধ্বংসাত্মক কাজে লাগানো হচ্ছে, তবে প্রশ্ন হলো মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে কেন এত হানাহানি? কেন পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক এমনকি আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশে এত খুনাখুনি?
বাংলাদেশের মুসলিমেরা কেন তবে জিহাদ করছে? কার বিরুদ্ধে জিহাদ? এখানে তো ৯০ ভাগ মুসলিম বলেই জানি, তবে কেন এক মুসলিমের দ্বারা অন্য মুসলিম কিংবা ভিন্ন ধর্মালম্বিরা আজ নৃশংসভাবে খুন হয়? কেন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয় অন্যের ধর্মীয়ানুভূতি? এভাবে গণহারে মানুষ মেরে ফেলা ইসলাম কি সমর্থন করে?
আসলে ইসলাম অন্য কারও হাত ধরে বা ষড়যন্ত্রে বিপন্ন হচ্ছে না। বিপন্ন হচ্ছে মুসলিমদের দ্বারাই। নারায়ে তাকবির-আল্লাহ আকবর বলে মানুষ জবাই করে আর বোমা মেরে মানুষ মেরে মুসলিমেরা নিজেরাই ইসলামকে বিপন্ন করে তুলছে প্রতিনিয়ত।
পবিত্র কোরআন এর অপব্যাখ্যা করে একদল ধর্মব্যবসায়ী মুসলিমরাই ভ্রান্তপথে নিয়ে আসছে অন্য মুসলিমদের। আর ইসলামী লেবাসধারী এইসব মানুষেরাই ইসলামকে রক্ষা করার নামে ইসলামকে বিপন্ন করে চলেছে দেশে তথা সারা বিশ্বে।
বলা হয়ে থাকে বিশ্বজুড়ে মুসলিমেরা কোনঠাসা হয়ে পড়ছে, নির্যাতিত হচ্ছে। কেন হচ্ছে আমরা কি ভেবে দেখেছি? আমাদের নিজেদের মাঝেই সংহতির অভাব, ধর্মীয় গোড়ামী, আর এই ধংসাত্মক জেহাদী মনোভাবই কি আমাদের অন্যের কাছে কোনঠাসা করে তুলছে না?
যেখানেই কোনো বোমা হামলা হয়, অবধারিতভাবে মুসলিম নামের কারো জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় কি আমাদের মাথা হেট হয় না?
হ্যা, একজন ধর্মপ্রান মুসলিম হিসেবে আমাদের মাথা হেট হয়ে আসে লজ্জায়। কারণ আমরা জানি নির্বিচারে মানুষ খুন করার শিক্ষা ইসলাম দেয় না। ইসলাম কখনই অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে উগ্র আচরণ সমর্থন করে না।
তাই সময় হয়েছে রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়ে ইসলাম রক্ষা করার নীতিকে প্রতিহত করার। আমাদের ধৌর্য, আমাদের সহনশীলতা, আমাদের সাম্প্রতিক বন্ধন ও জ্ঞানের আলোয় আমরা মুসলিম হিসেবে নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি বিশ্বজুড়ে।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্ম কখনই বিপন্ন হবার নয়। কেউ বিপন্ন করতে পারবে না। তাই ইসলাম বিপন্ন হবার আশংকায় দেশে-বিদেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ইসলামকে রক্ষা করার বদলে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্র রুখতে হবে আমাদের সকলকেই।