গণতন্ত্রের শেষ ট্রেনটি বেগম জিয়ার অপেক্ষায়
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় বাঙালির ইতিহাসে এটি একটি মাইল ফলক। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন । সেই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায়ত রাষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল জিয়াঊর রহমান স্বাধীন বাংলা বেতারে কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পাঠ করে বাঙালি চেতনাকে আলীঙ্গন করেছিলেন। শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানী আগ্রাসন, শোষণ ও নিপীড়ন থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে। সেদিন তিনি জেগে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে। অস্ত্র তুলে নিয়ে তিনিও বলেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ও জেনারেল জিয়ার মত অসংখ্য মহান মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি । মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পরেও জাতি অকৃতজ্ঞ চিত্তে মহান সেই যোদ্ধাদেরকে স্বরণ করে ও শ্রদ্ধা জানায়। বাঙালি হৃদয় ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি শুনে নীরবে কাঁদে । শ্লোগান তোলে ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’। তরুণ প্রজম্ম শাহাবাগের গণজাগরণ মঞ্চে সম্মিলিতভাবে দীপ্ত চিত্তে উচ্চারণ করেছে ‘জয় বাংলা’।
সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে বঙ্গবন্ধুর হাতে প্রধানমন্ত্রীত্ব তুলে দিয়ে সেনানিবাসে ফিরে গেছেন জেনারেল জিয়ার মত অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকেরা । সেদিন জিয়া পারতেন পাকিস্তানের পক্ষ নিতে। তিনি ভাবতে পারতেন যদি বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তবে বঙ্গবন্ধু হবেন রাষ্ট্রনায়ক। তাই কেন তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ স্বাধীন করবো। জিয়াউর রহমানের পাশে সেদিন ছিলেন কর্ণেল অলি আহাদ। তিনিও সেদিন বঙ্গবন্ধু রাজা হবেন ভেবে যুদ্ধ শুরু করতে দেরি করেন নি। কারণ ওনারা বিশ্বাস করেছিলেন বঙ্গবন্ধু সবাইকে আপন ভাবেন বলেই লড়াই করছেন- রাজা হবার জন্য নয়। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন যারা রাজা বানায় আসলে তারাই রাজা। জনতার রাজ কায়েম করতে তিনি মুক্তি সংগ্রাম করেছেন।
আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা জনগণের কাছে জাতির জনকের কন্যা হিসেবে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করেছেন। অনেকেই ভাবছে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে চান। তাদের এ ভাবনা সঠিক নয়। সর্বদলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য হল লক্ষ শহীদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে অর্থবহ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। এ ডাক ঐ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকের প্রতিধ্বনি। এ ডাক একটি সুষ্ঠ অবাধ ও অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ডাক। যদি আমরা আজ জাতির জনকের কন্যার ডাকে সাড়া দিয়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে অব্যহত রাখতে পারি, তাহলে সারা বিশ্বে বাঙালি যেমন একটি সম্মান্বিত জাতি হিসেবে স্থান করে নিতে পারবে তেমনি আমাদের ঐক্যও হবে সুদৃঢ়।
সকল দলের অংশ গ্রহণে দশম সংসদ নির্বাচন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নকে
বাস্তবায়নের বাঙালিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। সমগ্র জাতি আজ অপেক্ষায়। সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে আছে গণতন্ত্রের সৈনিক, ও সৈরাচারের পতনে অগ্রনায়ক মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা বেগম জিয়ার দিকে । গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে তাঁর হরতাল ও অবরোধের ডাকে। মানুষ পুড়ে মরছে দেখে তিনি কিভাবে অবিচল আছেন? তিনি কি বুঝতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রীর আহবান ১৯৭১ সালের সেই কালজয়ী মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক। যে ডাকে সাড়া দিয়ে জিয়াঊর রহমান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাকহানদার মুক্ত করতে। আজ যেন সেই পাক হানাদারা আবার জামায়ত-শিবিরের কাঁধে চেপে গণতন্ত্রকে হত্যা করতে উদ্যত। সেই ক্রান্তিকালে তিনি কিভাবে নীরব থাকবেন?
আমার বিশ্বাস ১৯৭১ সালে জেনারেল জিয়া যেমন বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভুল করেন নি, তেমনি বেগম জিয়া ২০০৮ সালেও ভুল করেন নি নির্বাচনে অংশ নিয়ে । তেমনি ভুল তিনি আজও করবেন না বলে জাতি বিশ্বাস করে। তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করবেন তিনি জনগণের মুক্তির জন্য রাজনীতি করেন। তিনি যেন ভুলে না যান গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে জেনারেল জিয়ার অধীনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আজ সেই ত্যাগের প্রতিদান দেওয়ার উপযুক্ত সময়। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অংশ নিয়ে আরোও প্রমাণ করবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই তার মূল আদর্শ যা বাঙালি হাজার বছর ধরে লালন করছে ।
২০০৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার তিনি যে অনন্য অবদান রেখেছেন সেই অবদানকে আরোও সমুজ্জ্বল করতে সর্বদলীয় সরকারে যোগদান না করেই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন। নির্বাচন বর্জন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি কেবলমাত্র পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধকেই নষ্ট করবে না, বরং বিপন্ন করবে আগামী প্রজম্মের ভবিষ্যত ও ধ্বংশ করবে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন স্বাধীন বাংলাদেশকে। রাজাকার জামায়ত আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়। আপনি কি তাদের ( রাজাকার) সেই স্বপ্ন পূরণ করবেন নাকি মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার মত ৩০ লক্ষ শহীদদের স্বপ্ন পূরণ করবেন?
নির্বাচন সমাসন্ন। গণতন্ত্রের শেষ ট্রেনটি আপনার অপেক্ষায় । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে জাতি দায় মুক্তিতে আপনার সিদ্ধান্ত অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মাকে শান্তি দেবে। জাতির সম্মান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শান্তি হোক আপনার আগামী দিনের পথ চলার প্রেরণা। আপনি নির্বাচনে আসবেন কী?
