খালেদা জিয়া কি বলতে চান?

খালেদা জিয়া কি বলতে চান?

১.

আজ প্রায় ২৯ দিন হয়ে গেল, শাহবাগের চত্বরে এ প্রজন্মের সন্তানরা ডাক দিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকি সহায়তাকারীদের এ দেশীয় সাংগপাঙ্গদের যথপোযুক্ত ন্যায় বিচারের আওতায় আনার জন্যে । তাদের এ ডাকের পেছনে ছিল না কোন রাজনৈতিক মতলববাজি, ছিল না কোন অসৎ উদ্দেশ্য । স্রেফ দেশকে ভালবাসার টানে , নিজের ভেতরকার নীতিবোধের টানে , তারা একদল সহযোদ্ধা একত্রিত হলেন এবং জাতিকে ডাক দিলেন ওনাদের এ আহবানকে সমর্থন জানানোর জন্যে । জাতি ও নিঃসংকোচে ওদের এ আহবানে সাড়া দিল এবং দলে দলে লোক এসে শাহবাগের চত্বরে ওনাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করল । তারপরের ঘটনা সকলের চোখের সামনে জৌজ্বল্যমান । জাতি দেখতে পারল কৃতজ্ঞ জাতি নিঃসংকোচে কিভাবে তাদের কর্মকান্ড সমর্থন করে যাচ্ছিল ।

তাদের ডাক দেশ পেরিয়ে দূরে বহু দূরে — চলে গেল , সংবাদ আসতে লাগল পৃথিবীর সর্বপ্রান্তের বাংগালী তাদের সাথে রয়েছে । কিন্তু কেন ? কারন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার তাদের এ আহবান তাদের যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়েছে এবং কোন ধান্ধাবাজী নয় , শুধুমাত্র নিজের বিবেকের তাড়নায় দল মত নির্বিশেষে প্রজন্মের এ উদ্যোগকে সমর্থন জোগাতে লাগল । আন্দোলন তার ভেতরকার শক্তির জোরে ক্রমেই বেগবান হতে লাগল ।আবার ও বলি স্রেফ ভালবাসার টানে , নিজের বিবেকার তাড়নায় তারা একত্রিত হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ন্যায্য দাবিই ছিল তাদের আন্দোলনের মূল বিষয় ।সকল রাজনৈতিক দল সমূহ , বিভিন্ন পেশাজীবি গোষ্ঠী যার যার অবস্থানে থেকে আন্দোলনের উৎসাহ ও সমর্থন প্রদান কি দোষের কিছু , নাকি তা ও করতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের এ যুগের এ দেশীয় রক্ষাকর্তা খালেদা জিয়ার অনুমতি নিয়ে ?

কিন্তু না , তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের দল বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার এ উদ্যোগ ভাল লাগেনি , প্রথম প্রথম কিছু বলার সাহস পাচ্ছিলেন না পেছনে এ প্রজন্ম যদি বিগড়ে যায় ; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ওনার অন্তরের আসল রূপ আর জাতির সামনে প্রকাশ না করে পারলেন না । ১লা মার্চ ২০১৩ তারিখ ওনি এক সংবাদ বিবৃতি দিয়ে নিজের অবস্থান সুুস্পষ্ঠ করলেন । আর যাই হউক এতে জাতির ক্ষতির চেয়ে লাভই হয়েছে অনেক বেশী । জাতির সামনে খালেদা জিয়া ও তার দলের আসল রূপ জাতি প্রত্যক্ষ করল ।ওনি আরো অনেক কথা বললেন ঐ সবে আমরা যাচ্ছি না , কারন রাজনীতিবিদ হিসেবে ওনি সবকিছুতে রাজনীতির লাভালাভ হিসেব করবেন এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু শাহবাগের এ প্রজন্মের অকুতোভয় যোদ্ধাদের তিনি কেন ফ্যাসিষ্ট বলবেন এবং সরকারকে তাদের কর্মকান্ডকে বেআইনী ও উস্কানীমূলক কাজের উৎসাহদানকারী হিসেবে অভিযুক্ত করছেন । তাহলে প্রশ্ন হোল , আমরা যারা তাদের কর্মকান্ডকে সমর্থন দিচ্ছি তারা এবং অন্যান্য সকল সমর্থনকারীরা কি উস্কানীমূলক কাজের উৎসাহদানকারী হিসেবে ওনার দৃষ্টিতে অপরাধী হয়ে যাচ্ছি না ? তা হলে প্রশ্নহোল কারা সঠিক আমরা নাকি খালেদা জিয়া ? এ প্রশ্নের উত্তর আমরা জাতির উপর ছেড়ে দিলাম ।

শুধু বলব, খালেদা জিয়া আপনি শুধু আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন জাতি অত্যন্ত সুুন্দরভাবে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবে । আপনি কি বলতে চাচ্ছেন তা আমরা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছি । আপনার পাকি ভালবাসার অন্যপীঠকে আপনি কোনভাবেই বাঁচাতে পারবেন না , আমরা হিংস্রতা কিংবা জিঘাংসায় বিশ্বাসী ও নই এবং সমর্থন ও করি না । আমরা শুধু চাই জাস্টিস, যা না থাকলে সমাজ বসবাসের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে ।দেশ স্বাধীন হয়েছিল, যে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ; স্বধীনতার ৪২ বৎসর পর ও জাতি তা পায়নি । তাই ত এ প্রজন্মের শিক্ষিত সমাজে এক ধরনের শূন্যতার অভাববোধই তাদেরকে আজ এ পর্যায়ে টেনে এনেছে । কোথায় আমরা তাদের এ মহৎকাজকে সমর্থন দেব , তা না করে তাদের বিরূদ্ধে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে । আমরা এ সকল মহৎকাজের সমর্থনকারীরা নই , ইতিহাসের আঁস্তাকূড়ে নিক্ষিপ্ত হবে যারা এ সকল মহৎকাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন ।

২.
সমাজে তথা রাষ্ট্রে বিভিন্ন মত তথা দল থাকবে এটাই স্বাভাবিক । এবং আমরা আজকের গণতান্ত্রিক যে সমাজ ব্যাবস্থার কথা বলি এটাতে সকলের অস্তিত্ব এবং মত প্রকাশের প্রতি সমান শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে তা নাহলে এটা আর গণতান্ত্রিক সমাজ থাকবে না । এ গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থার পর ও একটা কথা থাকে তা হোল সকলের মত প্রকাশের অধিকার যেমন রয়েছে , ঠিক তেমনি এ মত প্রকাশের ও একটি ফ্রেম ওয়ার্ক ও রাষ্ট্র ঠিক করে দেয়, সেটার নাম হোল সংবিধান । রাষ্ট্রের সংবিধান ই হোল তার ভেতরকার সমস্ত কর্মকান্ডের ফ্রেম ওয়ার্ক । কাজেই বাংলাদেশের সংবিধানে কিন্তু যুদ্ধাপরাধী তথা উগ্রগোষ্ঠির মত প্রকাশের কোন অধিকার নেই ।সেই হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরোধিতাকারীদের কিন্তু এ দেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই ।
কিন্তু প্রশ্ন হোল তাহলে তারা কিভাবে এ দেশে রাজনীতি করছে ? তার ও উত্তর হোল বিএনপি এবং খালেদা জিয়া এবং ওনার গুনধর স্বামী জিয়াউর রহমান ।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির আজকের সমস্ত অন্যায় ও পাপাচারের রক্ষক ও উৎসাহদাতা হোল এই বিএনপি ।জাতির পিতাকে হত্যাকারিদের তারা শুধু রক্ষাই করেনি , তাদেরকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার সুুযোগ সৃষ্ঠিকরে দিয়ে তারা অন্যায়কে ন্যায়বোধ বলে চালিয়ে দিয়েছে । তারা গোলাম আজমের মত প্রকাশ্য বিরোধিতাকারীদের নাগরিকত্ব দিয়ে সমাজে ধর্মের নামে মওদুদীবাদ প্রতিষ্ঠার সুুযোগ করে দিয়েছে , জামাতকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করেছে ।তারা গণতন্ত্রের নামে বিরোধী দলকে গায়ের জোরে চিরতরে নির্মূল করতে চেয়েছে ২১ শে আগষ্ঠের গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে তারা জাতির কাধেঁ মঈন – ফখরুল জাতিয় কালপিটদেরকে এদেশ শাসনের সুুযোগ করে দিয়েছে । আবার তারাই গণতন্ত্রের কথা বলে , আবার তারাই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে , এর চেয়ে নির্মম পরিহাস এ জাতির জীবনে আর কি হতে পারে ! বর্তমান একবিংশ শতকের প্রজন্ম অত্যন্ত সমার্ট এবং তারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তাদেরকে গন্ডমূর্খ ব্যাকুভ ভেবে রাজনীতি করার দিন এদেশে গত হয়ে গিয়েছে ।

এ প্রজন্মের আন্দোলন যুদ্ধাপরাধীদের আইনের সঠিক বিচারের আন্দোলন , এ আন্দোলন সমাজ থেকে সমস্ত অন্যায় – অনাচার , অবিচার সমূলে উৎপাটনের আন্দোলন । এটা কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয় , বরঞ্চ ক্ষমতায় যারা যাবে তাদেরকে সঠিক পথে বিচরণের আন্দোলন । কাজেই এ আন্দোলন খালেদা জিয়ার ভাললাগবে না ,এটাই স্বাভাবিক । খালেদা জিয়ার ভাল লাগবে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসে অন্যায়কে ন্যায় বলে চালিয়ে যেতে , উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলোকে সমাজের সুুন্দর মতবাদকে হটিয়ে দিয়ে তার জায়গায় স্থান করে দিতে , এ জাতিকে তালেবানী আকিদায় প্রতিষ্ঠা করতে , গণতন্ত্রের নামে ভূয়া নির্বাচন ও বিরোধী দলকে সমূলে উৎপাটিত করতে ।

বিএনপিতে এখন ও যথেষ্ঠ পরিমান মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে , ওনাদের কাছে আমাদের আবেদন হয় আপনারা বিএনপি ছাড়ুন , না হয় বিএনপিকে সঠিক রাজনীতি চর্চার রাজপথে সামিল করুন ; তা নাহলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে বিএনপি ইতিহাসের অতল তলে হারিয়ে যাবে ।

৩.

পরিেেশষে কতিপয় তথাকথিত আঁতেলদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই , আঁতলামীর আগে নিজের যোগ্যতা আছে কিনা নিজেকে প্রশ্ন করুন , তারপর আঁতলামী করলে তা দেখতে যেমন ভাল লাগে , ঠিক তেমনি জাতি ও সঠিক নির্দ্দেশনা পায় । নিজেকে আঁতলামির নামে হাস্যরসের পাত্র করে তুললে আপনাদের খারাপ না লাগলে ও আমাদের কাছে খুব খারাপ লাগে ।ফালতু রাজনৈতিক রং না মেরে কারোর মহৎ উদ্দেশ্যকে সুুন্দরভাবে দেখতে শিখুন , এতে সকলের কল্যাণ নিহিত । দয়া করে প্রজন্ম চত্বরের উদ্দেশ্যে এবং আদর্শ নিয়ে খালেদাগিরি করবেন না ।প্রজন্ম চত্বরের উদ্দেশ্যে এবং আদর্শ যদি অনেকের রাজনৈতিক এজেন্ডার সাথে মিলে যায় এতে দোষের কিছু নয় বরঞ্ছ এতে আদর্শ প্রতিষ্ঠা অনেক সহজ হয়ে যায় । এ আদর্শ ,উদ্দেশ্য খালেদা জিয়ার ভাল লাগতে না পারে কিন্তু আমাদের লাগে । প্রজন্ম চত্বরের আলো ঘরে ঘরে জঁ্বলুক ।

যে যেখানে থাকুন ভাল থাকুন , সুুস্থ্য থাকুন এই কামনায় ———-।

লেখক :-
আরশাদ হোসেন ভূঁইয়া ।
এডেলেইড , অস্ট্রেলিয়া ।
৬ই মার্চ ২০১৩ ।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment