আমাদের প্রিয় ক্যানবেরা এবং রাজাকার প্রসঙ্গ

আমাদের প্রিয় ক্যানবেরা এবং রাজাকার প্রসঙ্গ

যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে – তারা আওয়ামীলীগ। বিপক্ষে জামাত। কিছু পক্ষে কিছু বিপক্ষে হলে অবশ্যই বিএনপি! মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কেনা বেচাতেই চলছে বাংলাদেশের রাজনীতি, বহুদিন ধরে। শুধু মাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কেউ পথ চলতে পারে, আওয়ামীলীগ, বিএনপি বা অন্য কোন দলে যোগ না দিয়ে, তা যে কোন রাজনৈতিক পার্টি সাপোর্টারের কাছে – অসম্ভব। এই অসম্ভবটাই সম্ভব হয়েছে ২০১৩ সালে শাহবাগে এবং সম্ভব করেছে এ প্রজন্মেরই সোনা মায়ের, সোনার ছেলে মেয়েরা।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ক্যানবেরাতে শাহবাগের আন্দোলনের সাথে সহমত প্রকাশের দিন – ক্যানবেরাতে দাওয়াতের বন্যা বয়ে গেল। আমি এবং দু’একজন ছাড়া অন্য কাউকে পেলাম না, যাদের দাওয়াত নেই। যারা এলেন, তাদের অনেকেই দাওয়াত মাথায় নিয়ে এলেন, ঠিক অনুষ্ঠান শেষ হবার সাথে সাথেই দৌড়াতে হবে। কেউ কেউ এলেন “বাতাসে ভাসছে” এমন কিছু কথা নিয়ে। যেমন ধরুন, অবৈধ (কারন আমরা ফাঁসির দাবি করছি!) রাজনৈতিক সমাবেশ এটা – এখানে যোগ দিলে – অস্ট্রেলিয়াতে “সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স” পেতে বাধা আসবে এবং সরকারি বা বেসরকারি যে কোন চাকরীতেই সমস্যা হবে। যেটি সহি মিথ্যা প্রচারণা। যুদ্ধাপরাধী, মানবতা বিরোধীদের বিচার চাওয়া অবৈধ? হতে পারে, শুধু তাদের জন্যে, যারা যুদ্ধাপরাধী অথবা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে। রাতে এক ছোট ভাই ফোনে দু:খ প্রকাশ করল, না আসতে পেরে। জিজ্ঞেস করলাম, কোন সমস্যা? সাহায্য করতে পারি কিনা? উত্তরে বলল ভাইয়া, এখনো আমাদের কারোই পিআর হয়নি, “সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স” পেতে সমস্যা হতে পারে। জানতে চাইলাম কে বলেছে? তাদেরই পরিচিত ক্যানবেরার এক বড় ভাই! বললাম এসব মিথ্যা প্রচারণা। বাস্তবে এমন কিছুই নয়। অন্তত এই অস্ট্রেলিয়ার মত সভ্য দেশে তো নয়ই। রাজাকার, নতুন রাজাকার রা ভয় দেখাচ্ছে, ভয় পেলে চলবে না। পরের বার তোমাদেরকে পাব আসা করছি। বলল ঠিক আছে।

ধন্যবাদ সবাইকে যারা “তবে, কিন্তু, যদি, এবং” কে অতিক্রম করে শুধু মাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানবিক, আন্তরিক কারণেই আমাদের অনুষ্ঠানে এসেছেন, এসেছেন শাহবাগ তরুণদের সমর্থন জানাতে।

আমার প্রিয় এক ডাক্তার বড় ভাইয়ের সাথে কথা হল। প্রয়োজনীয় কথার এক পর্যায়ে প্রশ্ন করলাম “দাবী একটাই – রাজাকারের উপযুক্ত বিচার চাই” ক্যানবেরা থেকে আয়োজিত, ক্যানবেরার শাহবাগে আসলেন না কেন? উত্তরে বললেন, তিনি বাংলাদেশের রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান তবে, কয়েকটা কারণে তিনি আসেননি। যেমন? তিনি বললেন:

১ ক্যানবেরার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আওয়ামীলীগ

২ শাহবাগের বেশির ভাগ ব্লগার আওয়ামীলীগের

৩ তিনি ফাঁসি দাবিতে একমত নন কারণ অষ্ট্রিলিয়ার নাগরিক হিসাবে ফাঁসির দাবি অবৈধ তথা আইন সিদ্ধ নয়

৪ শাহবাগিদের বিচার না মানার মানসিকতার সাথে তিনি একমত নন। আইনকে তার নিজের পথে চলতে দেয়া উচিৎ

৫ মুক্তিযোদ্ধাদের ও বিচারের আন্দোলন হওয়া উচিৎ যারা গণহত্যা করেছিল

আমি বললাম এর বাইরে অন্য কোন কারণ আছে কি না। তিনি বললেন না। আমি বললাম আপনি কি এই কারণ গুলো নিজে খুঁজে পেয়েছেন? নাকি অন্য কেউ বলেছে। তিনি স্বীকার করলেন অন্যদের কাছ থেকে শোনা – নিজে খোজার সময় তিনি এখনও পাননি। উনার ধারনা অন্য কয়টা কু মতলবি আন্দোলনের মতই এই আন্দোলন।

এবার আমার জবাব দেয়ার পালা।

ক্যানবেরার এই অনুষ্ঠান আমরা যে কজন মিলে আয়োজন করেছি – তাদের কেউই রাজনীতির সাথে যুক্ত নই বা কখনও ছিলামও না। আমি আর সুমন গত ৮ থেকে ১০ বছর, ব্লগ করে আসছি এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষদের সাথে এক সাথে আন্দোলন করছি, রাজাকার, নয়া রাজাকারদের বিরুদ্ধে। মূলত ব্লগের মাধ্যমেই আমার সাথে সুমনের পরিচয়।

শাহবাগের যে কয়জন ব্লগারদের নেতৃত্ব দিচ্ছে – তাদের বেশি ভাগকেই আমরা অনেকদিন থেকে চিনি এবং এরা কখনই কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। গায়ক প্রিতম আহমেদ সহ বেশ কয়েকজন আছেন, যারা আমার/আমাদের অনেক দিনের চেনা, বন্ধু। প্রথম সারির যে ১৭ থেকে ২০ জন আছে, বিক্রি যাবার মত নয় কেউই। আর আমরা কিন্তু ফাঁসির কথা বলিনি ক্যানবেরা থেকে, বলেছি “দাবী একটাই – রাজাকারের উপযুক্ত বিচার চাই”।

বাংলাদেশের জন্যে ফাঁসি সর্বোচ্চ শাস্তি, যেমন করে ফাঁসি সর্বোচ্চ শাস্তি আমেরিকা, ইসরাইল, সৌদি আরব সহ অনেক উন্নত দেশে। অস্ট্রেলিয়া হলে ফাঁসির কথা আসত না। এখানে বেশির ভাগ বাঙ্গালীই দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে আছেন এবং বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি নিয়ে আন্দোলন করা – অবৈধ নয়। আমরা তো বলছি না, পেছন থেকে এসে চাপাতি দিয়ে কোন কাফেরের মাথা ফেলে দিতে। সাপোর্ট বা একমত হচ্ছি না এসব ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডের সাথে।

আমাদের আন্দোলন কিন্তু বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে নয়, প্রমাণিত গুরু অপরাধের লঘু সাজার জন্যে। যে খানে সরকার মহলের বিশেষ হাত প্রতীয়মান (হয়ত হয়েছে কোন রাজনৈতিক সমঝোতা), যা আমাদের ক্ষোভের মুল কারণ। আমরা চাই না – ৭১ এর চেতনাকে নিয়ে রাজনৈতিক দল গুলো নোংরা রাজনীতি করুক। আমরা চাই না কোন বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে রাজনীতির পার্টি হিসেবে থাকুক। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানে দেশ বিরোধী শক্তি – নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই, যে খানে সব রাজনৈতিক দল ৭১ এর চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রাজনীতি করবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আইন তার নিজের পথেই চলছে। Nuremberg Trials এ বিবাদীর আপিল করবারও সুযোগ ছিল না, আমাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিবাদীর আপিল করার সুযোগ আছে কিন্তু বাদীর নেই। এই অসম নীতির বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম, যা ইতি মধ্যেই সংশোধিত করা হয়েছে।

কোন মুক্তিযোদ্ধা গণহত্যার সাথে জড়িত, এটা আমার কাছে সম্পূর্ণই নতুন সংবাদ। আগে কখনো শুনিনি। ইদানীং রাজাকার এবং তাদের পক্ষের লোকেরা এ ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে বিভিন্ন ব্লগে। কোন সঠিক সূত্র ছাড়াই – বেশির ভাগই আন্দাজ করে। যেমন, ৯ মাসের যুদ্ধ, নিশ্চয় মেরেছে, শুনেছি ইত্যাদি ইত্যাদি।

রাজাকারদের বিচারের দাবি নিয়ে এসেছি, এটা পূরণ হোক আগে তার পর অন্যদের অবশ্যই ধরা যাবে। কোন খুনিই পার পাবে না এই বাংলায়। বাংলা পরীক্ষা দিতে এসে, ইংরেজি পরীক্ষা দেয়ার কোন মানে হয় না।

এবার নিজের কথায় ফিরে আসি। প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পর রাজনীতির সাথে যুক্ত হবার মত ফুসরত মিলেনি আমার, বিভিন্ন কারণে। এখন পর্যন্ত না। তবে পারিবারিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই বড় হওয়া, বেড়ে উঠা এবং সংগত কারণেই চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, চেতনায় মুজিব, যে ভাবে সব সময় থাকে চেতনায় বাংলাদেশ।

চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ। যে চেতনায় ১৯৭১ সালে সৃষ্টি হয়েছিল একটি দেশ। অতি প্রিয় একটি নিজস্ব ভূমি। বাংলাদেশ। বিনিময়ে হারাতে হয়েছিল ৩০ লক্ষ চির সবুজ তাজা প্রাণ, লাখ লাখ মা, বোনদের সম্ভ্রম, জন্ম নিয়েছিল হাজার হাজার যুদ্ধ শিশু। যে সব যুদ্ধ শিশু এখন Canada, US, UK, France, Belgium, Netherlands, Sweden এবং Australia সহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। তাঁদের অনেকেই আজও বাংলাদেশে আসেন, খোঁজেন হতভাগিনী জন্মদাত্রী মাকে। জানতে চায় কোথায় কেমন আছেন তিনি – অথবা আদৌ তিনি বেচে আছেন কিনা?

শাহবাগ ব্লগারদের একটি জনপ্রিয় প্রচারণা “শেখ মুজিবকে পছন্দ করা মানে আওয়ামীলীগকে পছন্দ করা না, জিয়াকে পছন্দ করা মানে বিএনপিকে পছন্দ করা না, ইসলামকে পছন্দ করা মানে, জামাতকে পছন্দ করা না। আমি শেখ মুজিবকে পছন্দ করি, জিয়াকে ভালবাসি আর ইসলাম? – সে তো আমার ধর্ম। বাংলা? – সেতো আমার ভাষা। আর বাংলাদেশ? – সেতো আমার মা। আসুন মাকে নিয়ে ভাবি। যারা মাকে অবজ্ঞা করে তাদের পরিহার করি।” ১৯৭১ থেকে ২০১৩, এই মনের গহিনে জমা রেখেছি বহু প্রতীক্ষার আশার আলো – একদিন ঠিকই আমরা পারব, পারব আমরা মা মাটিকে রাজাকারদের এ অপমানের হাত থেকে রক্ষা করতে। বয়স কম থাকায় ৭১ এ যুদ্ধে যেতে পারিনি, যৌবনে নিজ স্বার্থ রক্ষায় থাকলাম কাপুরুষের মত। এবার সময় এসেছে, এ প্রজন্মের মুক্তিবাহিনীকে সহযোগিতা করার, সুযোগটা তুলে নিলাম কাপুরুষতা ছেড়ে, তাই নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই এ লেখার প্রয়াস।

প্রিয় লেখক আনিসুল হক তার এক লেখাতে লিখেছেন: “১৯৫২ সালে বলা হয়েছিল, ভাষা-আন্দোলন করছে কমিউনিস্টরা, নাস্তিকেরা। একুশে ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা থেকে দলে দলে হিন্দুরা এসেছে, তারা ধুতি বদলে পায়জামা পরে এই আন্দোলন করেছে। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কিছুদিন পরে ঢাকায় এসে শেখ মুজিব বললেন, ভাষা আন্দোলন করেছে কলকাতা থেকে আসা হিন্দুরা? রফিক, শফি, বরকত, সালাম– এরা হিন্দু? হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে, তাদের মধ্যে হিন্দু কয়জন? ইতিহাস সাক্ষী, বাংলা-বিদ্বেষী শাসকগোষ্ঠীর সেই সাম্প্রদায়িক প্রচারণায় কাজ হয়নি। সারা বাংলায় রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ল। উপ্ত হলো স্বাধিকার আন্দোলনের বীজ, বাঙালি গর্জে উঠল: তুমি কে, আমি কে বাঙালি বাঙালি, তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বলা হলো, কোনো মুসলমান যদি যুক্তফ্রন্টকে ভোট দেয়, তাহলে তার বিবি তালাক হয়ে যাবে। বাঙলার মানুষ দলে দলে ভাসানী-শেরে বাংলা- সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিল আর ভাষা-আন্দোলনের বিরোধিতা কারী নুরুল আমিন সরকারের মুসলিম লীগকে চরমভাবে পরাজিত করল। আল্লাহর রহমতে কোনো মুসলমানের বিবি তাতে তালাক হয়ে যায়নি।

১৯৭১ সালে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধারা কাফের। তারা ইন্ডিয়ার দালাল। দুষ্কৃতকারী। কিন্তু রাজাকার-আলবদরদের এই অপপ্রচারে কাজ হয়নি। দেশের প্রায় সব মানুষ তখন হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধা। বাংলার সব মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। ওই রাজাকার-আলবদর আর তাদের রক্ষক পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী পরাজিত হয়েছিল। “

যা হোক আবার নিজের কথায় ফিরে আসি। রাজাকার কি? এরা কারা? আমার জানা মতে রাজাকার মানে হল সাহায্যকারী। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করেছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিয়ে, বাঙ্গালী, আদিবাসী নারীদের (বয়স ৮ থেকে ৮০, অপ্রাপ্ত, প্রাপ্ত নানান বয়সী, হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টান, বৌদ্ধ কেউ বাদ যায়নি)ধরে নিয়ে নিজেরা অথবা পাক হানাদের হাতে তুলে দিয়েছিল গনিমতের মাল হিসেবে। বর্তমান সময়ে রাজাকার শব্দ অর্থের সাথে আরও কিছু নতুন কুকীর্তি যোগ হয়েছে, যেমন এ যুগে “হিটলার” শব্দের মানের সাথে অনেক কিছু যোগ হয়েছে। আমরা এখন রাজাকার বলতে বুঝি – পাকিস্তান পন্থি (খাটি বাংলা “জয় বাংলা” না বলে, ধর্মের দোহাই দিয়ে ভিন দেশি শব্দ “জিন্দাবাদ”। যার আসলেই ধর্মের সাথে কোন যোগাযোগ নেই) দেশ বিরুধী, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরুধী, মৌলবাদী (ধর্ম নামের আড়ালে অধর্মের কাজ, সন্ত্রাস)। মোট কথা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ মানেই রাজাকারি। অস্ট্রেলিয়াতে Un-Australian কথাটি যে কারণে ব্যাবহার করা হয়, রাজাকার হল তার চেয়ে বড় এবং আরও গভীরতর সংস্করণ।

ইসলাম কি ভিন্ন মত সহ্য করবার মত ধর্ম নয়? আমাদের প্রিয় নবী কি তাঁর চাচা সহ ভিন্ন মতের মানুষদেরকে সহ্য করেন নি? তা হলে আজ কেন আমরা পারছি না? ভিন্ন মত হলেই মাথা ফেলে দিতে হবে?

আমরা যারা অস্ট্রেলিয়ায় আছি, তারা ৯৯% ভিন্ন মত, ভিন্ন ধর্মের লোকদের (প্রচুর নাস্তিকও আছে) সাথেই বসবাস করছি। কখনও কি ভয়ে আছি – ভিন্ন মত, ভিন্ন ধর্মের জন্যে, যে কোন মুহূর্তে মাথাটা কাটা যেতে পারে!

আমার প্রিয় সাংবাদিক ফজলুল বারী’র (যাকে বিচিন্তা থেকে চিনি) একটি সিডনি অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি: “সিডনির লাকেম্বার একটি বাংলা দোকানে বাজার করতে গিয়েছিলাম। দোকানি আমাকে ভালো চেনেন। তিনি কোন লাইনের মানুষ তাও বুঝতে পারি। আমাকে বললেন ঢাকায় রাজিব না কি নামের একজন সাংবাদিক মারা গেছেন, তিনি নাকি নাস্তিক ছিলেন? বললাম, উনি সাংবাদিক না, লেখক-প্রকৌশলী ছিলেন। আপনি কোথায় বিষয়টি জেনেছেন? বললেন একটি ইংরেজি পত্রিকায়। নাম কি পত্রিকাটার? তা বলতে পারেন না! জিজ্ঞেস করি আপনিতো বরাবর নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, আমারদেশ এসব পত্রিকা পড়েন জানতাম। তা কি এখন আর সেগুলো পড়েন না? জবাব দেন না। এরপর বলি একজন মানুষ খুন হয়েছেন। খুন করেছে কে, বিচার হবে কিনা এসব এড়িয়ে তিনি আস্তিক না নাস্তিক ছিলেন, এসব নিয়ে এত চিন্তিত যে! না তিনি খুন হননি? জবাব দেন না। কি জবাব দেবেন তিনি? এরপর বলি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, এ দেশের প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড একজন নাস্তিক, তিনি বিয়ে করেননি। বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে লিভ টুগেদার করেন। এসব কি জানেন? বললেন, জানি। জিজ্ঞেস করি, তাহলে কি আপনি এদেশে থাকেন না? না চলে যেতে চান? আবার কবি নীরব! জিজ্ঞেস করি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়েছেন? তখন পাকিস্তানপক্ষওয়ালারা কি এসবই লিখতোনা? সে দেশেরই একজন মুসলমান বাসিন্দা হিসাবে কি আপনি অস্ট্রেলিয়া এসেছেন না? ব্যাটা এতক্ষণে ঘামতে শুরু করেছে! এরপর বলি আমাদের দেশের সব ইলেকশনের আগে অমুকদল ক্ষমতায় আসলে দেশে ইসলাম বলে কিছু থাকবেনা, মসজিদে উলুধ্বনি হবে, দেশ ইন্ডিয়া হয়ে যাবে, এমন চিল্লাফাল্লা শুরু করেনা? তা গেলবারতো তেমন একটা দল ক্ষমতায় এসেছে। দেশে কি এখন ইসলাম আছে? না দেশটা ইন্ডিয়া হয়ে গেছে? নে দেশের সব মসজিদে উলুধ্বনি হয় শুধু? ব্যাটা এখন শুধু আমতা আমতা করে! বেকুবের মতো হাসে! এমন বেকুব সব কিন্তু এখন দেশে নাই! কিছু অস্ট্রেলিয়াও চলে এসেছে!”

শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে দুনিয়া ছেড়ে যেতে হয় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা মাথায় নিয়ে, আর নিজামী-মুজাহিদের বাড়ি হয় ‘দেশসেবার’ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে, প্রতিজনের পাঁচ কাঠা প্লট! তাও আবার দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে প্লট দিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রাজাকার’রা হয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির মন্ত্রী, এমনকি প্রধান মন্ত্রী। এ সব রুখে দেয়ার সময় এসেছে এবার।

আসুন, ধর্ম নামের আড়াল নিয়ে যারা অধর্মের কাজ করছে, তাদের রুখে দেই। রুখে দেই ৭১ কে নিয়ে ব্যবসা করার রাজনীতি। আসুন দেশ, ধর্ম, নিজ জাতি স্বত্বাকে ভালবাসি, সত্যের আলোয় আলোকিত হই। আসুন জয় বাংলা চেতনায় ধারণ করি, ধারণ করি ৭১। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে মা মাতৃভূমি দেশকে ভালবাসার তৌফিক দান করুন। জয় বাংলা।

References:

“Bangladeshi authorities claim that 3 million people were killed, while the Hamoodur Rahman Commission, an official Pakistan Government investigation, put the figure as low as 26,000 civilian casualties. The fact is that the number of dead in Bangladesh in 1971 was almost certainly well into seven figures. It was one of the worst genocides of the World War II era, outstripping Rwanda (800,000 killed) and probably surpassing even Indonesia (1 million to 1.5 million killed in 1965-66). – genocidebangladesh.org

“Rape in Bangladesh had hardly been restricted to beauty,” Brownmiller writes. “Girls of eight and grandmothers of seventy-five had been sexually assaulted … Pakistani soldiers had not only violated Bengali women on the spot; they abducted tens of hundreds and held them by force in their military barracks for nightly use.” Some women may have been raped as many as eighty times in a night (Brownmiller, p. 83). How many died from this atrocious treatment, and how many more women were murdered as part of the generalized campaign of destruction and slaughter, can only be guessed at.” – genocidebangladesh.org

“An appeal was issued by Mother Teresa urging women not to have abortions, and instead to contact the Missionaries of Charity, which offered to take care of the war babies. In December 1971, Mother Teresa and M, a social worker who does not want to be named, visited some of the camps for rape victims in Bangladesh. In an interview, M recalled that Mother Teresa did not find girls at the camps, but only their hair, petticoats and a few other items. Their hair had been cut off because the Pakistan Army soldiers feared that the girls would attempt to commit suicide by tying their hair to ceiling fans, as some had already done. M went back to Bangladesh at the request of Mother Teresa on 21 January 1972, where she arranged for the adoption of war babies, most of whom were adopted by families in Canada, with some were also sent to France and Sweden. – Bina D’Costa

Canadian initiative in adopting the war-babies Canada was one of the first countries in the world which had expressed an interest to adopt the war-babies of Bangladesh. Through personal efforts of Mother Teresa and her colleagues at Missionaries of Charity, and the government of Bangladesh’s Ministry of Labour and Social Welfare, two Canadian organisations got involved in adoptions. They were the Montreal-based Families for Children, a non-profit adoption agency for inter-country adoption, and the Toronto-based Kuan-Yin Foundation (pursuing relief of distressed children in the world), a non-profit adoption agency initiated by a group of enthusiastic Canadians. There were other countries such as the US, the UK, France, Belgium, the Netherlands, Sweden and Australia, to name a few. In addition, there were many organisations, such as, the US-based Holt Adoption Program, Inc. and Terre des Hommes.” – Internet.

“D’Costa’s conversation with Dr. Davis was recently published in a Bangladeshi publication, and is worth reading in its entirety. The stories of women being tied to trees and gang raped, breasts hacked off, dumped in mass graves, being held in Pakistani rape camps are all detailed.

When asked if the usual figures of the number of women raped by the Pakistani Army, 200-400,000, are accurate, Dr. Davis states that they are underestimated:

…Probably the numbers are very conservative compared with what they did. The descriptions of how they captured towns were very interesting. They’d keep the infantry back and put artillery ahead and they would shell the hospitals and schools. And that caused absolute chaos in the town. And then the infantry would go in and begin to segregate the women. Apart from little children, all those were sexually matured would be segregated..And then the women would be put in the compound under guard and made available to the troops…Some of the stories they told were appalling. Being raped again and again and again. A lot of them died in those [rape] camps. There was an air of disbelief about the whole thing. Nobody could credit that it really happened! But the evidence clearly showed that it did happen.

Dr. Davis talks about how Sheikh Mujibur Rahman labeled the rape survivors as “war heroines” to help them reintegrate into their communities, but the gesture largely did not work. After being assaulted and impregnated by Pakistani soldiers, the Bangladeshi women were completely ostracized by society. Many were killed by their husbands, committed suicide, or murdered their half-Pakistani babies themselves. Some women were so scared to go back home after being held captive in Pakistani rape camps, they begged their Pakistani captors to take them back to Pakistan with them.” – Anushay Hossain


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment