আমরা কি রাজাকার শব্দটাকে খুব হাল্কা আর খেলো করে ফেলছি?

আমরা কি রাজাকার শব্দটাকে খুব হাল্কা আর খেলো করে ফেলছি?

উইচ হান্টিংয়ের মত “রাজাকার” শব্দটা যত্রতত্র ঢালাও ভাবে ব্যাবহার হচ্ছে? ইমরানকে রাজাকার বানানো হচ্ছে, আবার প্রজন্ম মঞ্চ থেকে কাদের সিদ্দিকির মত মুক্তিযোদ্ধাকেও রাজাকার বলা হচ্ছে।

“রাজাকার” শব্দের সংজ্ঞা মুক্তিযুদ্ধই নির্ধারন করে দিয়েছে। যারা পাক আর্মির রাজাকার আলবদর আর আলসামস ইত্যাদি প্যারামিলিশিয়া বাহিনির সদস্য ছিলেন বা অন্যভাবে দালালি করে পাক আর্মিকে সহায়তা করেছেন তারাই শুধু রাজাকার। স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেয়া কোনো নাগরিকই অথবা স্বাধিনতাকালিন শিশুরা (১২ বছর পর্যন্ত) কেওই রাজাকার হতে পারেন না – অর্থাৎ ৫৪ বছরের বা তার নিচের বয়সের কাউকে রাজাকার রাজাকার বলাটা উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যাচার – যার বিরুদ্ধেই নাকি নতুন প্রজন্মের লড়াই।

প্রজন্ম মঞ্চ থেকে যদি কাদের সিদ্দিকিকে বা যে কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বলা যায়, তবে এই মিথ্যাচারের বাংলাদেশে দেশে ইমরানকে রাজাকার বানোনোতো কোন ব্যাপারই না।

কাদের সিদ্দিকি আর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখেই একাদিন এই দেশ স্বাধিন করেছিলেন, সেই সত্যতো অবিনশ্বর কোনোদিন মুছে যাবার নয়। আর সেই স্বাধিন দেশের মাটিতে জন্ম নিয়ে, সেখানে দাড়িয়েই নতুন প্রজন্ম কি করে ভুলে যআয় সেই সত্য। স্বাধিনতা পরবর্তি সময়ে কোনো মুক্তিযোদ্ধা চোর হয়ে গেলে, তাকে চোর বলতে পারেন, সুবিধাবাদি হয়ে গেলে সুবিধাবাদি বলতে পারেন, খুন করে থাকলে খুনি বলতে পারেন। কারন আর সব নাগরিকের মত মুক্তিযোদ্ধারাও আইনের আর সমালোচোনার উর্ধে নন। কিন্তু তাদের কাউকে রাজাকার বলার চরম ধৃষ্টতা পজন্ম মঞ্চ কি করে দেখায়?

আর এই প্রজন্মের মানুষের দাদা কেন, বাবা রাজাকার হলেও কি সে রাজাকার হয়ে যাবে? কোনো চোরের বা খুনির ছেলে কি অটোমেটিক চোর বা খুনি সাব্যস্ত্য হয়?

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাবসায়িদের এই মিথ্যাচার, উইচ হান্টিং আর মুক্তিযুদ্ধের নামে জমিজামা ও অন্যান্য ব্যাক্তিস্বার্থের শত্রুতা হাসিল করার অপচেষ্টা রুখতেই বংগবন্ধু সাধারন সুনির্দিষ্ট অপরাধহিন রাজাকারদের সাধারন ক্ষমা দিয়েছিলেন। শুধু বাংলাদেশেই নয়, প্রায় সব বিপ্লবোত্তর দেশেই সমাজের আত্মবিদ্ধংশি উইচ হান্টিংয়ের এই অপচক্র বন্ধ করতেই এধরনের সাধারন ক্ষমা দেওয়া হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত রাজাকার নেতাদের বিচার আমরা সবাই চাই, সেখানেই ফোকাস রাখা উচিত। ধর্ম ব্যাবসায়ি আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাবসায়ি দুইই নাস্তিক আর রাজাকারের উইচ হান্টিং আর হানা হানি বাধিয়ে তাদের ব্যাক্তি আর গোষ্ঠি স্বার্থ উদ্ধারে ভিষন তৎপর। আশা করি তাদের ফাদে পা দিয়ে, আগের প্রজন্মের মত নতুন প্রজন্মের আন্দোলন বিফলে যাবে না।

দয়া করে রাজাকার শব্দের অপব্যাবহার করে, আসল রাজাকার আর তাদের নেতাদের অপরাধ আর বাংলাদেশে এই শব্দের গুরুত্ব হালকা করে দেবেন না – অপরাধের উপযুক্ত অন্য শব্দ ব্যাবহার করুন।

মইনুল আহসান (মইন আহসান)
৮ ই মার্চ ২০১৩

2013/Rajakar_ki_227271023.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment